জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে স্থান পায়নি বীমাখাত
আবদুর রহমান আবির: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত ইশতেহারে স্থান পায়নি দেশের বীমাখাত। তরুণদের কর্মসংস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, শিল্প, ব্যাংক, শেয়ারবাজার, সামাজিক নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশসহ ৩৫টিরও বেশি বিষয়ে আলোচনা থাকলেও বাদ পড়েছে বীমাখাত। আর্থিক খাতের মধ্যে ব্যাংক, শেয়ার বাজার ও বাজেট নিয়ে পৃথকভাবে ৯টি পয়েন্টে নানাবিধ পরিকল্পনা থাকলেও বাদ পড়েছে বীমাখাত।
বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী কোন সরকার বা রাজনৈতিক দলেই গুরুত্ব পায়নি দেশের বীমাখাত। সম্ভাবনাময় এ খাতটি নিয়ে কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করতেও দেখা যায়নি। সরকার পরিবর্তন হলেও অবহেলিতই রয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই বীমাখাত।
অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতে গুরুত্ব পাচ্ছে বীমাখাত। এমনকি ক্ষমতার পালাবদলেও খাতটির প্রভাব দৃশ্যমান। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও অগ্রাধিকার পাচ্ছে এ খাত। দারিদ্র্য বিমোচন, কৃষি উন্নয়ন, পশুপালন, স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে বীমাখাত।
বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি ৩২টি লাইফ ও ৪৬টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানি রয়েছে। ২০১৭ সালে এই ৭৮টি কোম্পানি ১১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। এরমধ্যে লাইফ খাতে প্রিমিয়াম আয় ৮ হাজার ২১৫ কোটি টাকা এবং নন-লাইফে প্রিমিয়াম আয় ২ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা।
এ ছাড়াও ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ৩২টি লাইফ বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ৩১ হাজার ৫৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এসব কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৮২৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। বিভিন্ন খাতে কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ হাজার ১২৭ কোটি ৯ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তথ্য অনুসারে ৪৬টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ ১০ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বিনিয়োগের পরিমাণ ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি ৮ লাখ টাকা। এসব কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ৯৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে স্বাস্থ্যখাতে জিডিপি’র বর্তমান বরাদ্দ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ পর্যন্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতাল নির্মাণসহ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নানান ধরণের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে স্মার্ট ওয়ে হিসেবে পরিচিত স্বাস্থ্য বীমা স্থান পায়নি এই ইশতেহারে।
বিশৃঙ্খলা ও লুটপাটের কারণে ভেঙে পড়া ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা গ্রহণ ও জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রদানে কথা বলা হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে। ব্যাংকগুলো পরিচালনায় কেন্দ্রিয় ব্যাংকে সর্বময় ক্ষমতা প্রদানে অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীন ব্যাংকিং বিভাগ বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
শেয়ার বাজারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও প্রণোদনার মাধ্যমে শেয়ার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে শেয়ার বাজারকে সঠিক গতিপথে নিয়ে আসার কথাও বলা হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাজেট বরাদ্দ আগামী ৫ বছরে ধাপে ধাপে ৩ গুণ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, বয়স্ক ভাতা, দুঃস্থ মহিলা ভাতা বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তাদের ভাতার পরিমাণ এবং আওতা বাড়ানো হবে। শ্রমিক ও ক্ষেতমজুরহ গ্রাম ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সুলভ মূল্যে রেশনিং ব্যবস্থা, হতদরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে বীমাখাত নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ না করা হলেও গার্মেন্টস সহ অন্যান্য সকল শিল্প শ্রমিক কল্যাণে জাতীয় স্বাস্থ্যবীমার আওতায় সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও এবং বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্যসেবা দিতেও স্বাস্থ্য বীমা চালুর কথা বলা হয়েছে।
ইশতেহারের তথ্য অনুসারে, স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে শ্রমিকগণ মাসে ২৫০ টাকার প্রিমিয়ামের মাধ্যমে সকল চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। প্রিমিয়ামের ১০০ টাকা দেবেন শ্রমিক নিজে এবং ১৫০ টাকা দেবেন মালিকপক্ষ। ওষুধের অর্ধেক মূল্য শ্রমিককে বহন করতে হবে। রোগ নির্ণয়, অপারেশন ও হাসপাতালে ভর্তি বাবদ শ্রমিকের অন্য কোন খরচ লাগবে না।
অন্যদিকে সকল বয়োবৃদ্ধ মাসিক ২০০ টাকায় জাতীয় স্বাস্থ্যবীমার আওতায় শুধুমাত্র ওষুধ ছাড়া অন্য সব চিকিৎসা ও পরিসেবা বিনা খরচে পাবেন। তারা ওষুধ পাবেন অর্ধেক দামে।