কাল হাজিরা

২৩ কোটি টাকা দাবি আদায়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের ১৮ পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা দাবি পরিশোধ না করে গ্রাহকের প্রায় ২৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় আগামীকাল হাজির না হলে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ার‌ম্যান, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ১৮ পরিচালকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করবেন আদালত।

এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর সিএমএম কোর্ট আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। একই সাথে আসামিদের আগামীকাল বুধবার আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দেন। বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করার শর্তে আদালত এ জামিন মঞ্জুর করেন।

জবা টেক্সটাইল মিলস এর সিএফও মোঃ মোশারফ হোসেন জানান, গত ১৫ অক্টোবর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ১৫ দিনের মধ্যে বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করতে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সকে নির্দেশ দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করেনি বীমা কোম্পানিটি।

তবে, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ আদালতের এ মামলার বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, বীমা দাবি আদায়ে জবা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার বিজ্ঞ মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪২০ ও ৪১৮ ধারায় মামলা দায়ের করেন।মামলায় বীমাকারী ও পুনর্বীমাকারীর ২১ কর্মকর্তা ও পরিচালককে আসামি করা হয়।

আসামিরা হলেন, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মোশারফ হোসেন, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (আন্ডাররাইটিং এন্ড রি-ইন্স্যুরেন্স) মোঃ শামসুল হুদা, চেয়ারম্যান সৈয়দ বদরুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান সাদমান সাকিব অপূর্ব, পরিচালক মাহবুব মোরশেদ তালুকদার, পরিচালক এস এম সরোয়ার আলম, পরিচালক মনোজ কুমার রায়, পরিচালক স্থপতি মোবাশ্বার হোসেন, পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান, পরিচালক ইসরাত জাহান, পরিচালক আরেফিন আহামদ, পরিচালক সাজ্জাদ আরেফিন আলম, মোঃ আবদুল মোক্তাদির সাজ্জাদ আরেফিন আলম, পরিচালক হাসিনা বেগম, পরিচালক তাহাসিন আমান, পরিচালক মোঃ আবদুল খালেক, স্বতন্ত্র পরিচালক আর এ হাওলাদার, পরিচালক যোবেদা বেগম, পরিচালক মোঃ আফতাব উদ্দিন শাহ, পরিচালক মোঃ সায়েদুল ইসলাম এবং সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম।

মামলা সূত্রে জানা যায়, জবা টেক্সটাইল মিলস কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডে একটি অগ্নি বীমা পলিসি করে। চুক্তিপত্র নং- জিআইএল/এইচও/এফপি-০০১৭২/১১/২০১৩ এবং চুক্তিটির পলিসি নং- জিআইএল/এইচও/এফসি-০০১৭৩/১১/২০১৩।

বীমার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ১৯ নভেম্বর, ২০১৩ থেকে ১৯ নভেম্বর, ২০১৪ পর্যন্ত। আর ৯০ কোটি টাকা বীমা অংকের বিপরীতে বাৎসরিক প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় ২৭ লাখ টাকা। বীমার চুক্তি অনুসারে প্রিমিয়ামও পরিশোধ করে জবা টেক্সটাইল মিলস কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বৈদ্যতিক গোলযোগের কারণে জবা টেক্সটাইলের ওই কারখানায় আগুন ধরে যায়। সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার ব্রিগেড বাহিনী এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে পরদিন ১৭ ফেব্রয়ারি, ২০১৪ আবারও কারখানাটিতে আগুন ধরে যায়। এতে কারখানাটিতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে এবং পরবর্তীতে লিখিতভাবে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষকে জানায় জবা টেক্সটাইল মিলস কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তাদের নিযুক্ত সার্ভেয়ারগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

একই দিন অর্থাৎ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপনে ৫ জন সার্ভেয়ার নিয়োগ করে।

গত ৪ মে ২০১৪ সালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়-ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ ৩২ কোটি ৭৪ লাখ ১৭ হাজার ৩১৪ টাকা নির্ণয় করে প্রতিবেদন দাখিল করে।

পরে ১১ মে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের নিকট ৩৪ কোটি ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৫ টাকা বীমা দাবি উত্থাপন করে জবা টেক্সটাইল মিলস।

এ প্রেক্ষিতে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ ১৯ জুন এক চিঠিতে জানায়, ফায়ার ব্রিগেড কর্তৃক নির্ণিত ৩২ কোটি ৭৪ লাখ ৬৭ হাজার ৩১৪ টাকা ক্ষতির বিষয়টি নিযুক্ত ৫ জন সার্ভেয়ার পলিসির টার্ম এন্ড কন্ডিশন মোতাবেক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ তারিখে ৯ পাতার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে বীমা কোম্পানি নিযুক্ত সার্ভেয়ররা। প্রতিবেদনে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয় ২২ কোটি ৮৩ লাখ ২২ হাজার ২৯৮ টাকা।   সার্ভেয়ার প্রতিবেদন পাওয়ার ৩ বছর পরেও দাবি পরিশোধ না করায় বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ এবং আদালতের স্মরণাপন্ন হয় জবা টেক্সটাইল মিলস কর্তৃপক্ষ।