অনলাইন সেবা দিচ্ছে ৬ বীমা কোম্পানি

আবদুর রহমান আবির: গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে অনলাইন মাধ্যমের ওপর জোর দিচ্ছে দেশিয় বীমা কোম্পানিগুলো। সহজ ও দ্রুত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে মোবাইল ও ওয়েবসাইট ভিত্তিক অ্যাপ চালু করেছে বেশ কিছু বীমা কোম্পানি। অনলাইনে বীমা আবেদন, পলিসি তথ্য, দাবি উত্থাপনসহ নানা সুবিধা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। প্রাথমিকভাবে ৬টি লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানি অনলাইন ভিত্তিক এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

গার্ডিয়ান লাইফের- ইজিলাইফ:

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স চ্যানেলের যাত্রা শুরু করে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। ইজিলাইফ নামের এই অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে টার্ম লাইফ ইন্স্যুরেন্স পলিসি কিনতে পারছেন গ্রাহকরা। মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে গিয়ে মাত্র ১৫ মিনিটে কোন রকম মেডিকেল টেস্ট ছাড়াই একজন গ্রাহক হতে পারেন ইজিলাইফ পলিসিহোল্ডার। এর মাধ্যমে বার্ষিক সর্বনিম্ন এক হাজার ৮৩৪ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকার কাভারেজ পাওয়া যাবে।

এই অনলাইন টার্ম লাইফ ইন্স্যুরেন্স মৃত্যু অথবা পূর্ণাঙ্গ অক্ষমতায় সম্পূর্ণ কাভারেজ প্রদান করে। তাছাড়া ইজিলাইফের প্রিমিয়াম রিফান্ড অপশনও আছে যা মেয়াদপূর্তিতে প্রদানকৃত সম্পূর্ণ প্রিমিয়াম ফেরত প্রদান করে। তবে কোন লাভ বা বোনাস দেয় না। টিআইএন নম্বর আছে এমন ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সের যেকোন সুস্থ্য ব্যক্তি ইজিলাইফ ইন্স্যুরেন্স পলিসিটি কিনতে পারেন। ইজিলাইফ ব্যবহার করে পলিসি সম্পর্কিত যেকোন তথ্য জানা ও সেবা গ্রহণ করা যায়।

এ ছাড়াও মাইগার্ডিয়ান নামে একটি মোবাইল অ্যাপস রয়েছে বীমা কোম্পানিটির। এটি একটি সেলফ কেয়ার অ্যাপ। এর মাধ্যমে সব পলিসিহোল্ডার গার্ডিয়ান লাইফের সকল বীমা সম্পর্কিত তথ্য জানা এবং পলিসি সার্ভিস অত্যন্ত সহজ ভাবে সম্পন্ন করতে পারেন। তবে এই মাধ্যম ব্যবহার করে বীমা পলিসি কেনার সুযোগ রাখা হয়নি।

নিটল ইন্স্যুরেন্সের- ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স:

বীমা সেবাকে আধুনিক ও সহজলভ্য করতে অনলাইন বীমা সেবা চালু করে নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। প্রাথমিক অবস্থায় মটর বীমা দিয়ে তারা এই ডিজিটাল বীমা সেবা শুরু করে। নিটল ইন্স্যুরেন্সের এই অনলাইন বীমাকরণ পদ্ধতিতে এখন ঘরে বসেই অনায়াসেই গ্রাহক করে নিতে পারেন তার গাড়ীর কিংবা মটরসাইকেলের বীমা।

সেবাটি পেতে নিটল ইন্স্যুরেন্স এর ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন মটর ইন্স্যুরেন্স এ ক্লিক করে, গাড়ির প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েই গ্রাহক তার গাড়ি বা মটরসাইকেলের বীমা করতে পারেন। আর বীমার প্রিমিয়ামের টাকা সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে তথা বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, ইউপে, আইপে, সিটি-টাচসহ যেকোন ব্যাংকের ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রদান করা যায়।

অনলাইনে পেমেন্ট সম্পন্ন করার সাথে সাথে গ্রাহকের ই-মেইলে পৌঁছে যায় একটি ই-ইন্স্যুরেন্স কপি ও অনলাইনে টাকা জমা দেয়ার মানি রিসিটের ই-কপি। পরবর্তীতে গ্রাহকের কাছে বীমার মূল কপি কুরিয়ার এর মাধ্যমে পৌঁছে দেয় নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

গ্রীন ডেল্টার- ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স:

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ‘ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স’ সেবার উদ্বোধন করে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। প্রথম দফায় মোটর ইন্স্যুরেন্স, হেলথ ইন্স্যুরেন্স এবং ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে এ সেবা চালু করা হয়। ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স চালু হওয়ায় গ্রাহকদের কোম্পানির অফিসে গিয়ে পলিসি করতে হয় না। এমনকি বীমা কোম্পানির এজেন্ট কিংবা কর্মকর্তাদেরও গ্রাহকের বাসায় যেতে হয় না।

এজন্য গ্রাহককে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে কোম্পানিটির ওয়েসবাইটে গিয়ে ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স নামের অংশে ক্লিক করতে হয়। সেখানে ৩টি অপশন থেকে গ্রাহকের পছন্দমতো আবেদন ফরমটি পূর্ণ করে নির্দিষ্ট পলিসি গ্রহণ করতে পারেন। যেকোনো ব্যাংকের ভিসা, ক্রেডিট ও মাস্টার কার্ড, বিকাশ, আইপেসহ যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ পলিসির প্রিমিয়াম জমা দেয়া যায়।

ফরম পূরণের পর পলিসির টাকা পরিশোধ করলে অনলাইনে নিশ্চয়তার কাগজপত্র পাঠানো হয় গ্রাহকের কাছে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোম্পানির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে গ্রাহকের কাছে বীমা দলিল পৌঁছে দেয়া হয়। তবে আইপে’র মাধ্যমে পলিসির টাকা জমা দিলে আইপে ব্যবহারকারী গ্রাহকদের ১৫ শতাংশ ক্যাশ ব্যাক সুবিধা প্রদান করে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

মেটলাইফের- প্রজাপতি:

২০১৭ সালের এপ্রিলে বীমা আবেদন করার ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করে আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (মেটলাইফ) । ‘প্রজাপতি’ নামের এই ট্যাবলেট অ্যাপ সহজেই ব্যবহার উপযোগী। এর মাধ্যমে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট (এফএ) এবং গ্রাহক সম্মিলিতভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বীমা আবেদন জমা দিতে পারেন।

অ্যাপটির সহজবোধ্য স্ক্রিন ডিজাইন নির্দেশনা পড়তে, প্রিমিয়াম হিসাব করতে এবং গ্রাহকের আর্থিক ও ব্যক্তিগত চাহিদা যাচাই করে তার জন্য সঠিক পলিসি বেছে নিতে সাহায্য করে। এরপর বীমা গ্রাহকের পছন্দ করা ওই পলিসি ‘প্রজাপতি’র মাধ্যমে আন্ডাররাইটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়। প্রিমিয়াম পরিশোধের ক্ষেত্রেও অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারের সুবিধা রেখেছে কোম্পানিটি।

প্রাথমিকভাবে ৫৫ জন ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট প্রজাপতি অ্যাপটি ব্যবহার করে। এরপর ধাপে ধাপে এফএ’দের প্রশিক্ষণ প্রদান করে অ্যাপটি ব্যবহার করতে দেয়া হয়। বর্তমানে মেটলাইফের ২ হাজার ৬শ’রও বেশি এফএ অ্যাপটি ব্যবহার করছেন। আর প্রতিষ্ঠানটির ইস্যু করা মোট পলিসির ৩৫ শতাংশের আবেদনই আসছে এ মাধ্যমে।

সোনালী লাইফের- অ্যাপ্লাই অনলাইন:

২০১৬ সালের শেষের দিকে অনলাইন বীমা সেবা চালু করে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। মাইক্রোসফট কোম্পানি এই অনলাইন বীমা সেবায় কো-পার্টনার। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাপ্লাই অনলাইনে ক্লিক করে বীমা আবেদন করতে পারেন যেকোন ব্যক্তি। তথ্য প্রদানের পর পলিসিটি আন্ডাররাইটিংয়ে চলে যায়। প্রিমিয়াম পরিশোধের পর গ্রাহকের কাছে বীমা দালিল পৌঁছে দেয়া হয়।

জেনিথ ইসলামী লাইফের অনলাইন বীমা সেবা:

গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে অনলাইনে বীমা সেবা চালু করেছে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। প্রিমিয়াম ক্যালকুলেটর, বীমা পরিকল্প, ব্যবসার তথ্য এবং পলিসি তথ্যের সুবিধা নিয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এ মোবাইল অ্যাপ চালু করে। প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে যেকোন বীমা গ্রাহক এবং বীমা কর্মী এ অনলাইন বীমা সেবা গ্রহণ করতে পারেন।এ ছাড়াও কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রিমিয়াম ক্যালকুলেটর, বীমা পরিকল্প এবং পলিসি তথ্য জানা যাবে।