পদ্মা লাইফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: এস আলম গ্রুপ কিনে নেয়ার পরও গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোধে অনিশ্চয়তা ও গ্রাহক হয়রানি বন্ধে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে পাঠানো এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে আইডিআরএ’র একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যাসহ ৭ দিনের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে তা কর্তৃপক্ষকে জানাতে চিঠি দেয়া হয়েছে। অন্যথায় গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় বীমা আইন ২০১০ অনুসারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। গত সপ্তাহের শেষ দিকে এ চিঠি দেয় আইডিআরএ।
উল্লেখ্য, ব্যবসায় লোকসান ও গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পদ্মা ইসলামী লাইফ বিক্রি করে দেন পরিচালকরা। কোম্পানির সকল দায়সহ ১২ পরিচালক এবং ৬ শেয়ারহোল্ডারের হাতে থাকা ১ কোটি ৭৪ লাখ ১০ হাজার ৯০০ শেয়ার কিনে নেয় এস আলম গ্রুপ।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপ পদ্মা ইসলামী লাইফ কিনে নেয়ার পর বীমা গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে আরো অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নতুন পরিচালনা পর্ষদ পুনরায় কবে কার্যক্রম চালু করবে এবং প্রকৃত গ্রাহকদের বীমা দাবির টাকা কবে ফেরত দিবে তারও কোন ঠিক নেই। এদিকে সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়লেও নতুন গ্রাহক সংগ্রহ ও কিস্তির টাকা আদায় অব্যাহত রেখেছে মাঠকর্মীরা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পদ্মা ইসলামী লাইফের সিইও ড. চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিন, ডিএমডি মিজানুর রহমান, পটুয়াখালী জোনাল অফিসের প্রধান মাওলানা নাসির উদ্দিন, আমতলী শাখার ইনচার্জ মাওলানা আবদুল খালেক ছাড়াও কোম্পানির স্থানীয় ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রাহকের বীমা পলিসির অর্থ আত্মসাৎ ও গ্রাহক হয়রানির সাথে জড়িত থাকার তথ্য অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, বরগুনা জেলার ৬টি শাখা কার্যালয়ের মাধ্যমে সহস্রাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এসব গ্রাহকের বেশিরভাগই সহজ-সরল গরীব, অসহায় ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। ভবিষ্যতে এককালীন কিছু টাকা পাওয়ার আশায় খেয়ে না খেয়ে বীমার কিস্তি পরিশোধ করেছেন এসব মানুষ।
অধিক মুনাফার আশায় বীমা করলেও এখন মেয়াদপূর্তির টাকা ফেরত পেতে পড়তে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগে। এমনকি কোম্পানির পক্ষ থেকে নির্বাহী রশিদ দেয়ার পরও বছরের পর বছর মিলছে না দাবিকৃত বীমার টাকা। প্রায় প্রতিদিনই টাকার আশায় আমতলী শাখা অফিসে হাজির হয়ে ফিরে যাচ্ছেন গ্রাহক ও কর্মীরা। বীমা করে এখন তারা কোম্পানির কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
এ ছাড়াও পটুয়াখালী জোনাল অফিসের প্রধান মাওলানা নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বীমার চেক পেতে আমতলী অফিসের কোন স্টাফ বা মাঠকর্মী তাকে ফোন করলে তিনি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা হেড কোয়ার্টারের কার্যক্রমে জড়িত রয়েছেন তাই টাকা ফেরত পাওয়া অতোটা সহজ না’। এ কথা শুনে গ্রাহকরা নীরবে কেঁদে হতাশায় দিন পার করছেন।
গ্রাহকের বীমা দাবির অর্থ ফেরতের বিষয়ে স্থানীয় বীমা কর্মীরা এখন কার্যত নিরুপায় বলেও মন্তব্য করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এরইমধ্যে নতুন করে বীমা গ্রাহক সংগ্রহ না করলে অন্যন্য গ্রাহকদের মেয়াদপূর্তির বীমা অর্থ ফেরত দেয়া হবে না। এক রকম বাধ্য হয়েই নতুন গ্রাহক সংগ্রহ ও কিস্তির টাকা উত্তোলনের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে মাঠ কর্মীদের।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত করা হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ৫টি সুপারিশ করা হয়েছে । এগুলো হলো- গরবী-অসহায় ও মধ্যবিত্ত ভুক্তভোগী পরিবার যাতে আর হয়রানির শিকার না হন এবং তাদের মেয়াদপূর্ণ বীমা দাবির অর্থ ফেরত পেতে পারেন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।
সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাগণ যারা বীমা পলিসির অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের সাথে জড়িত তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনাসহ তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান।
নতুন করে গ্রাহক সংগ্রহ এবং কিস্তির টাকা উত্তোলনের কাজ বন্ধ করার নির্দেশনা প্রদান।
গ্রাহকের ডিপিএস চেক, এসবি চেক, মৃত্যুদাবির চেক ফেরতের ব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশনা প্রদান।
বন্ধবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ রেহানার নাম ভাঙ্গানোর ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী ও অনিয়মের সাথে যুক্ত মাওলানা নাসির উদ্দিন এর বিরুদ্ধে কঠোর আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান।
এ বিষয়ে পদ্মা ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান প্রফেসর এনআরএম বোরহান উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা আইডিআরএ থেকে এ বিষয়ে চিঠি পেয়েছি। অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য আমরা দ্রুত গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করব। কোম্পানিতে নানা সমস্যা রয়েছে, আমরা চেষ্টা করছি এসব সমস্যার সমাধান করতে। আলাপকালে তিনি জানান, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধে ৭০ কোটি টাকা দিয়েছেন।