পদ ছাড়তে হচ্ছে বীমাখাতের একই পরিবারের শতাধিক পরিচালককে
অনুপ সর্বজ্ঞ: ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক হিসেবে আছেন মঞ্জুরুর রহমান। কোম্পানিটির পরিচালক হিসেবে আরও আছেন তার স্ত্রী সুরাইয়া রহমান, ছেলে জিয়াদ রহমান ও মেয়ে সাইকা রহমান। ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন দীন মোহাম্মদ। তার ছেলে মোহাম্মদ শোয়েব কোম্পানিটির চেয়ারম্যান। জামাতা মাজহারুল হকও আছেন কোম্পানিটির পরিচালক পদে। প্রগতি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক আবদুল আওয়াল মিন্টু। তার ছেলে তাবিথ মোহাম্মদ আওয়ালও আছেন কোম্পানিটির পরিচালক পদে। প্রগতি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের একই পরিবারের এই দুই সদস্য পরিচালক হিসেবে আছেন তাদেরই মালিকানাধীন প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সেও। বীমাখাতের এ ধরনের শতাধিক পরিচালকদের মধ্যে ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার ধারণকারিদের পদ ছাড়তে হচ্ছে চলাতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
জানা যায়, কোন ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যরা এককভাবে বা যৌথভাবে কোন বীমা কোম্পানির ১০ ভাগের অতিরিক্ত শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না। এমন বিধান রেখে চূড়ান্ত হয় বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালা ২০১৬। যা ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয় গেজেট আকারে। পাশাপাশি তিন বছরের মধ্যে পদ ছাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয় ১০ শতাংশের অধিক শেয়ারধারণকারী একই পরিবারের সদস্যদের। যার সময়সীমা শেষ হচ্ছে এ বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর।
বীমা আইন ২০১০ এ পরিবারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘পরিবার’ অর্থ স্বামী বা স্ত্রী, বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে, ভাই ও বোন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল সবাই অন্তর্ভূক্ত হবেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিধিমালাটি পরিপালন করা হলে পারিবারিক আধিপত্য কমবে খাতটিতে। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা আসবে বীমা কোম্পানির কার্যক্রমেও।
এ প্রসঙ্গে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্বাহী পরিচালক খলিল আহমেদ বলেন, নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হলে আমরা কোম্পানিগুলোর অবস্থা দেখবো। এবং এরপরেও যদি কেউ পদ ধরে রাখে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স ছাড়াও এশিয়া ইন্স্যুরেন্সে একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন খালেদা বেগম এবং তার দুই সন্তান-ফারজানা আফরোজ ও মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার। এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সে একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন কাশমিরি কামাল, কাশফি কামাল ও নাফিসা কামাল।
জানা গেছে, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের রুবিনা হামিদ, ফৌজিয়া মালেক, শাবানা মালেক ও কাজী আক্তার হামিদ একই পরিবারের সদস্য।
এ প্রসঙ্গে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান রুবিনা হামিদ বলেন, আইন অনুযায়ীই আমাদের কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। এখানে আইনের কোন লঙ্ঘন হয়নি।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক মোস্তফা কামাল। তার দুই মেয়ে তাহমিনা বিনতে মোস্তফা ও তানজিন বিনতে মোস্তফাও কোম্পানিটির পরিচালক। কোম্পানিটির পরিচালক পদে আরও রয়েছেন মোস্তফা কামালের ছেলে তানভীর মোস্তফা ও তার স্ত্রী বিউটি আক্তার।
মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন আহমেদ বলেন, কোম্পানি আইন অনুযায়ী চলছে কিনা এটাই বড় কথা। একই পরিবারের সদস্যদের দিয়ে কোম্পানি পরিচালিত হলে সমস্যার কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।
বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, এই বিধিমালা কার্যকর হবার অব্যবহিত পূর্বে যদি কোন ব্যক্তি নির্ধারিত শেয়ারের অধিক ধারণ করে থাকেন তবে এই বিধিমালা কার্যকর হবার তিন বছরের মধ্যে অতিরিক্তি শেয়ার এমন কোন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করবেন যিনি তাদের পরিবারের সদস্য নন। অথবা এমন কোন কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করবেন যেখানে তার পরিবারের কোন শেয়ার নেই।