আইডিআরএ’র নির্দেশ লঙ্ঘন

গ্রাহকের টাকা দিচ্ছে না সানফ্লাওয়ার লাইফ, মার খাচ্ছেন মাঠকর্মীরা

আবদুর রহমান আবির: ফেনীর মফিজুর রহমান সানফ্লাওয়ার লাইফের আল আরাফা বীমা প্রকল্পের গ্রাহক। এক বছর আগে তার বীমা পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বীমা দাবির জন্য আবেদন করেন কোম্পানিটিতে। তবে বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি বীমা দাবির অর্থ পাননি। একাধিকবার কোম্পানিতে যোগাযোগ করেও কার্যকর কোন ফল পাননি তিনি। এ অবস্থায় বীমা দাবি পেতে আইডিআরএ’তে অভিযোগ করেন মফিজুর রহমান।

শুধু মফিজুর রহমানই নন, এরকম দু’শতাধিক গ্রাহকের অভিযোগ রয়েছে সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে। বিষয়টি আমলে নিয়েছে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। প্রতিষ্ঠানটির দু’শতাধিক বীমা গ্রাহকের টাকা পরিশোধের জন্য নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু এরপরও বীমা দাবি পরিশোধ করেনি সানফ্লাওয়ার লাইফ। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা কেন পরিপালন করা হয়নি তা জানতে চেয়ে সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে আইডিআরএ।

ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানে জান গেছে, বীমার টাকা না পেয়ে মাঠকর্মীদের ওপর ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।  প্রায়ই গ্রাহকদের মারধরের শিকার হচ্ছেন কোম্পানিটির বীমাকর্মীরা। ফেনীর বীমা গ্রাহক বিবি আয়েশা জানান, এক বছর আগে পাশবই ও মূল রশিদ কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। কিন্তু টাকা দেয়নি বীমা কোম্পানি। কয়েক’দিন আগে ৩ হাজার টাকা দিয়েছে সানফ্লাওয়ার লাইফ। বাকী টাকা কবে দিবে তা জানেন না বিবি আয়েশা।

সানফ্লাওয়ার লাইফের ফরিদপুর সদর উপজেলা ব্যবস্থাপক ইদ্রিস বিশ্বাস ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, আমি দীর্ঘ দিন কোম্পানিটিতে সুনামের সাথে ব্যবসা করেছি। বহু গ্রাহক তৈরি করেছি। মানুষ আমার কথায় বিশ্বাস করে সানফ্লাওয়ার লাইফে বীমা করেছে। মেয়াদপূর্তির পর এখন আর গ্রাহকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও কাজ হয়নি।

এদিকে বীমা গ্রাহকরা টাকার জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছে। ক্ষুব্ধ এসব গ্রাহক আমাকে মারধর পর্যন্ত করেছে। তাদের হামলায় আমার একটি কান হারিয়েছি। মানুষ কাজ করে জীবন-জীবিকার জন্য, একটু ভালো থাকার জন্য। কিন্তু সানফ্লাওয়ার লাইফে কাজ করে এখন আমার পরিবার নিয়ে পালানোর উপক্রম। রাস্তায় বের হতে পারি না, গ্রাহকরা টাকার জন্য ঘিরে ধরে। আমার পরিবারের লোকজনও এর শিকার হচ্ছে।

ইদ্রিস বিশ্বাস বলেন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র কাছে আমি অভিযোগ করেছি। বিষয়টি আমলে নিয়ে গত নভেম্বরে শুনানি করে আইডিআরএ। শুনানিতে ৩০ দিনের সময় বেধে দিয়ে টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে ৪ মাসের বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত টাকা ফেরত দেয়নি সানফ্লাওয়ার লাইফ।

রংপুরে সানফ্লাওয়ার লাইফের মাঠকর্মী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার ৪০ জনের বেশি গ্রাহকের পলিসি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ কোম্পানিতে আবেদনের পর দীর্ঘদিন চলে গেলো কিন্তু বীমার টাকা পাচ্ছে না গ্রাহকরা। হেড অফিসে ১৫ বারের বেশি গেছি কিন্তু তারা চেক দেয়নি। তারা বলে যে, ‘আমাদের ঝামেলা করেন কেন?’

এদিকে গ্রাহকরা তো এসব দেখে না। তারা টাকা দিয়েছে, এখন টাকা ফেরত চায়। কোম্পানির কাছে আমার গ্রাহকরা ৪ লাখের বেশি টাকা পাবে। মাঝে মধ্যে দু’একটা চেক দিলেও তার টাকা মেলে না। ব্যাংক থেকে বারবার চেক ফেরত দেয়, বলে- টাকা নেই। হেড অফিসে ফোন করলে বলে, কয়েক দিন পরে চেক জমা দেন। এ অবস্থায় কি করবো বুঝতে পারছি না।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কিছুই করেনি। গত জানুয়ারিতে অভিযোগ করেছি। এরপর গত মার্চে খোঁজ নিতে আইডিআরএ গেছিলাম। কিন্তু তারা বলে যে, আপনি এখন এসেছেন কেন। শুনানিতে আপনাকে ডাকা হবে, তখন অবশ্যই আসবেন। ফাইলের কাজ চলছে বলে আমাকে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে সানফ্লাওয়ার লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সামছুল আলম ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, আইডিআরএ থেকে যেসব অভিযোগের তথ্য এসেছে তাদের প্রায় সব দাবিই পরিশোধ করা হয়েছে। তবে কিছু দাবির কাগজপত্র আমাদের হাতে আসেনি, সেগুলোর ফাইল হাতে পেলে সপ্তাহ খানিকের মধ্যে পরিশোধ করবো। এ মাসে আমরা প্রায় ৮ কোটি টাকা দাবি পরিশোধ করতে যাচ্ছি। এর মাধ্য দিয়ে ঝুলে থাক প্রায় সব দাবি পরিশোধ হয়ে যাবে।

ফরিদপুরের বীমাকর্মী ইদ্রিস বিশ্বাসের মেয়াদোত্তর ৪৬টি বীমা দাবির বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, আইডিআরএ থেকে প্রাপ্ত তার প্রায় সবগুলো অভিযোগের সমাধান করা হয়েছে। বীমা দাবির অর্থ পে-অর্ডারের মাধ্যে পাঠানো হয়েছে। ৭টি দাবি বাকী রয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে এগুলোও পেয়ে যাবে বলে জানান সানফ্লাওয়ার লাইফের মূখ্য নির্বাহী সামছুল আলম।