বীমা খাতে চূড়ান্ত হয়নি গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রবিধানমালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে অনুমোদন পায় নতুন বীমা আইন। ২০১১ সালে গঠন হয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়েও খাতটিতে চূড়ান্ত হয়নি গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রবিধানমালা। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবিহিতার বাইরেই থেকে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। বাড়ছে আর্থিক অনিয়মের ঘটনা।

এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ বলেন, খসড়া বিধিমালগুলো অর্থমন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় ঘুরে এসে চূড়ান্ত হতে একটু সময় লেগে যায়। আর আমরা এখনো লোকবল সংকটে ভুগছি। ফলে বেশ কিছু প্রবিধানমালা এখনো তৈরি হয়নি। তবে কাজ চলছে। আশা করছি শিগগিরই প্রবিধানমালাগুলো চূড়ান্ত করতে পারবো।

নেই বিনিয়োগ বিধিমালা: ২০১৩ সালের শেষ দিকে শেয়ারবাজারে বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ বিষয়ে সময়োপযোগী একটি বিধি প্রণয়নের কাজ শুরু করে আইডিআরএ। স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই সময় একটি বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রবিধানমালাও তৈরি করা হয়। বর্তমানে যা অর্থমন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্রবিধানটি চূড়ান্ত হলে সাধারণ ও জীবন বীমা কোম্পানিগুলো তাদের বিনিয়োগযোগ্য অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজ, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ইস্যু করা বন্ড, ঋণপত্রসহ অন্যান্য সিকিউরিটিজ, অগ্রাধিকার বা সাধারণ শেয়ার, মিউচুয়াল ও ইউনিট ফান্ড, স্থাবর সম্পত্তি, সাবসিডিয়ারি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের পাশাপাশি তফসিলি ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখতে পারবে।

ইসলামী বীমার জন্য পৃথক নীতিমালা নেই: বীমা আইনে একই সঙ্গে ইসলামী ও মূলধারার বীমা ব্যবসা করার নিয়ম নেই। তবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারণে অধিকাংশ বীমা কোম্পানি একই সঙ্গে ইসলামী ও মূলধারার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

হয়নি সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালা: বীমা কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা নিরুপণের অন্যতম মাপকাঠি হলো সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালা। ২০১১ সালে আইডিআরএ গঠন হওয়ার পরই এ সংক্রান্ত প্রবিধানমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে নয় বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও সলভেন্সি মার্জিনের খসড়া প্রবিধান তৈরি করতে পারেনি আইডিআরএ। এজন্য একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ এবং বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনে সভা সেমিনার করা হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।

নীতিমালা ছাড়াই চলছে বিদেশী বীমা কোম্পানি: প্রবিধান তৈরীর পরই বিদেশী কোম্পানি গঠনের অনুমোদন দেবে আইডিআরএ। ২০১১ সালে আইডিআরএ গঠনের পর এমন কথাই বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোন প্রবিধানমালা তৈরি হয়নি। এরই মধ্যে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ভারতীয় বীমা কোম্পানি এলআইসির বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত এলআইসি বাংলাদেশ লিমিটেডকে। এছাড়া এদেশে দীর্ঘ সময় ধরে শাখা অফিস খুলে ব্যবসা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বীমা কোম্পানি মেটলাইফ।

নেই পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা: ব্যাংকিং খাতে পরিচালক নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা নূন্যতম যোগ্যতার ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে পরিচালক নিয়োগের অনুমোদন দেয়। তবে বীমা খাতে পরিচালক নিয়োগের কোন নীতিমালা না থাকায় অশিক্ষিত, অযোগ্য ও অদক্ষ অনেক পরিচালকের অধীনেই চলছে এ খাতের অনেক কোম্পানির কার্যক্রম। এছাড়া শুধুমাত্র পরিচালকদের অভ্যন্তরীণ নানা দ্বন্দ্বের কারণে বেশ কিছু কোম্পানিতে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা।

হয়নি জীবন বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় সংক্রান্ত প্রবিধান: এখনো প্রণয়ন হয়নি জীবন বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় সংক্রান্ত প্রবিধানমালা। এ অবস্থায় ২০১৯ সালে এসেও ১৯৫৮ সালের বিধি অনুযায়ী চলতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে।