নন-লাইফ বীমাখাতে দুর্নীতি বন্ধে যুগান্তকারি পদক্ষেপ

একক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালুর নির্দেশ: আয় বাড়বে ৪ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: একটিমাত্র ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা হলে নন-লাইফ বীমাখাতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার প্রিমিয়াম আয় বাড়বে। অন্যদিকে একটি একাউন্টের মাধ্যমে ব্যয় করা হলে কমিশন খাতে অবৈধ ব্যয় কমবে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও অতিরিক্ত ব্যয়ের নামে  কোম্পানির মালিক ও কর্মচারিদের আর্থিক সুবিধা নেয়াও বন্ধ হবে।ফলে নন-লাইফ বীমাখাতে দুর্নীতি ৮০ শতাংশই কমে যাবে। খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য পাওয়া যায়।

জানা গেছে, একক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশনা দিয়ে গত ৩০ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কিছু প্রস্তাবনা শীর্ষক একটি মতামত প্রকাশ করে। ওই মতামতে প্রথম প্রস্তাবটিই ছিল প্রতিটি ব্যাংকে প্রিমিয়াম কালেকশনের জন্য শুধু ১টি এসটিডি একাউন্ট থাকবে। প্রস্তাবনার সবগুলো প্রস্তাবই গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে গত ৩০ এপ্রিলে প্রজ্ঞাপণে অন্তর্ভুক্ত করে। 

ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নন-লাইফ বীমাখাতে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় খাত কমিশন। ১০০ টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই কমিশন দেয় কোনো কোনো কোম্পানি। তবে এর কোন হিসাব নেই। অথচ আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো হয় আইন মেনেই ১৫ শতাংশ কমিশন দেয়া হয়েছে। অবৈধভাবে দেয়া এই কমিশনের হিসাব মেলাতে কোম্পানিগুলো তাদের সংগ্রহ করা প্রিমিয়াম প্রদর্শন করে না। কোন কোন বীমা কোম্পানি তাদের কোনো একটি ব্রাঞ্চে ১ কোটি টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে হিসাব দেখায় ৫০ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় হয়েছে।

অর্থাৎ কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ পলিসি করে, কাগজপত্রে তার অর্ধেকেরও কম দেখানো হয়। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পলিসির তথ্য গোপন রেখে তৈরী করা হয় আর্থিক প্রতিবেদন। এক্ষেত্রে কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। এসব হিসাবের মাধ্যমেই পরিশোধ করা হয় অতিরিক্ত কমিশনসহ কোম্পানির নানা ধরনের অবৈধ ব্যয়ের অর্থ। বীমাখাতের এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধের উদ্দেশ্যেই একক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালুর নির্দেশনা দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইডিআারএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, আইন অনুযায়ী নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিতে পারে। তবে অনেক কোম্পানিই অবৈধভাবে ৭০ শতাংশেরও বেশি কমিশন দিয়ে ব্যবসা আনছে। আমাদের নতুন প্রজ্ঞাপনটি কার্যকর হলে এই কমিশন বাণিজ্য বন্ধ হবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে অবৈধ ব্যয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আদায়কৃত প্রিমিয়াম জমা করতে যেকোন তফসিলি ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট রাখতে পারবে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো। কোনভাবেই একাধিক ব্যাংক হিসাব খোলা যাবে না। প্রিমিয়াম জমার ক্ষেত্রে যদি একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে তাহলে যেকোন একটি রেখে বাকিগুলো ১৩ মে’র মধ্যে বন্ধ করে দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ বলেন, নতুন এ প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয় বাড়বে। পাশাপাশি কোম্পানি মনিটরিংও সহজ এবং জোরদার হবে। 

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণের জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য আয় জমাকরণের জন্য অপর একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রাখা যাবে। এছাড়া দাবি পরিশোধের জন্য একটি ও ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের জন্য ১টি ব্যাংক হিসাব রাখা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রিমিয়াম জমাকরণ হিসাব থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ উক্ত হিসাব দু’টিতে ট্রান্সফার করে নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই দাবির টাকা নগদে পরিশোধ করা যাবে না।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শাখা কার্যালয়ের খরচ নির্বাহের ক্ষেত্রে প্রতিটি শাখায় একটি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রাখা যাবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রিমিয়াম হিসাব থেকে ক্রসড চেক বা ফান্ড ট্রান্সফার ছাড়া অন্য কোন অর্থ উক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা যাবে না।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সব ধরনের লেনদেন ক্রসড চেকের মাধ্যমে করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের বিশেষ প্রয়োজনে পাঁচ হাজার  টাকা পর্যন্ত নগদ উত্তলন করা যেতে পারে। বিনিয়োগ সংক্রান্ত এফডিআর ব্যতিত প্রয়োজনীয় অন্য যেকোন বিষয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পূর্বে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে । এছাড়াও যেকোন পলিসিতে ১০ হাজার টাকার উপর বীমা স্ট্যাম্প প্রদেয় হলে অবশ্যই পে অর্ডার বা ক্রসড চেক মারফত পরিশোধ পূর্বক পৃথক চালানের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে।