ড. সোহরাব না থাকলে কি হবে বীমাখাতের?

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা কোম্পানির ঝুঁকি নিরূপণ, আর্থিক ভিত্তি, সম্পদ ও দায় মূল্যায়নের কাজটি শুধু ডিগ্রিধারী অ্যাকচুয়ারিই করতে পারেন। মূলত, বীমা ব্যবসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকেন অ্যাকচুয়ারিরা। লাইফ-নন লাইফ মিলিয়ে দেশে বর্তমানে বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৭৮টি। অথচ কোম্পানিগুলোর ঝুঁকি-সম্পদ-দায় নিরূপণের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত অ্যাকচুয়ারি আছেন মাত্র একজন। তার নাম ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন। ৭৫ বছর বয়সী এই অ্যাসোসিয়েট অ্যাকচুয়ারির জীবনাবসান হলে খাতটির কি হবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্র্তপক্ষের (আইডিআএ) সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, দেশে আরও অ্যাকচুয়ারি আছেন। তারা কাজ করুক। এটা একটা স্বাধীন পেশা। তাদের কাজ করতে বাধা নেই। আর নতুন অ্যাকচুয়ারি তৈরির উদ্যোগ কোম্পানিগুলোকেই নিতে হবে।

উল্লেখ্য, কোম্পানিগুলোকে অ্যাকচুয়ারি তৈরির উদ্যোগ নিতে বলা হলেও, এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানি, সরকার বা নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কেউই এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

জানা গেছে, অ্যাসোসিয়েট সোহরাব উদ্দীন ছাড়াও দেশে বর্তমানে দু’জন পূর্ণাঙ্গ অ্যাকচুয়ারি আছেন। তাদের একজন এম শেফাক আহমেদ, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক চেয়ারম্যান। আরেকজন হলেন প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর হালিম। এরমধ্যে বীমা কোম্পানিগুলোর ভ্যালুয়েশনের জন্য শুধু সোহরাব উদ্দিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ থেকে অনুমোদন নিয়েছেন।

এদিকে আইডিআরএ গঠিত হওয়ার পর বিদেশি অ্যাকচুয়ারি নিয়োগে কিছু শর্তারোপ করায় বাংলাদেশে কাজ করা ছেড়ে দিয়েছেন আরেক প্রবাসী অ্যাকচুয়ারি আফসার উদ্দিন আহমেদ। বিদেশে থাকলেও আগে তিনি বাংলাদেশি বীমা কোম্পানিগুলোকে ভ্যালুয়েশন সেবা দিচ্ছিলেন। তবে ২০১১ সালে বিদেশি অ্যাকচুয়ারি নিয়োগের ওপর বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেয় আইডিআরএ। আর এরপর থেকেই বিদেশি কিংবা অনাবাসী কোনো অ্যাকচুয়ারি বাংলাদেশে সেবা দেয়ার জন্য অনুমোদন চাননি। ফলে বিদেশ থেকে অ্যাকচুয়ারিয়াল সেবা নেয়ার বিকল্প উৎসও কার্যত বন্ধ রয়েছে কোম্পানিগুলোর জন্য।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল মোহাম্মদ আবু নাসের বলেন, ২০১১ সালের শর্তগুলো যদি উঠিয়ে নেয়া হয় তা হলে ভবিষ্যতে সমস্যা হবেনা। আর তা না হলে সমস্যা তৈরি হবে। যাই হোক, এটা আইডিআরএ বুঝবে।

প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জালালুল আজিম বলেন, সোহরাব সাহেবের বয়স হয়েছে। তাই তিনি না থাকলে খাতটির কি হবে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার এখন থেকেই ভাবা উচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বীমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, এখন বীমা খাতের প্রতিটি কোম্পানির অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশন করছেন সোহরাব উদ্দিন। অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশনে কোম্পানির বিভিন্ন গোপনীয় দিক জড়িত থাকে। তাই গুরুত্বপূর্ণ এ কাজ শুধু একজন ব্যক্তিকে দিয়ে করানোয় কারসাজির আশঙ্কা থাকে কিনা, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভেবে দেখা দরকার।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অ্যাকচুয়ারি সংকটে বীমা খাতে ভালো পণ্য আসছে না। অ্যাকচুয়ারিদের সেবা কোম্পানির সামগ্রিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক বিষয়গুলো শেখার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা, যা পেশাদার অ্যাকচুয়ারিয়াল সেবার জন্য যথেষ্ট নয়। অ্যাকচুয়ারি সংকটের এটিও একটি বড় কারণ। এদিকে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি এ বিষয়ে পাঠাদান করে গেলেও এখন পর্যন্ত সেখানকার কোনো শিক্ষার্থী এখনও অ্যাকচুয়ারি হতে পারেননি।

জানা গেছে, বীমাপণ্য ডিজাইনের সময় অ্যাকচুয়ারির ফি ধার্য করা হয় ঘণ্টা হিসেবে। প্রতি ঘণ্টায় ফি ধরা হয় ৩০০ থেকে ৫০০ ডলার।