৩ বছরে ৩৯ % ব্যবসা হারিয়েছে প্রগ্রেসিভ লাইফ
নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সের। মূখ্য নির্বাহী হিসেবে দীপেন কুমার সাহাকে নিয়োগ দেয়ার পর গত ৩ বছরে এ কোম্পানির নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমে গেছে ৩৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে তামাদি পলিসি বেড়েছে ১৫৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তবে ব্যবসা কমলেও ব্যয় কমেনি কোম্পানিটির। গত তিন বছরে অতিরিক্ত ব্যয় বেড়ে দাড়িয়েছে ৫২ দশমিক ১৪ শতাংশ। যদিও দীপেনকে প্রগ্রেসিভ লাইফে নিয়োগ দেয়ার পূর্বেই তার ব্যবসায়িক পারফমেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
দীপেনের নিয়োগের বিষয়ে আইডিআরএর একাধিক সদস্য মতামতে জানান, স্বদেশ লাইফে থাকাকালীন দীপেন কুমারের ব্যবসায়িক পারফমেন্স অত্যন্ত দূর্বল ছিল। তাই প্রগ্রেসিভ লাইফে তার নিয়োগ যৌক্তিক হবে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন মতামতের পরেও কোম্পানিটিতে নিয়োগের অনুমোদন পান দীপেন কুমার সাহা রয়। কথিত আছে, এক প্রভাবশালী ব্যবসায়িক নেতার সুপারিশে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালে নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ২২ কোটি ২০ লাখ টাকা। যা ২০১৮ এসে দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৩ বছরের ব্যবধানে প্রিমিয়াম সংগ্রহ ৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা কমে গেছে।
২০১৬ সালে কোম্পানিটির নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ১৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা ২০১৫ সালের চেয়ে ৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা ১৭ দশমিক ০৭ শতাংশ কম। এ ছাড়াও ২০১৭ সালে কোম্পানিটির নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ১৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
২০১৫ সালে প্রগ্রেসিভ লাইফের মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ৮৯ কোটি ২ লাখ টাকা। যা ২০১৮ তে এসে দাঁড়ায় ৬৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৩ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ২০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বা ২২ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমে গেছে।
২০১৬ সালে কোম্পানিটির সর্বমোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ৮০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা ২০১৫ সালের চেয়ে ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ কম। এ ছাড়াও ২০১৭ সালে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ৭৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
অন্যদিকে বিগত ৩ বছরে প্রগ্রেসিভ লাইফের নতুন পলিসি ইস্যু কমেছে ৬১ দশমিক ৩০ শতাংশ। ২০১৫ সালে কোম্পানিটি থেকে নতুন পলিসি ইস্যু হয় ৩০ হাজার ১০১টি। যা ২০১৬ সালে কমে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৮১৮টিতে। ২০১৭ সালে নতুন পলিসির সংখ্যা দাঁড়ায় ২২ হাজার ৫২১টিতে। আর ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৪৮টিতে।
এদিকে এ কোম্পানির তামাদি পলিসি বেড়ে বেড়েছে উল্লেখযাগ্য হারে। ২০১৫ সালে প্রগ্রেসিভ লাইফে তামাদি পলিসি ছিল ৬ হাজার ৫৬৫টি। এই সংখ্যা ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫৬০টি। ২০১৭ সালে তামাদি পলিসির সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৫৩৮টি। আর ২০১৮ সালে কোম্পানিটিতে তামাদি পলিসির সংখ্যা ১৬ হাজার ৯৩০টি।
এদিকে, ধারাবাহিকভাবে ব্যবসা হারালেও কমছে না প্রগ্রেসিভ লাইফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়। বিগত ৩ বছরে কোম্পানিটির অতিরিক্ত ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০১৫ সালে কোম্পানিটির অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি টাকা, যা অনুমোদিত সীমার চেয়ে ৪৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।
২০১৬ সালে প্রগ্রেসিভ লাইফ অনুমোদিত সীমার চেয়ে ১২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করে, যা অনুমোদিত সীমার চেয়ে ৫১ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি ব্যবস্থাপনাখাতে ব্যয় করে ৩৮ কোটি ১ লাখ টাকা। বছরটিতে ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ২৫ কোট ১৬ লাখ টাকা।
২০১৭ সালে কোম্পানিটি ব্যবস্থাপনা ব্যয় করে ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তবে ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ২৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটি ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকা বা ৪২ দশমিক ৯৩ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় করে। আর ২০১৮ সালে অতিরিক্ত ব্যয় করে ১০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। যা অনুমোদিত সীমার চেয়ে ৫২ দশমিক ১৪ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে প্রগ্রেসিভ লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকতা দীপেন কুমার সাহা রয় বলেন, এতোদিন আমরা এজিএম করতে পারছিলাম না, বোনাস , লভ্যাংশ কিছুই দিতে পারছিলামনা। এতে আমাদের ব্যবসা অনেকটাই কমে গেছে। কিন্ত সম্প্রিত এজিম করার অনুমোদন পেয়েছি। আশা করছি, শিগিগরই ঘুরে দাঁড়াবে প্রগ্রেসিভ লাইফ।