বৈঠক ও খসড়া নীতিমালায় সীমাবদ্ধ কার্যক্রম

৯ বছরেও হয়নি বীমা কোম্পানির সাংগঠনিক কাঠামো

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠনের ৯ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। দীর্ঘ এ সময়েও সব বীমা কোম্পানির জন্য একই ধরনের সাংগঠনিক কাঠামো, বেতন স্কেল ও অভিন্ন সার্ভিস রুল তৈরী করতে পারেনি নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। যদিও এ নিয়ে দফায় দফায় গঠন করা হয়েছে কমিটি। তবে কমিটির কার্যক্রম শুধুমাত্র বৈঠক ও খসড়া নীতিমালা তৈরীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত কোন নির্দেশনা কবে নাগাদ আসবে তা বলতে পারছেন না কেউই।

২০১১ সালে আইডিআরএ গঠনের আগে দীর্ঘদিন বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে থাকলেও এ খাতের সব প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সুষম সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়নের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বীমা অধিদফতর। পরবর্তীতে আইডিআরএ গঠনের পর যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বীমাখাতের তদারকি ও উন্নয়ন গতিশীল করার প্রচেষ্টা হাতে নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে সংস্থাটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্স্যুরেন্স সুপারভাইজার্সের (আইএআইএস) সদস্য হয়।

আইএআইএস প্রণীত ইন্স্যুরেন্স কোর প্রিন্সিপালে (আইসিপি) প্রদত্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে সব বীমা প্রতিষ্ঠানের জন্য একই রকম সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। কমিটি একই রকম সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়নের জন্য সব কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও মডেল তৈরি এবং উপস্থাপনের নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এ পর্যন্তই। নানা কারণে এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সবশেষ গত বছরের আগস্টে সকল বীমা কোম্পানির জন্য একই ধরনের সাংগঠনিক কাঠামো, বেতন স্কেল এবং অভিন্ন সার্ভিস রুল বাস্তবায়নে আবারো স্বক্রিয় হয় আইডিআরএ। নতুন করে গঠন করা হয় এ সংক্রান্ত লাইফ ও নন লাইফ কমিটি। কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। লাইফ কমিটির সভায় বীমা কোম্পানিগুলোর বর্তমান সার্ভিস রুল, ও অর্গানোগ্রাম কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল এবং তাদের মতামত পাঠানোর নির্দেশনা ছাড়াও আরো ৫টি গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- এই কমিটি দেশের প্রচলিত সার্ভিস রুলস ও অর্গানোগ্রামের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশ এবং অন্যান্য দেশের সার্ভিস রুলস ও অর্গানোগ্রাম পর্যালোচনা করবে। একটি খসড়া সার্ভিস রুলস ও অর্গানোগ্রাম প্রস্তুত করে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের এবং বীমা কোম্পানির মতামত সংগ্রহ করা হবে। এরপর জাতীয় বীমানীতি অনুসারে এটি বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষ থেকে একটি গাইডলাইন জারি করা হবে। জারিকৃত গাইডলাইন সকল বীমা প্রতিষ্ঠান পরিপালনে বাধ্য থাকবে।

এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ বলেন, অভিন্ন অর্গানোগ্রামের খসড়া গাইড লাইন তৈরী হয়ে গেছে। আমরা শিগগিরই মতামতের কোম্পানিগুলোতে এটি পাঠাবো। তবে খসড়া গাইডলাইনটি কবে নাগাদ চূড়ান্ত হবে এর কোন সুস্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি তিনি।

জানা যায়, বর্তমানে দুর্বল ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) দ্বারা চলছে দেশের বীমাখাত। একটি কোম্পানির ট্রেইনি এক্সিকিউটিভ অন্যটিতে অভিহিত হচ্ছেন জুনিয়র অফিসার হিসেবে। বেতনও পাচ্ছেন নামমাত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাতটির বিদ্যমান বেতন-কাঠামোকে আকর্ষণীয় মনে করছেন না নতুন প্রজন্মের উচ্চশিক্ষিতরা। এ কারণে খাতটির প্রতি খুব বেশি আগ্রহীও হচ্ছেন না তারা। কর্মক্ষেত্র হিসেবে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেই বেছে নিচ্ছেন এ প্রজন্মের উচ্চশিক্ষিতরা। ফলে জনবল সংকট নিয়েই চলতে হচ্ছে দেশের বীমা শিল্পকে।

গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা নাসির এ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখনো দেশের অধিকাংশ বীমা কোম্পানির সর্বনিম্ন বেতন ৮-১২ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। অথচ ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা প্রায় ২০ হাজার টাকা। এ অবস্থায় নতুন প্রজন্মের উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েরা এ খাতে আসবেন কেন? দুর্বল ও বিক্ষিপ্ত সাংগঠনিক কাঠামো এর বড় কারণ। নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ ছাড়া এ খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়।’

জানা গেছে, লাইফ বা নন লাই সব কোম্পানিতেই স্নাতক পাস একজন ডেস্ক কর্মকর্তার বেতন ৮ থেকে ১২ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সরকারি বা বেসরকারি কোন দপ্তরেই স্নাতক বা সমমান পাস যোগ্যতার কোন কর্মকর্তা এমনকি কর্মচারীর বেতনও এত কম নেই। এই নিম্নমানের বেতনে মানবেতর জীবনযাপন করছে বীমা কোম্পানির ডেস্ক কর্মকর্তারা। বছরের পর বছর একই বেতনে চাকরি করে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে তাদের মাঝে।

একাধিক ডেস্ক কর্মকর্তা বলেন, সরকার অনুমোদিত অভিন্ন কোন কাঠামো ও নীতিমালা না থাকার সুযোগ নিচ্ছে বেশ কিছু কোম্পানি। অযৌক্তিকভাবে ছাটাই বা বদলি সবই চলছে বড় কর্তাদের খেয়াল খুশি মতো। কোন গাইড লাইন না থাকায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে তাদেরকে।