অঙ্গহানী হলেও পাবেন পূর্ণ বীমা দাবি

প্রবাসী বীমা চূড়ান্ত করতে ২৩ জুন বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা পলিসির আওতাধীন কোনো গ্রাহক মৃত্যুবরণ করলে সেক্ষেত্রে বীমা অংকের শতভাগ পরিশোধ করা হবে। এছাড়া অঙ্গহানির ক্ষেত্রেও শতভাগ দাবি পরিশোধের বিধান রাখা হয়েছে প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশীদের বীমা সংক্রান্ত প্রবিধানমালার খসড়ায়।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় খসড়া প্রবিধানমালাটি তৈরি করেছে। যা চূড়ান্ত করতে আগামী ২৩ জুন বৈঠক ডেকেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বৈঠকে উপস্থিত থাকবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

সংশিষ্টরা বলছেন, ভাগ্য ফেরানোর আশায় প্রবাসে যাওয়া শ্রমিকের অনেকেই ফেরেন লাশ হয়ে। এতে বিপদে পড়ে যায় তার পরিবার। এসব বিবেচনা থেকেই বিদেশগামী ও প্রবাসী সব শ্রমিককে শতভাগ বীমার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাভূক্ত। তাদের বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। তবে মন্ত্রণালয় আমাদেরকে সঙ্গে নিয়েই নীতিমালাটি তৈরী করেছে। রোববারের বৈঠকে আইডিআরএর প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। আমরা আশা করছি প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত হলে তা প্রবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা ঘোচাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

জানা যায়, খসড়া প্রবিধানমালা অনুযায়ী, চাকরি হারালে, লে-অফ বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও বীমার টাকা পাবেন প্রবাশী শ্রমিকরা। এছাড়া বিদেশ যাত্রার সময় থেকে পরবর্তী এক মাসের জন্য কর্মীরা স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা পাবেন।

খসড়া নীতিমালায় প্রবাসী কর্মীদের বীমার আওতায় আনতে বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য বেশকিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করা রয়েছে। প্রবাসীদের বীমাসেবা দিতে আগ্রহী বীমা কোম্পানিকে অবশ্যই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণ করতে হবে।

এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানের পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের ক্রেডিট রেটিং ভালো, লাইফ ফান্ড ও মোট সম্পদের পরিমাণ সন্তোষজনক, যথেষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ ও নগদ তহবিল আছে, গত তিন বছর যেসব প্রতিষ্ঠান সন্তোষজনক লভ্যাংশ ও পলিসি বোনাস দিয়েছে, আর্থিকভাবে সক্ষম সেসব বীমা প্রতিষ্ঠানই প্রবাসী কর্মীদের বীমাসেবা দিতে পারবে।

জানা যায়, খসড়া প্রবিধানে বীমার সর্বোচ্চ অংক ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আইডিআরএ’র অধিভুক্ত কমিটি সিআরসি প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ করবে। এককালীন সর্বনিম্ন বীমা অংকের ওপর শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ হারে প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সরকারের ভ্যাট ও কর যোগ করতে হবে।

খসড়া নীতিমালায় প্রবাসী কর্মীদের বীমার মেয়াদ প্রচলিত আইনে এক বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্ত সময় বাড়ানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নবায়ন প্রিমিয়াম প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া বীমা গ্রাহকের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ থেকে ৫৮ বছর পর্যন্ত।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় বীমা দাবি না পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু কারণ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রবাসী কর্মী নিজের ইচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিলে অথবা শারীরিক অক্ষমতা ও স্বাস্থ্যগত কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি পেলে বীমা দাবি পাবেন না। এছাড়া নিজের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে চাকরি হারালে বা প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও তিনি প্রাপ্য বীমা দাবি থেকে বঞ্চিত হবেন।

উল্লেখ্য, বিদেশগামী ও প্রবাসী শ্রমিকদের শতভাগ বীমার আওতায় আনতে খসড়া নীতিমালা তৈরির জন্য গত বছরের জানুয়ারিতে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এ উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন আইডিআরএ’র এক সদস্য। উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের (বিআইএফ) মনোনীত প্রতিনিধিরা। এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দু’জন উপসচিবও এ উপ-কমিটিতে রয়েছেন।

এ বিষয়ে বিআইএ’র চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও আইডিআরএ যৌথভাবে আমাদের মতামত নিয়ে নীতিমালাটি করেছে, যা শিগগিরই চূড়ান্ত হবে বলে জেনেছি। মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।