বীমা দিবসে বিশেষ সম্মাননা পাচ্ছেন যারা
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বীমাখাতে অবদান রাখায় বিশেষ সম্মাননা পাচ্ছেন ৫ বীমা ব্যক্তিত্ব। জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষ্যে আগামীকাল রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় বীমা দিবসের উদ্বোধন করবেন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশেষ সম্মাননার জন্য নির্ধারিত বীমা ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন- সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি) সাবেক চেয়ারম্যান খোদা বক্স ও গোলাম মাওলা, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির (বিজিআইসি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম এ সামাদ, জীবন বীমা করপোরেশনের (জেবিসি) সাবেক চেয়ারম্যান এম শামসুল আলম এবং ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাফাত আহমেদ চৌধুরী।
সাধারণ বীমা করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান খোদা বক্স ১৯১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বর্তমান শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যাতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৯ সালে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স পাস করে ভর্তি হন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। ১৯৩১ সালে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বিভাগে পাস করে ১৯৩৩ সনে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানে দু-বছর অধ্যয়ন করেন। ১৯৩৫ সনে তিনি ওরিয়েন্টাল গভর্নমেন্ট সিকিউরিটি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেন বীমা এজেন্ট হিসেবে। দক্ষতার কারণে ১৯৪৬ সালেই পদোন্নতি পেয়ে তিনি ইন্সপেক্টর হন।
১৯৫২ সালে ঢাকায় ফিরে ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির (ইফু) পূর্ব পাকিস্তান শাখায় লাইফ ম্যানেজার পদে যোগদান করেন। তার নেতৃত্বে সর্বপ্রথম পেশাদার বীমা এজেন্সি প্রশিক্ষণ চালু হয় ১৯৬৬ সনে। এরপর তিনি কোম্পানিটি থেকে পদত্যাগ করে বাঙালি শিল্পপতিদের নিয়ে ফেডারেল লাইফ অ্যান্ড জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গড়ে তোলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে দেশের সকল বীমা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৭৩ সনে গঠিত হয় জীবন বীমা করপোরেশন। বীমা শিল্পে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব খোদা বক্সকে দায়িত্ব দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। ১৯৭৪ সালের ১৩ মে খোদা বকেসর কর্মমুখর জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
সাধারণ বীমা করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মাওলা:
বিজিআইসি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম এ সামাদ ১৯২৩ সালের ১ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। দীর্ঘ কর্ম জীবনে তিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জীবন বীমা করপোরেশনের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলেন। সেখান থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৮৫ সালে বেসরকারি খাতের প্রথম সাধারণ বীমা কোম্পানি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিজিআইসি) প্রতিষ্ঠা করেন। জীবন বীমা বিষয়ে একজন কিংবদন্তি হয়ে তিনি সাধারণ বীমার ক্ষেত্রেও অসামান্য অবদান রেখেছেন।
এম এ সামাদ ছিলেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা, উদ্যোক্তা-পরিচালক এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান। বাংলা ও ইংরেজিতে জীবন বীমার ওপর তিনটি এবং সাধারণ বীমার ওপর একটি বই লিখেছেন এম এ সামাদ। দেশে-বিদেশে বইগুলো বিপুলভাবে সমাদৃত।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্পর্কিত টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামে একজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাকে তালিকাভুক্ত করা হয়। তিনি ইউএনডিপির অধীনে বীমাশিল্পে ফেলোশিপ-সংক্রান্ত অনুষ্ঠানগুলোয় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ২০০৫ সালের ১৭ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন এম এ সামাদ।
জীবন বীমা করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান এম শামসুল আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৬০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনে যোগদান করেন। তিনি ২০১৪ সালে জীবন বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
এর আগে সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন এম শামসুল আলম। এ ছাড়াও তিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ বীমা করপোরেশনে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি জীবন বীমা করপোরেশনের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলেন। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যানও তিনি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীমা শিল্পের উন্নয়নে ১৯৭২ সালে কন্ট্রোলার অব ইন্সুরেন্স গঠন করেন। এরপর ১৯৭৩ সালে দেশের একমাত্র অ্যাকচ্যুয়ারি শাফাত আহমেদ চৌধুরীকে লন্ডন থেকে এনে চীফ অব কন্ট্রোলার নিয়োগ দেন। সমাজের দরিদ্র মানুষকে সামাজিক ও আর্থিকভাবে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ক্ষুদ্রবীমা চালু করেন শাফাত আহমেদ চৌধুরী। ১৯৮৪ সালে বেসরকারি খাতে বীমা কোম্পানি খোলার অনুমোদন দেয়া হলে শাফাত আহমেদ চৌধুরী বীমা কোম্পানিতে একচ্যুয়ারিয়াল ডেস্ক চালু করেন। শাফাত আহমেদ চৌধুরী ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক।