গ্রাহকের সব টাকাই খরচ করেছে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ
নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি লাইফ বীমা কোম্পানি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১০১ কোটি ২৫ লাখ টাকা টাকার প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে ব্যয় করেছে ১০৩ কোটি ২ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৩১ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে আইন লঙ্ঘন করে। অর্থাৎ গ্রাহকের জমা করা প্রিমিয়ামের সব টাকাই খরচ করেছে কোম্পানিটি। গেল ৫ বছরে কোম্পানিটির ব্যবসার এমন চিত্র উঠে এসেছে বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা ব্যবসা সমাপনী হিসাব সংক্রান্ত প্রতিবেদনে।
অন্যদিকে গড়মিলের তথ্য দিয়ে লাইফ ফান্ড ইতিবাচক হিসেবে প্রদর্শন করেছে কোম্পানিটি। ব্যবসা সমাপনী হিসাব সংক্রান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
প্রিমিয়াম আয় ১০১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ব্যয় ১০৩ কোটি ২ লাখ টাকা
সবশেষ হিসাব সমাপনী বছর ২০১৯ সালে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ সর্বমোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ২৬ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে ২১ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ২০১৬ সালে ২০ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং ২০১৫ সালে ১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। অর্থাৎ গেলো ৫ বছরে কোম্পানিটির সর্বমোট প্রিমিয়াম আয় ১০১ কোটি ২৫ লাখ টাকা । এর মধ্যে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং নবায়ন ২৫ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২০১৯ সালে ব্যবস্থাপনা খাতে সর্বমোট ব্যয় করে ২৪ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে ২০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা, ২০১৬ সালে ২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা টাকা এবং ২০১৫ সালে ১৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয় করে। অর্থাৎ গেলো ৫ বছরে কোম্পানিটির সর্বমোট ব্যবস্থাপনা ব্যয় ১০৩ কোটি ২ লাখ টাকা। অথচ ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ৭১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত ব্যয় ৩১ কোটি ৬ লাখ টাকা
তথ্য অনুসারে, গেল ৫ বছরে কোম্পানিটি ব্যবস্থাপনা খাতে সর্বমোট ব্যয় করে ১০৩ কোটি ২ লাখ টাকা। অথচ আইন অনুসারে ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ৭১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এই হিসেবে কোম্পানিটি অতিরিক্ত ব্যয় করে ৩১ কোটি ৬ লাখ টাকা।
যার মধ্যে ২০১৯ সালে অতিরিক্ত ব্যয় করে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে ৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা, ২০১৬ সালে ৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং ২০১৫ সালে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত ব্যয় করে।
লাইফ ফান্ডের হিসাবে গড়মিল তথ্য
গড়মিল তথ্য দিয়ে লাইফ ফান্ডের হিসাব দিয়েছে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ। গড়মিলের এ চিত্র পাওয়া গেছে আইডিআরএ’র কাছে দাখিল করা ২০১৯ সালের ব্যবসা সমাপনী প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে ২০১৮ সালে লাইফ ফান্ডের সমাপনী তহবিল ৫০ লাখ টাকা। যা পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের প্রারম্ভিক তহবিল। অথচ প্রতিবেদনটিতে তা (প্রারম্ভিক তহবিল) দেখানো হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা।
আবার ২০১৭ সাল শেষে লাইফ ফান্ডের ঘাটতি ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যা ২০১৮ সালের প্রারম্ভিক তহবিল। অথচ তা দেখানো হয়েছে ৪৩ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০১৭ সাল শেষে লাইফ ফান্ডে ঘাটতি ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে পরের দুই বছরে লাইফ ফান্ডে নতুন তহবিল যুক্ত হয় ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ৯৩ লাখ টাকা এবং ২০১৯ সালের ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
২০১৭ সালের ঘাটতি থেকে পরের ২ বছরের অর্জিত নতুন তহবিল বাদ দিলে লাইফ ফান্ড দাঁড়ায় ১৪ লাখ টাকা। অথচ তা দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ১ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, আইডিআরএ’র কাছে যেসব তথ্য দাখিল করা হয় সেগুলো অনিরীক্ষিত এবং প্রাথমিক তথ্য। যার কারণে অনেক সময় তথ্যের হিসাবে গড়মিল হতে পারে। তবে নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে এ সমস্যা নেই। তাই বর্তমানে কোম্পানির লাইফ ফান্ড ১৪ লাখ টাকা নয়, বরং ৩ কোটি টাকা বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমাদের লাইফ ফান্ড নেগেটিভ ছিল। তবে ২০১৮ সালে এসে ৩৭ লাখ টাকা এবং ২০১৯ সালে এসে ৩ কোটি টাকা পজিটিভ হয়েছে। খরচ বেশি হওয়ায় এখনো আমাদের অতিরিক্ত ব্যয় রয়েছে। তবে প্রিমিয়াম আয় এবং বিনিয়োগ আয় থেকে ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও বীমা দাবি পরিশোধের পর এখন লাইফ ফান্ড বাড়তে শুরু করেছে। গেলো বছরে আমাদের বিনিয়োগ থেকে গড়ে সাড়ে ৯ শতাংশ রিটার্ন এসেছে।