বীমাখাতকে একটা বিশ্বাসযোগ্য স্থানে দাঁড় করাতে চান আইডিআরএ চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমাখাতকে একটা উল্লেখযোগ্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)'র চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বীমাখাতকে একটা বিশ্বাসযোগ্য স্থানে দাঁড় করাতে চাই। যেন বীমাখাতের ওপর মানুষের আস্থা তৈরি হয়।

আজ রোববার 'বীমাখাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা' শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান। দৈনিক বাণিজ্য প্রতিদিন এই সেমিনার আয়োজন করে।

সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে বীমার আওতায় নিয়ে আসা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বীমাখাত সবসময় মানুষের কল্যাণের কথা ভাবে। মানুষ যেন ভালো থাকে এটাই বীমাখাতের চাওয়া। দেশের সব মানুষ বীমার আওতাভুক্ত হলে এই খাত যেমন এগিয়ে যাবে তেমনি মানুষও এর দ্বারা উপকৃত হবে।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, এখন কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়- আপনি কোথায় চাকরি করতে চান। তাহেল উত্তর আসবে- ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। তবে একটা সময় আসবে যখন চাকরির বাজারে বীমা হবে এক নম্বর। আমরা এ লক্ষ্যে বীমা খাতের সিরিজ রিফর্ম করছি।

ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে আমদানি রপ্তানির বাজারে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার পলিসি খোলা হয়। কিন্ত বীমা কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে পাওয়া যায় মাত্র ২ হাজার ৮শ' থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২শ' কোটি টাকা। তাহলে বাকি ২ হাজার ৮শ' কোটি টাকা কোথায়?

বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে বীমাখাতের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতিতে বীমাখাতের অবদান মাত্র দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভারতের অর্থনীতিতে তাদের বীমাখাতের অবদান ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এমনকি ইন্দোনেশিয়াতে বীমাখাতের অবদান ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

ড. এম মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি টেকসই অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা বীমাখাত সমান্তরালে হাঁটতে পারিনি। তবে আমাদের অর্থনীতি সম্ভাবনাময়। আমরা যোগ্যতার সাথে এগিয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবো।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. মিজানুর রহমান বলেন, সারা বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাই জিডিপিতে এ শিল্পের অবদান ৯ দশমিক ৬ শতাংশ অথচ আমাদের দেশের জিডিপিতে বীমা শিল্পের অবদান মাত্র শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ হতে হবে। তাই অর্থনীতির গতিকে ত্বরান্বিত করতে লাইফ এবং নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর পেইড আপ ক্যাপিটাল বাড়ানো উচিত।

মূল প্রবন্ধে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্তকর্তা মো. জালালুল আজিম বলেন, উন্নত দেশে বীমা বাধ্যতামূলক। বীমা ছাড়া ছেলে-মেয়ে স্কুলে ভর্তি করা যায় না। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া যায় না। কিন্তু আমাদের এখানে বীমার প্রয়োজন হয় না। বীমাখাতের উন্নয়নে আমাদের সামনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য এ খাতের ইমেজ সংকট দূর করতে হবে।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাজিম উদ্দীন বলেন, এ সেক্টরে যেমন চ্যালেঞ্জ রয়েছে তেমনি অপরচুনিটিও রয়েছে। এখানে আস্থার সংকট ও দাবি পরিশোধের সমস্যা রয়েছে। তাই প্রত্যেক কোম্পানিগুলো যদি সঠিক সময়ে দাবিগুলো পরিশোধ করে তাহলে এ সেক্টর থেকে আস্থা সংকট কেটে যাবে।

বাণিজ্য প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক একেএম রাশেদ শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাইদুর রহমান, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির চিফ ফ্যাকাল্টি মেম্বার এস এম ইব্রাহিম হোসাইন প্রমখি।