জাতীয় বীমা দিবসে বিশেষ সম্মাননা পাচ্ছেন যারা
আবদুর রহমান আবির: দেশের বীমা খাতে অবদান রাখায় এবার বিশেষ সম্মাননা পাচ্ছেন ৪ বীমা ব্যক্তিত্ব এবং একজন পাচ্ছেন মুজিববর্ষের বিশেষ সম্মাননা। জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষ্যে আগামীকাল মঙ্গলবার (১ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা দেয়া হবে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশেষ সম্মাননার জন্য নির্ধারিত ব্যক্তিরা হলেন- বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মুস্তাফিজুর রহমান (মরনোত্তর), গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপদেষ্টা নাসির উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, সন্ধানী লাইফের প্রতিষ্ঠাতা হাজী মকবুল হোসেন (মরনোত্তর) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম খান (এন আই খান) ।
এরমধ্যে মো. নজরুল ইসলাম খানকে দেয়া হবে মুজিববর্ষের বিশেষ সম্মাননা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বীমা পেশায় যোগদানের তারিখ অনুসন্ধান ও জাতীয় বীমা দিবস চালুতে অবদান রাখায় এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরিতে সহায়তা করার জন্য তিনি এ বিশেষ সম্মাননা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছে আইডিআরএ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক একান্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান (এন আই খান) ২০১৬ সালের মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর পদে নিয়োগ পান। এন আই খান ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর অবসরে যান। সর্বশেষ তিনি শিক্ষাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বর্তমানে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেম্বারস অব গভর্নরস। দেশের বীমা শিল্পের উন্নয়নে তিনি সর্বদাই নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
এছাড়াও শেখ কবির হোসেন লায়ন্স ক্লাবের সঙ্গে জড়িত। তিনি লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনালের সাবেক আন্তর্জাতিক পরিচালক হিসাবে দেশে-বিদেশে লায়ন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি একাধিক স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও শুভাকাঙ্ক্ষি। তিনি আগারগাঁওয়ে অবস্থিত লায়ন চক্ষু হাসপাতালেরও অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। এছাড়াও দেশের একমাত্র ইসলামি চক্ষু হাসপাতালের ভাইস-চেয়ারম্যান হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
শেখ কবির হোসেন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজম্যান্ট এর চেয়ারম্যান, সিডিবিএল এর চেয়ারম্যান, ফারইষ্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটির ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান।
রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আলহাজ মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে তিনি রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডসহ ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রূপালী ইন্স্যুরেন্স এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকসহ বহু আর্থিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।
নাসিরউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বর্তমানে তিনি ব্রাক ডেল্টা হাউজিং এর চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন। দেশের ব্যবসায় খাতের অভিজ্ঞজন নাসির আহমেদ চৌধুরী ১৯৩৪ সালে সিলেটের দাউদপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পরে ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনে যোগ দেন নাসির আহমেদ। উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাজ্য এবং পরবর্তীদের মিউনিখ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে প্রশিক্ষক হিসেবে জার্মানিতে পাড়ি জমান তিনি।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সাধারণ বীমা করপোরেশনে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পান নাসির আহমেদ। ১৯৮৫ সালে বেসরকারি খাতে বীমা কার্যক্রম উন্মুক্ত হলে, কয়েকজন ঘনিষ্ট বন্ধুকে নিয়ে গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠা করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রথম প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির আহমেদ চৌধুরী।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি নাসির আহমেদ বাণিজ্য খাতের অন্যান্য সংগঠন এফবিসিসিআই, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এবং বাংলাদেশ জার্মান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নীতি নির্ধারনেও ভূমিকা রেখেছেন।
মরনোত্তর বিশেষ সম্মাননা প্রাপ্ত আরেক বীমা ব্যক্তিত্ব হাজী মকবুল হোসেন। আওয়ামী লীগের সাবেক এই সংসদ সদস্য ছিলেন সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান। বিশিষ্ট বীমা ব্যক্তিত্ব ২০২০ সালের ২৪ মে ইন্তেকাল করেন।
রাজনৈতিক জীবনে হাজী মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগ্রামে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
হাজী মকবুল হোসেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের একজন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ী এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন।
মকবুল হোসেন একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সিটি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মকবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।