১৯৮ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে হোমল্যান্ডের পরিচালকদের
নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৩ সাল পর্যন্ত সকল বীমা দাবি পরিশোধসহ কোম্পানির তহবিল থেকে তছরূপ হওয়া ১৯৮ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালকদের। এমন নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
সোমবার (১২ জুন) হোমল্যান্ড লাইফের সংকট নিয়ে কোম্পানিটির পরিচালকদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন সিদ্ধান্তের কথা পরিচালনা পর্ষদকে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী। বৈঠক সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সভায় হোমল্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান হান্নান মিয়াসহ কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য জামাল মিয়া, মোহাম্মদ জুলহাস, আব্দুর রাজ্জাক, হোসনে আরা নাজ, কামাল মিয়া, আব্দুল হাই, জহুরা তাসনুবা, শওকতুর রহমান, আখতার হোসেন ও ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র মতে, এর আগে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান একনাবিন ও হুদাভাসি চৌধুরী এন্ড কোম্পানি এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদনে হোমল্যান্ড লাইফে বীমা গ্রাহকের জমা করা টাকা তছরূপের পরিমাণ উঠে আসে ১০৪ কোটি টাকা।
তবে হোমল্যান্ড লাইফের এই তহবিল তছরূপের পরিমাণ ১০৪ কোটি টাকা নয়, তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৮ কোটি টাকা। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তছরুপ হওয়া এই টাকা পরিচালকদের ফেরত দিতে হবে। এই নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
একইসাথে কবে নাগাদ গ্রাহকদের সকল বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে এবং তছরূপ হওয়া অর্থ কোম্পানির তহবিলে কবে নাগাদ ফেরত দেয়া হবে সে বিষয়ে আজ মঙ্গলবার (১৩ জুন) বোর্ড সভা করে সিদ্ধান্ত নিতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই বৈঠকে।
সূত্র মতে, গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ না করে বকেয়া দেখিয়ে প্রভিশন করে শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ট প্রদান করেছে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স। গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় কোম্পানিটি সঠিকভাবে প্রভিশন গণনা না করেই এই ডিভিডেন্ট দিয়েছে।
এছাড়া বোর্ড মিটিং ফি ৮ হাজার টাকার পরিবর্তে হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালকরা নিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা। ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই বোর্ড মিটিং ফি বাবদ ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা অতিরিক্ত নিয়েছেন বীমা কোম্পানিটির পরিচালকরা।
ফলে বীমা কোম্পানিটির তছরুপ হওয়া টাকার পরিমাণ ১০৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৮ কোটি টাকা। অপর দিকে হোমল্যান্ড লাইফে গ্রাহকদের বকেয়া বীমা দাবির পরিমাণ প্রায় ৭৭ কোটি টাকা।
এর আগে ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বীমা গ্রাহকের দায়ের করা এক মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে যান হোমল্যান্ড লাইফের প্রবাসী ৭ পরিচালক। এ ঘটনার পরই প্রকাশ্যে আসে কোম্পানিটির পরিচালকদের দ্বন্দ্ব। এ প্রেক্ষিতে গত ৬ নভেম্বর নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমঝোতায় হোমল্যান্ড লাইফে নিরপেক্ষ পরিচালক নিয়োগ দিয়ে গঠন করা হয় নতুন পর্ষদ।
হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালকদের এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার পাশাপাশি বেরিয়ে আসে কোম্পানিটিতে সংঘটিত নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য। বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ‘গ্রাহকের ১০৪ কোটি টাকা যেভাবে লুট হয়েছে হোমল্যান্ড লাইফে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। সংবাদে কোম্পানিটির অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।