তীব্র তাপদাহে বাড়ছে অসুস্থতা, চিকিৎসা খরচ পাওয়া যায় স্বাস্থ্য বীমায়

আবদুর রহমান আবির: তীব্র তাপদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজধানীসহ সারাদেশের জনজীবন। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। এমনকি মৃত্যুর সংবাদও মিলছে হিটস্ট্রোকে। দিন যতই যাচ্ছে বাড়ছে এই তাপমাত্রা। ভাঙছে পুরনো সব রেকর্ড।  বিশেষ সতর্কতা বা হিট এলার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এদিকে তীব্র তাপদাহে হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়া ও জ্বরসহ নানান অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতাল-ক্লিনিকে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।  হঠাৎ করেই অসুস্থ হওয়া এসব রোগীর চিকিৎসা খরচের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা পাচ্ছেন স্বাস্থ্য বীমার আওতায় থাকা গ্রাহকরা।

হিট স্ট্রোকসহ গরমের যেকোন অসুস্থতায় হাসপাতালে ভর্তির হলে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় থাকা গ্রাহকরা পাচ্ছেন বীমার আর্থিক সুবিধা। এছাড়া বীমা কোম্পানিগুলোর নেটওয়ার্কভুক্ত হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে ভর্তিসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মিলছে বিশেষ মূল্য ছাড়।

বীমা কোম্পানিগুলো বলছে, হিট স্ট্রোক বা গরমের অসুস্থতায় স্বাস্থ্য বীমার গ্রাহকরা ছাড়াও লাইফ বীমার সকল গ্রাহকের মৃত্যুতে পলিসির নমিনী পাবেন মৃত্যুদাবির টাকা। এক্ষেত্রে স্থায়ী অঙ্গহানী বা পিডিএবি কাভারেজ নেয়া থাকলে মিলবে দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ।

স্বাস্থ বীমার আওতায় যেভাবে মিলবে চিকিৎসা খরচ

স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা রয়েছে এমন বীমা কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বাস্থ্য বীমার আওতায় থাকা গ্রাহকরা এই তীব্র গরমে বা অন্য কোন কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে বীমা পলিসির শর্ত অনুসারে চিকিৎসা খরচ পাবেন কোম্পানি থেকে। তবে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে।

এক্ষেত্রে সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা গ্রহণসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব খরচ প্রাথমিকভাবে বীমা গ্রাহককেই বহন করতে হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে হাসপাতাল থেকে রিলিজ অর্ডার বা ছুটি পাওয়ার পর চিকিৎসা খরচের টাকা পেতে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিতে আবেদন দাখিল করতে হয়।

স্বাস্থ্য বীমা কভারেজ দেয়া সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিতে দাবি উত্থাপনের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসাসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার যাবতীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে হবে। একইসঙ্গে বীমা দাবির টাকা গ্রহণের জন্য গ্রাহকের নিজ নামের ব্যাংক একাউন্টের প্রয়োজনীয় তথ্যও সরবরাহ করতে হবে বীমা কোম্পানিকে।

যেসব বীমা কোম্পানিতে পাওয়া যায় স্বাস্থ্য বীমা কাভারেজ

বীমা কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রুপ-হেলথ ইন্স্যুরেন্সর আওতায় অথবা সরাসরি স্বাস্থ্য বীমা পলিসি গ্রহণের মাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ পাওয়া যায় বীমা কোম্পানি থেকে। এ ছাড়াও লাইফ বীমার অন্য কোন পলিসির সাথে রাইডার হিসেবে স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা নেয়া যায়।

বর্তমানে ডেল্টা লাইফ, প্রগতি লাইফ, প্রটেক্টিভ লাইফ, গার্ডিয়ান লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, জেনিথ ইসলামী লাইফ, আস্থা লাইফ এবং মেটলাইফসহ বেশ কয়েকটি লাইফ বীমা কোম্পানি থেকে স্বাস্থ্য বীমা কাভারেজ দিচ্ছে। দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রে ক্রেডিট ফ্যাসিলিটিজ দিচ্ছে।

প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফের তথ্য অনুসারে, দেশের অন্তত ১০০টি হাসপাতালে বীমা কোম্পানিটির ক্যাশলেস বা টাকা প্রদান ছাড়াই চিকিৎসা গ্রহণ সুবিধা চালু রয়েছে।

তাপদাহ নিয়ে যা বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর

চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই দেশের কয়েকটি জেলায় শুরু হয় তাপদাহ। যা পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারাদেশেই। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বিগত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে এবারের গরম। আজ সোমবার (২৯ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে গত ২৮ এপ্রিল সর্বশেষ তিনদিনের তাপদাহের সতর্কবার্তা (হিট এলার্ট) জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি মাসে এ নিয়ে টানা পঞ্চম দফায় হিট এলার্ট জারি করা হলো।

তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক বা অসুস্থতার খবর চারদিকে

রাজধানীসহ সারাদেশে তীব্র তাপদাহ শুরু হওয়ার পর গত ২০ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ৬৪ জন হিট স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে গণমাধ্যমগুলো সংবাদ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ২৮ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে হিট স্ট্রোকে।

এ ছাড়াও তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ শ্রমজীবী মানুষেরাই বেশি ভুক্তভোগী এই তাপদাহে।  

স্বাস্থ্য বীমার বিষয়ে যা বলছেন মুখ্য নির্বাহীরা:

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ও জেনিথ ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, হিট স্ট্রোক বা গরমের কারণে আমাদের কোন গ্রাহক অসুস্থ হলে নির্ধারিত হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিশেষ ছাড় পাবেন। এ জন্য তাদেরকে কোম্পানির হেলথ কার্ড দেখাতে হবে।

গ্রুপ-হেলথ বা স্বাস্থ্য বীমার আওতায় থাকা আমাদের গ্রাহকরা ডক্টরের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিলে তিনি নিয়মানুযায়ী চিকিৎসা খরচ পাবেন। এ ছাড়াও জেনিথ ইসলামী লাইফের যেকোন গ্রাহক হিট স্ট্রোক বা গরমের কারণে মৃত্যুবরণ করলে পলিসির নমিনী পাবেন মৃত্যুদাবির টাকা।

এক্ষেত্রে পিডিএবি কভারেজ নেয়া থাকলে এক্সিডেন্টাল ডেথ বা অস্বাভাবিক মৃত্যুতে আমাদের গ্রাহকদের নমিনীরা পাবেন দ্বিগুণ মৃত্যুদাবি, বলেন এস এম নুরুজ্জামান।

চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক এফএলএমআই বলেন, তীব্র তাপদাহের কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে আমাদের কোন গ্রাহক অসুস্থ হলে ‘চার্টার্ড নিরাপত্তা বীমা’ এবং গ্রুপ-হেলথ ইন্স্যুরেন্সের সুবিধা হিসেবে নিয়মানুযায়ী চিকিৎসা খরচ পাচ্ছেন।

এ ছাড়াও চার্টার্ড লাইফের সকল বীমা গ্রাহক কোম্পানির নেটওয়ার্কভুক্ত হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে ভর্তিসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নির্ধারিত হারে ডিসকাউন্ট পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের কাছে থাকা চার্টার্ড লাইফের ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দেখিয়ে এই সুবিধা নিতে পারছেন বলে জানান এস এম জিয়াউল হক।

স্বাস্থ্য বীমা দাবি উত্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, চার্টার্ড লাইফের নির্ধারিত ক্লেইম ফরম পূরণ করে প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রসহ কোম্পানিতে পাঠিয়ে দিলেই গ্রাহক তার ব্যাংক একাউন্টে বীমা দাবির টাকা পেতে পারেন। এক্ষেত্রে বর্তমানে গ্রুপ-হেলথের গ্রাহকরা অনলাইনে বীমা দাবি উত্থাপনের সুবিধা পাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে বাকীরাও অনলাইনে বীমা দাবি উত্থাপন করতে পারবেন।

প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কিশোর বিশ্বাস বলেন, তীব্র তাপদাহে এরইমধ্যে আমাদের ৬ জন রাশিয়ান বীমা গ্রাহক হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই প্রতিষ্ঠানের আরো অন্তত ১৫ জন তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ছাড়াও দেশের অন্যান্য স্থান থেকেও বেশ কিছু গ্রাহক অসুস্থ হওয়ার খবর এসেছে।

তিনি আরো বলেন, প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ দেশের স্বাস্থ্য বীমা খাতে ‘ক্রেডিট ফ্যাসিলিটিজ’ দিচ্ছে। এর ফলে আমাদের গ্রাহকরা পকেট থেকে কোন টাকা খরচ না করেই কোম্পানির নেটওয়ার্কভুক্ত হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন। দেশের অন্তত ১০০টি হাসপাতাল থেকে তারা এই সুবিধা নিতে পারছেন।

এ ছাড়াও প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফের ক্লেইম পোর্টালের মাধ্যমে যেকোন বীমা দাবি উত্থাপন করে গ্রাহকরা খুব সহজেই বীমার টাকা নিতে পারছেন, বলেন ডা. কিশোর বিশ্বাস। 

মেটলাইফ বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমদ বলেন, চলমান তাপপ্রবাহে আমরা আমাদের কর্মী, এজেন্ট এবং গ্রাহকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন করে তোলার প্রয়াস বজায় রেখেছি। একই সাথে মেটলাইফের বীমা গ্রাহকরা তাদের অসুস্থতায় বীমা পলিসি অনুযায়ী হাসপাতালে থাকার খরচ বা মৃত্যুর মত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় বীমার কভারেজ পাবেন।