আইডিআরএ’র কার্যালয়

আইডিআরএ চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে সোনালী লাইফের কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর পদত্যাগের দাবিতে আইডিআরএ’র কার্যালয়ে জড়ো হয়েছেন সোনালী লাইফের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। তারা আজ রোববার (১১ আগস্ট) বিকাল ৩টা থেকে আইডিআরএ’র কার্যালয়ে জড়ো হন।

এ সময়ে তারা আইডিআরএ চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেন; হট্টগোল করেন। একইসঙ্গে তারা সোনালী লাইফের প্রশাসকের অপসারণ দাবি করেন। পরবর্তিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এর আগে গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সোনালী লাইফের প্রশাসকের ডিওএইচএসএ’র বাসভবনে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করে ৩২ কোটি টাকার অবৈধ বেতন-ভাতা অনুমোদন করে নেন।

অভিযোগ রয়েছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদের মদদে কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারিরা আইডিআরএ কার্যালয়ে এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

সূত্র মতে, ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে চলতি বছরের ২১ এপ্রিল প্রশাসক নিয়োগ করে আইডিআরএ। পরে ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২৫ জুলাই মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক।

অপর দিকে জুলাই মাসেই সোনালী লাইফের ১০ বছরের ব্যবসায়ীক কর্মকান্ডের দুর্নীতি ও অনিয়ম ক্ষতিয়ে দেখতে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদাভাসিকে নিয়োগ করে আইডিআরএ। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনও সোনালী লাইফের অনিয়ম দুর্নীতি ক্ষতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে।

জানা গেছে, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লাইসেন্স পায় ২০১৩ সালে। ওই বছরই তারা ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ড শুরু করে। ২০২৩ সালে সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। এর পরে ১৮৭ কোটি টাকা আত্মাসাতের বিষয়টি সামনে আসে।

অভিযোগ রয়েছে, সোনালী লাইফে প্রশাসক নিয়োগ করার পর থেকে প্রশাসকের কর্মকাণ্ড ও আইডিআরএ’র তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে নানাভাবেই বাধাগ্রস্ত করে আসছে সোনালী লাইফের কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে সোনালী লাইফের সাসপেন্ড পরিচালনা পর্ষদের মদদে কর্মকর্তারা তদন্ত বাধাগ্রস্ত করছে। এরই অংশ হিসেবে আজ তারা আইডিআরএ কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেন।

সূত্র মতে, অবৈধভাবে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তহবিল থেকে বের করে নেয়া অর্থের পরিমাণ মোট ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা।

এর মধ্যে পরিচালকদের নামে শেয়ার ক্রয় করতে তহবিল থেকে নেয়া হয়েছে ৯ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জমি/ভবন ক্রয়ের অগ্রিম দেখিয়ে অবৈধভাবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে অবৈধভাবে দেয়া হয়েছে ১৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৫শ’ টাকা। সোয়েটার ক্রয়, আপ্যায়ন, ইআরপি মেইনটেনেন্স বাবদ মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৭ টাকা।

নিজ পরিবারের সদস্য পরিচালকদের মাসিক বেতন বাবদ নেয়া হয়েছে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অবৈধভাবে বিলাসবহুল অডি কার ক্রয়ে খরচ করা হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। নিজ পরিবারের সদস্য পরিচালকদের অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ১০ হাজার ৭৫০ টাকা। বিদেশে চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ ব্যয় ১ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৮শ’ টাকা। গ্রুপ বীমা পলিসি থেকে ড্যানিয়েলকে অবৈধ কমিশন দেয়া হয়েছে ৯ লাখ টাকা।

ঋণ সমন্বয়, অনুদান, এসি ক্রয়, কোরবানির গরু ক্রয়, বিদেশ ভ্রমণ, পলিসি নবায়ন উপহার, আইপিও খরচের নামে নেয়া হয়েছে ৮ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৯ টাকা। অফিস ভাড়ার নামে ড্রাগন আইটিকে প্রদান ১১ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ১৭ টাকা। সম্পূর্ণ ইম্পেরিয়েল ভবনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ১ কোটি ৭২ লাখ ৪২ হাজার ২২৩ টাকা। ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লিমিটেডের ট্যাক্স পরিশোধ ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

এর আগে ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে ‌‍‘ফ্লোর বিক্রি করে সোনালী লাইফ থেকে ২১২ কোটি টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, অনুমোদন নেই আইডিআরএ’র’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। পরে বীমা কোম্পানিটির আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে হুদাভাসি চৌধুরী এন্ড কোং কে নিয়োগ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। 

আইডিআরএ’র চিঠিতে সোনালী লাইফের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির জন্য উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ১ কোটি ৫ লাখ শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন নগদ অর্থের বিনিময়ে উক্ত শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন প্রদান করে।

কিন্তু পরিচালক নূর এ হাফজা, ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, শাফিয়া সোবহান চৌধুরী ও শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েল এর নিকট থেকে কোনো টাকা গ্রহণ না করেই তাদের নামে প্রতিটি ১০ টাকা হারে মোট ৯ লাখ ১৬ হাজার ৫০ হাজার টাকার শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে। অন্যদিকে মায়া রাণী রায়, আহমেদ রাজীব সামদানী ও হোদা আলী সেলিমের নিকট থেকে শেয়ার প্রতি ২০ টাকা মূল্য গ্রহণ করা হয়েছে।

কোম্পানির এফডিআর এর বিপরীতে সাউথ বাংলা ব্যাংকে বিনা প্রয়োজনে এসওডি হিসাব খুলে ঋণের ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে এবং একই ব্যাংকে কোম্পানির সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকাসহ মোট ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। পরে একই ব্যাংকে কোম্পানির আরেকটি হিসাবে জমা করা হয়। এই টাকা উল্লেখিত পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের মূল্য হিসেবে দেখানো হয়।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস তার ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান ও মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার নিকট থেকে ২৬ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার, মোস্তফা কামরুস সোবহানের স্ত্রী শাফিয়া সোবহান চৌধুরীর নিকট থেকে ৩ লাখ শেয়ার, তাসনিয়া কামরুন অনিকার স্বামী শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েলের নিকট থেকে ১২ লাখ এবং ফজিলাতুননেসা রুপালী ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে ৬ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার লাভ করে পরিচালক হন।

পরবর্তীতে মোস্তফা গোলাম কুদ্দস ১৪ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার তার মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়াকে ও ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার স্ত্রী ফজিলাতুননেসাকে এবং শাফিয়া সোবহান চৌধুরী তার স্বামী মোস্তফা কামরুস সোবহানকে ৬ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার হস্তান্তর করে কোম্পানির আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনের ৯০(জে) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ন্যূনতম শেয়ার বজায় রাখেন।

এর মাধ্যমে পরিবারের ৭ জন সদস্য কোম্পানির বোর্ডে পরিচালক রেখে পারিবারিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কম্যুনিকেশন লিমিটেড, ড্রাগন সোয়েটার লিমিটেড, ইম্পেরিয়াল সোয়েটার লিমিটেড ও ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লিমিটেডকে বিভিন্ন সময়ে ১৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৫শ’ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

আইডিআরএ’র অনুমোদনের আগে এ ধরনের টাকা পরিশোধ অবৈধ। প্রকৃতপক্ষে কোম্পানির ১৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৫শ’ টাকা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে প্রদান করা হয়েছে এবং জমি/ভবন ক্রয়ের অগ্রিম হিসেবে বৈধতা দেয়ার অপপ্রয়াস নেয়া হয়েছে।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস প্রতি মাসে ৩ কোটি টাকা হিসেবে মোট ১৮ কোটি টাকা নিয়েছেন। এই টাকা তিনি নিয়েছেন তার নিজের প্রতিষ্ঠান ড্রাগন সোয়েটারের নামে। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই তিনি অবৈধভাবে এসব টাকা নিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সোনালী লাইফের এফডিআর এর বিপরীতে প্রথমে ঋণ নেয়া হয় ১৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। পরে এই টাকা থেকে ৮৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা কোম্পানির একাউন্ট থেকে বিভিন্ন একাউন্টে ট্রান্সফার করে সর্বশেষ জমা করা হয়েছে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে। বোর্ড সভার কার্যবিবরণীর জাল উদ্ধৃতাংশ দাখিল করে এরই লেনদেন করা হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ইম্পেরিয়াল ভবন কোম্পানি কর্তৃক ক্রয়ের জন্য স্বাক্ষরিত ২টি সমঝোতা চুক্তির ফটোকপি তদন্তকালে পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৫ অক্টোবর ২০২১ তারিখে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে জমি ও ভবনের মূল্য ৩৫০ কোটি টাকা এবং ১২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে মূল্য ১১০ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা মূল্য উল্লেখ আছে। তবে জমি/ভবনের ক্রয়ের উদ্দেশ্য, মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, ধার্যকৃত মূল্য ও অন্যান্য শর্ত নির্দিষ্ট করে সমঝোতা চুক্তি দুটির কোনোটির বিষয়েই বোর্ডর কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

এ ছাড়াও ইম্পেরিয়াল ভবনের জমির মালিকানা/ভবন নির্মানের অনুমতি যাচাইয়ের জন্য দলিল/দলিলের সই মুহরি নকলের ফটোকপি দাখিল করলেও চাহিদা মাফিক মূল দলিল, বায়া দলিল, খতিয়ান/নামজারি, ভূমিকর পরিশোধের রসিদ পাওয়া যায়নি এবং ৭ কাঠা জমির উপর ভবন নির্মাণের জন্য (রাজউকের অনুমোদন পাওয়া খিলগাও পুনর্বাসন এলাকা) বরাদ্দপত্র, লীজ চুক্তি ও ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেই, ফলে জমির মালিকানা নিষ্কন্টক নয় ও ভবনের বৈধতা প্রশ্নসাপেক্ষ।

কোম্পানির তহবিল থেকে ২০২১-২৩ মেয়াদে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ড্রাগন সোয়টার লিমিটেডকে সোয়েটার ক্রয় বাবদ ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ইম্পেরিয়াল স্যুটস এন্ড কনভোকেশন সেন্টারকে আপ্যায়ন বাবদ ১ কোটি ৭৮ লাখ ৬২ হাজার ৫৯২ টাকা এবং ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কম্যুনিকেশন লিমিটেডকে ইআরপি মেইনটেনেন্স ও সোয়েটার ক্রয় বাবদ ৩ কোটি ৪২ লাখ ৬ হাজার ২২৫ টাকা অর্থাৎ মোট ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৭ টাকা অবৈধভাবে প্রদান করা হয়।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নিজে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা ও তার পরিবারের ৬ সদস্য যথা- মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা, আরেক মেয়ে তাসনিয়া কামরুন অনিকা প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা, ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকা, ছেলের বউ শাফিয়া সোবহান চৌধুরী প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা, স্ত্রী ফজলুতুননেসা প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা ও মেয়ের জামাই শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা এবং আরেকজন সাবেক চেয়ারম্যান নুর এ হাফজা প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা করে ৮ পরিচালক অবৈধভাবে বেতন হিসাবে এ পর্যন্ত মোট ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। যা নগদ উত্তোলন করে তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা দেয়া হয়েছে।

আইন অমান্য করে গত ৬ মে ২০১৮ তারিখে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় একটি বিলাসবহুল গাড়ি কেনা হয়। যা চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন। ২০২১-২৩ মেয়াদে রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২১ লাখ ৫২ হাজার ৫০৫ টাকা ব্যয় করা হয়। এই গাড়ি ক্রয়ে বোর্ড বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়া হয়নি এবং গাড়ির ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কোম্পানির অর্ধ বার্ষিক সভায় আলোচনা ও এজিএম এ পেশ করার বিধান থাকলেও তা করা হয়নি।

২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডিভিডেন্ড বাবদ বিবিধ খাতে অবৈধভাবে ১ কোটি ৬০ লাখ ১০ হাজার ৭৫০ টাকা পরিশোধ করা হয়। এর মধ্যে রূপালী ইন্স্যুরেন্সকে দু’দফায় ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং নূর এ হাফজাকে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অবৈধভাবে কোম্পানির তহবিল থেকে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার ২৮০ টাকা ব্যয় করেছেন। এর মধ্যে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের বিদেশে চিকিৎসার খরচ বাবদ ব্যয় করা হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৮শ’ টাকা, ভ্রমণ ও শপিং বাবদ ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮০ টাকা এবং মেয়ের বিদেশে পড়ালেখার ব্যয় বাবদ ৪৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এসব টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে পেটিক্যাশ খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে।

পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েলকে বীমা পলিসি থেকে অবৈধভাবে কমিশন নিয়েছেন ৯ লাখ টাকা এবং তিনি পরিচালক না থাকাকালীন ১১টি বোর্ড সভায় অবৈধভাবে অংশগ্রহণ ও ৮৮ হাজার টাকা সম্মানী গ্রহণ করেন।

এ ছাড়াও পরিচালক না হয়েও তিনি ব্যাংক হিসাবের সিগনেটরী থেকে কোম্পানির সিইও’র যৌথভাবে চেক স্বাক্ষর করেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। নমুনা হিসেবে বিভিন্ন তারিখের ১১টির চেকে টাকার পরিমান ৩০ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং এসব অর্থই মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে।

ব্যক্তিগত ঋণ সমন্বয় বাবদ ২০১৬-১৮ সালে দুই বছরে ১১টি ভাউচারে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে সর্বমোট ৮ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৯ টাকা নিয়েছেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান মনে করছে এই টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন।

এর মধ্যে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস সরাসরি নিয়েছেন ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বিজিএমইকে অনুদান ৫২ হাজার ৫শ’ টাকা, এসি ক্রয় ১ লাখ ৮১ হাজার ৭৭৮ টাকা, বিবাহ বার্ষিকীর উপহার ১৫ লাখ টাকা, সিইও’র জন্মদিন উদযাপনে ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, চেয়ারম্যানের কোরবানির গরু ও এতিমখানার জন্য গরু ক্রয়ে ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা, পারিবারিক বিনোদনে ব্যয় ৩ লাখ  ৪২ হাজার ২৪০ টাকা, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের বিদেশ ভ্রমণে ব্যয় ৪ কোটি ৯৮ লাখ ১৪ হাজার ৩৬১ টাকা, আইপিও খরচের নামে অতিরিক্ত ১ কোটি টাকা এবং ড্রাগন আইটিকে দেয়া হয় ১ কোটি ২৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮শ’ টাকা।

কোম্পানির অফিসের জন্য মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ইম্পেরিয়াল ভবনের ২০১৩ সালে ৫টি, ২০১৪ সালে ৭টি, ২০১৫ সালে ৯টি ও ২০১৬ সালে ১০টি এবং ২০১৭ সালে ১৬টি ফ্লোর ভাড়ার চুক্তি দেখিয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভাড়া বাবদ ১১ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার ১৭ টাকা অবৈধভাবে ড্রাগন আইটিকে প্রদান করা হয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান মনে করছে- ২০১৩ প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি নতুন কোম্পানির জন্য অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় পরিমাণ ফ্লোর স্পেস ভাড়া দেখিয়ে অবৈধভাবে এসব টাকা নেয়া হয়েছে।

আইডিআরএ’র চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ইম্পেরিয়াল ভবনে ইম্পেরিয়াল ক্যাফে, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইম্পেরিয়াল স্যুটস এন্ড কনভেনশন সেন্টার, স্টার্লিং স্টক এন্ড সিকিউরিটিজ ইম্পেরিয়াল ক্যাফে, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ইম্পেরিয়াল হেলথ ক্লাব (জিম) আছে। ন্যাশনাল ব্যাংক ছাড়া এদের ভাড়া সংক্রান্ত কোনো তথ্যাদি সরবরাহ করা হয়নি।

অথচ পুরো ইম্পেরিয়াল ভবনের বিদ্যুৎ ও ওয়াসার বিল সোনালী লাইফ থেকে অবৈধভাবে পরিশোধ করা হয়েছে। ডিপিডিসি'র প্রাপ্ত ৩৪টি বিল ও ঢাকা ওয়াসার প্রাপ্ত ২টি বিলের মাধ্যমে মোট ১ কোটি ৭২ লাখ ৪২ হাজার ২২৩ টাকা পরিশোধ করে কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে।

এ ছাড়াও ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লিমিটেডের ট্যাক্স বাবদ কোম্পানির বিবিধ খাত থেকে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উপ-কর কমিশনার, সার্কেল ২২৮, জোন ১১ বরাবর পরিশোধ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্ত কার্যক্রম কার্যপরিধির মধ্যে সীমিত রেখে নমুনা ভিত্তিক যাচাইয়ের ফলে সকল অনিয়মের তথ্য এ প্রতিবেদনে আসেনি। পূর্ণাঙ্গ চিত্রের জন্য কোম্পানিটির বিস্তারিত নিরীক্ষা প্রয়োজন। কোম্পানির অসম্পূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ বা তথ্য গোপন, অস্বচ্ছ হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি, অভ্যন্তরীণ কন্ট্রোল সিস্টেমের অনুপস্থিতি কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের সহায়ক অবস্থা তৈরী করেছে।

বছরে গড়ে ২২ কোটি বা মাসে প্রায় ২ কোটি টাকা পেটি ক্যাশ হিসেবে ব্যয় হয়েছে এবং অনেক এককালীন বড় অংকের লেনদেন ক্যাশ চেকে হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনী ও অর্থ তছরুপের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ব্যাংক সিগনেটরিরা প্রায় সকলেই একই পরিবারের সদস্য যার ফলে তাদের স্বাক্ষরিত চেকের মাধ্যমে বেশিরভাগ অবৈধ লেনদেন হয়েছে।