প্রিমিয়াম আয় ১২২৬৬ কোটি টাকা, গ্রাহকের তহবিলে জমা ৪১৫ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৪ সালে দেশের ৩৫টি লাইফ বীমা কোম্পানি গ্রাহকের কাছ থেকে প্রিমিয়াম নিয়েছে মোট ১২ হাজার ২৬৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর তা থেকে গ্রাহকের দায় পরিশোধের জন্য লাইফ ফান্ডে জমা করেছে ৪১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যা সংগৃহীত মোট প্রিমিয়ামের ৩.৩৯ শতাংশ।
এর আগে ২০২৩ সালে কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে মোট প্রিমিয়াম নিয়েছিল মোট ১২ হাজার ২৭৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্রাহকের দায় পরিশোধে লাইফ ফান্ডে যুক্ত করে ৯০৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা কোম্পানিগুলোর সংগৃহীত মোট প্রিমিয়ামের ৭.৩৬ শতাংশ।
২০২৪ সাল শেষে ৩৫টি কোম্পানির মোট লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৯৫৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের বছর ২০২৩ সালে যা ছিল ৩৫ হাজার ৫৪২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এই হিসাবে ২০২৪ সালে লাইফ ফান্ডে বেড়েছে ১.১৭ শতাংশ। আগের বছরে এই বৃদ্ধির হার ছিল ২.৬১ শতাংশ।
লাইফ বীমা খাতের ৩৫টি কোম্পানির এই অনিরীক্ষিত হিসাব প্রকাশ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । সংস্থাটির ওয়েবসাইটে গত ১৭ মে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। তবে এই প্রতিবেদন তৈরিতে আইডিআরএ’র বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যও গ্রহণ করা হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাইফ ফান্ড হচ্ছে লাইফ বীমা কোম্পানির প্রাণ। গ্রাহকের দায়ের তুলনায় এই লাইফ ফান্ড শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে লাইফ ফান্ড বৃদ্ধির হার প্রিমিয়ামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হতে বাধ্য এবং এক পর্যায়ে গ্রাহকের দায় পরিশোধে সক্ষমতাও হারাতে পারে।
আইডিআরএ’র প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সাল শেষে ৩৫টি কোম্পানির মোট লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৯৫৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। যা ২০২৩ সালে ছিল ৩৫ হাজার ৫৪২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানিগুলোর লাইফ ফান্ড বেড়েছে মোট ৪১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা বা ১.১৭ শতাংশ।
অথচ ২০২৪ সালে কোম্পানিগুলোর সর্বমোট গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ১২ হাজার ২৬৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ সংগৃহীত গ্রস প্রিমিয়ামের ৩.৩৯ শতাংশ গ্রাহকের তহবিলে জমা করতে পারলেও বাকী ৯৬.৬১ শতাংশ বা ১১ হাজার ৮৫০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালে কোম্পানিগুলো তাদের লাইফ ফান্ডে ৯০৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা যুক্ত করেছিল, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগৃহীত মোট প্রিমিয়ামের ৭.৩৬ শতাংশ। সে বছর লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল মোট ১২ হাজার ২৭৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
এই হিসাবে ২০২৪ সালে কোম্পানিগুলোর লাইফ ফান্ডে তহবিল যুক্ত হওয়ার পরিমাণ ৩.৯৭ শতাংশ কমেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে লাইফ ফান্ড বেড়েছে ন্যাশনাল লাইফের ৬৯৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, জীবন বীমা করপোরেশনে ২৫৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, গার্ডিয়ান লাইফে ১৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অপরদিকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফে ২৯৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, মেটলাইফে ১৪২ কোটি ৭১ লাখ টাকা, পপুলার লাইফে ১০৫ কোটি ২ লাখ টাকার লাইফ ফান্ড কমেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের জয়েন্ট সেক্রেটারি, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য ও জেনিথ ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী এস এম নুরুজ্জামান বলেন, অনেক কোম্পানি তাদের সংগৃহীত প্রিমিয়ামের পাশাপাশি লাইফ ফান্ড ভেঙেও গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধ করেছে। এ কারণে গেলো বছর লাইফ ফান্ড বৃদ্ধির হার কম দেখাচ্ছে।
তবে কোম্পানিগুলো তাদের লাইফ ফান্ড বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং চলতি বছরে লাইফ ফান্ড বৃদ্ধির এই হার আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন এস এম নুরুজ্জামান।
উল্লেখ্য, দেশের লাইফ বীমা খাতের ২০২৪ সালের অনিরীক্ষিত হিসাবে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোন তথ্য তুলে ধরা হয়নি। এমনকি বীমা কোম্পানিটির নাম-ই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের এই প্রতিবেদনে।