ক্ষুদ্রবীমার অগ্রগতিতে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ

আবদুর রহমান:

এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলে ক্ষুদ্রবীমার অগ্রগতিতে শীর্ষ দশে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বীমার আওতায় আসা মোট জনসংখ্যার দিক দিয়ে এবং দেশের মোট জনসংখ্যার শতাংশ হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। অন্যদিকে ক্ষুদ্রবীমার আওতায় আসা জনসংখ্যার দিক দিয়ে ভারত শীর্ষে অবস্থান করলেও দেশের মোট জনসংখ্যার শতাংশ হিসাবে শীর্ষে অবস্থান করছে ফিলিপাইন। মিউনিখ রি ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চল ভিত্তিক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৯.৪ মিলিয়ন অল্প আয়ের নাগরিক ক্ষুদ্রবীমার আওতায় এসেছে। অর্থাৎ তাদের হিসাব অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ৬.১ শতাংশের ক্ষুদ্রবীমা আছে। প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, নতুন নতুন বীমা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসার অনুমতি দিয়ে বাংলাদেশ তাদের সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্রবীমা খাতকে আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।

এদিকে বাংলাদেশের বীমা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশের ক্ষুদ্রবীমার বাজার ক্রমবর্ধমান থাকলেও ২০১৩ সালের শেষ নাগাদ তা কমতে শুরু করে। ২০১৪ সালে এসে সেই ক্রমহ্রাসমান ধারা আরো গতি পায়। অর্থাৎ ২০১৪ সালে এসে বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার বাজার শোচনীয়ভাবে কমতে থাকে। আর ২০১৫ সালে এসেও সেই ধারায় কোন পরিবর্তন দেখা মেলেনি।

“ল্যান্ডস্ক্যাপ অব মাইক্রোইন্স্যুরেন্স ইন এশিয়া অ্যান্ড ওশেনিয়া- ২০১৩” শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের মধ্যে ক্ষুদ্রবীমার বাজার সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি লাভ করেছে ফিলিপাইনে। ২০১২ সাল নাগাদ দেশটির মোট জনসংখ্যার ২০.৬ শতাংশ ক্ষুদ্রবীমার আওতায় এসেছে। তবে ক্ষুদ্রবীমা গ্রহণকারী জনসংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষ দশে দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। ফিলিপাইনের ১৯.৯ মিলিয়ন মানুষের ক্ষুদ্রবীমা আছে।

জার্মান এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জিআইজেড) এর সহযোগিতায় ২০১৪ সালের ওই প্রতিবেদনে ফিলিপাইনের পরের অবস্থানেই দেখা গেছে থাইল্যান্ডকে। অর্থাৎ এই অঞ্চল দু’টির মধ্যে ক্ষুদ্রবীমার অগ্রগতিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড। দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৩.৯ শতাংশ ক্ষুদ্রবীমার আওতায় এসেছে। তবে ক্ষুদ্রবীমার আওতায় আসা মোট জনসংখ্যার দিক দিয়ে থাইল্যান্ডের অবস্থান বাংলাদেশেরও পরে। অর্থাৎ দেশিটির ৯.৩ মিলিয়ন নাগরিকের ক্ষুদ্রবীমা আছে।

অন্যদিকে ক্ষুদ্রবীমার আওতায় আসা জনসংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে এশিয়ার দেশ ভারত। দেশটির ১১১.১ মিলিয়ন নাগরিকের ক্ষুদ্রবীমা আছে। তবে বিশাল জনগোষ্ঠির এই দেশে সংখ্যাটি মাত্র ৯ শতাংশ নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থাৎ জনসংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থান করলেও শতাংশের হিসাবে শীর্ষ দশে দেশটির অবস্থান তৃতীয়। আর জনসংখার দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। দেশটির ১১.৯ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুদ্রবীমার আওতায় এসেছে।

এছাড়াও এশিয়া ও ওশেনিয়ায় ক্ষুদ্রবীমার উদীয়মান বাজারে অগ্রগতির দিক দিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে মালয়েশিয়া। দেশটির ৩.৭ শতাংশ মানুষের ক্ষুদ্রবীমা আছে। যাদের সংখ্যা ১.১ মিলিয়ন। এর পরের অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। যেখানে ক্ষুদ্রবীমা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৫.৩ মিলিয়ন। তবে এই সংখ্যা দেশটির মোট নাগরিকের ৩ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।

আর মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ বা ০.৩ মিলিয়ন মানুষকে ক্ষুদ্রবীমার আওতায় নিয়ে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে কম্পোডিয়া। এর পরের অবস্থানে রয়েছে পূর্ব তিমুন। দেশটির দেড় শতাংশ মানুষ ক্ষুদ্রবীমার আওতায় রয়েছে। নবম অবস্থানে জর্ডান। দেশটির ১.৪ শতাংশ মানুষ ক্ষুদ্রবীমা গ্রহণ করেছে। আর ১.২ শতাংশ মানুষকে ক্ষুদ্রবীমার আওতায় এনে দশম অবস্থানে রয়েছে নেপাল। দেশটির দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষের ক্ষুদ্রবীমা আছে।