ক্ষুদ্রবীমা সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ: শহিদুল ইসলাম
বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে থাকছে ক্ষুদ্রবীমার ওপর মূখ্য নির্বাহীদের অভিমত। চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) মো. শহিদুল ইসলাম’র এই অভিমত নিয়েছেন আবদুর রহমান। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো:
চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্প হল ক্ষুদ্রবীমা। ক্ষুদ্রবীমা প্রচলনের মাধ্যমে দেশের নিম্নমধ্যম আয়ের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে জীবন বীমার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এতে গ্রাহক ও সমগ্র বীমা শিল্প উভয়েই উপকৃত হয়েছে। তবে শহরের মানুষের আয়ের সীমা যেহেতু তুলনামূলকভাবে বেশি সেহেতু তাদের জন্য ক্ষুদ্রবীমা খুব বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে না। কারণ তাদের পলিসির আকার বড় হয় এবং এই শ্রেণীর গ্রাহক মাসিক পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম প্রদানে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না।
স্বাভাবিক কারণেই ক্ষুদ্রবীমার মূল গ্রাহক হচ্ছেন মফস্বল ও গ্রামীণ অঞ্চলের স্বল্প আয়ের জনগণ। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক, দিনমজুর বা যারা দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে আয় করেন। বর্তমানে এই শ্রেণীর জীবন বীমা গ্রাহকের সংখ্যা আমাদের দেশে কম নয়।
চার্টার্ড লাইফের এই নির্বাহী বলেন, ক্ষুদ্রবীমা সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ। ক্ষুদ্রবীমা পরিচালনা করতে হবে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ব্যবসায়িক মানসে নয়। ক্ষুদ্রবীমাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কমিশন পদ্ধতি বাদ দিয়ে টার্গেট কাম স্যালারি তথা বেতনভুক্ত কর্মীদের দিয়ে এটি পরিচালনা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি থানায় ৩ থেকে ৫ জন কর্মী নিয়োগ করতে হবে। যারা নতুন গ্রাহক সংগ্রহ করবে এবং প্রিমিয়াম সংগ্রহ করবে। এসএসসি বা এইচএসসি পাস এসব কর্মীকে প্রাথমিকভাবে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে। কর্মীদের কাজের অগ্রগতির ভিত্তিতে বেতন বৃদ্ধি ও প্রয়োজনে কেন্দ্রের দিকে পদোন্নতি দেয়া যেতে পারে। এতে করে সরকারের ঘরে ঘরে চাকরির ওয়াদা পূরণ সহজ হবে।
তবে ক্ষুদ্রবীমার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের জমাকৃত সব টাকাই ফেরত দিতে হবে। ব্যবস্থাপনা খরচ বা অন্য কোন নামে তাদের মূল টাকা থেকে কর্তন করা যাবে না। সারেন্ডার ভেল্যু অর্জনের পর ৯০ শতাংশ ঋণ সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো কোম্পানিগুলোকে গ্রাহকের টাকা ফেরত প্রদানের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে ক্ষুদ্রবীমার জন্য আলাদা নিয়ম-নীতি তৈরি করতে হবে। যাতে দরিদ্র গ্রাহকরা তাদের কষ্টের টাকা জমা দিয়ে দুশ্চিন্তায় না থাকে এবং ল্যাপস কমে আসে। আর ক্ষুদ্রবীমার প্রিমিয়াম মাসে ১শ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫শ’ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বীমা অংক ২০ হাজার টাকাই যথেষ্ট।
শহিদুল ইসলাম বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে যখন ক্ষুদ্রবীমা পরিচালনা করা হবে তখন স্বাভাবিকভাবেই কোম্পানিগুলো মুনাফা করতে পারবে না। তাই দেশের জনসাধারণের উন্নয়নে পরিচালিত এই ক্ষুদ্রবীমার সহযোগিতায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রাম বা থানা পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি জরিপ অফিস, ক্লিনিক, পশু হাসপাতাল ইত্যাদিতে বীমা কর্মীদের বসার সুযোগ দেয়া যেতে পারে। যেখানে তারা অফিস হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আইডিআরএ’র মাধ্যমে সরকার এসব সহযোগিতা করতে পারবে। গরীব জনগোষ্ঠীর সহযোগিতা হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বররাও একাজে এগিয়ে আসতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, ক্ষুদ্রবীমাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণ জরুরি। এক্ষেত্রে থানা ভিত্তিতে সকল কোম্পানির ক্ষুদ্রবীমা কর্মীদের একসঙ্গে বছরে দু’/তিনবার বা প্রতিমাসে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে। কোম্পানি ভিত্তিতে আলাদা আলাদা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রয়োজন হবে না। এতে করে প্রশিক্ষণ প্রদান নিশ্চিত হবে এবং কোম্পানিগুলোর ব্যয় কমে আসবে।
শহিদুল ইসলাম জানান, চার্টার্ড লাইফ ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে। এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদে আলোচনাও হয়েছে। কোম্পানির বেশিরভাগ পরিচালক নিজেদের অবস্থান থেকে জনসেবামূলক কাজ করছে, তাই গ্রামঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠির উন্নয়নে ক্ষুদ্রবীমাকেও তারা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শহিদুল ইসলাম জানান, ক্ষুদ্রবীমার ওপর তার কোন একাডেমিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেই। এমনকি এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোন সেমিনার-সম্মেলনেও তার অংশ নেয়ার সুযোগ হয়নি। তবে দীর্ঘ দিন বীমাশিল্পে জড়িত থাকার সুবাদে ক্ষুদ্রবীমার বিষয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠির সহযোগিতায় ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে তার বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান।
প্রকাশের তারিখ- ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬