সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য কর্মী নিয়োগ করতে হবে: এ কে দাস

বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে থাকছে ক্ষুদ্রবীমার ওপর মূখ্য নির্বাহীদের অভিমত। এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে দাস’র এই অভিমত নিয়েছেন আবদুর রহমান। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো:

এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে দাস বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্রবীমার গুরুত্ব অনেক বেশি। এর মাধ্যমে সকল শ্রেণীর মানুষকে বীমার আওতায় আনা যায়। ক্ষুদ্রবীমাকে মানুষ খুব সহজেই গ্রহণ করে। বর্তমান প্রেক্ষিতে ক্ষুদ্রবীমার সর্বনিম্ন প্রিমিয়াম হওয়া উচিত ৫০০ টাকা। তবে ৩০০ টাকাও হতে পারে। জমার পরিমাণ কিছুটা বেশি হলে পলিসি ল্যাপস হওয়ার পরিমাণ অনেকটা কমে আসবে।

এ কে দাস বলেন, ক্ষুদ্রবীমায় সাধারণ গ্রাহকদের প্রবল ইচ্ছা আছে, তবে বিষয়টি নিয়ে তাদের সংশয়ও রয়েছে। ২০১২ সালের আগে ক্ষুদ্রবীমার ওপর ভিত্তি করেই ডেল্টা লাইফসহ অন্যান্য কোম্পানি বেড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্রবীমায় আয় বেশি, খরচ কম। দীর্ঘ দিনের মেয়াদ শেষে গ্রাহকদের ক্ষুদ্রবীমার অর্থ মুনাফাসহ ফেরত দিতে হয়। যা বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য সুবিধার কারণ।

এনআরবি গ্লোবালের এই মূখ্য নির্বাহী বলেন, মাঠকর্মীরা আগের মতো আস্থা নিয়ে কাজ করছে না। এমনিতেই বীমা খাত নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তাছাড়া কাজের সোর্স বৃদ্ধি পাওয়ায় বীমার দিকে আসছে না সাধারণ মানুষ। বিকাশ, ফ্লেক্সিলোড’র মতো স্বল্প বিনিয়োগে ব্যবসা করার সুযোগ থাকায় তারা সেদিকে চলে যাচ্ছে।। ক্ষুদ্রবীমার কর্মী কমে যাওয়ায় গ্রাহক সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, একটা পলিসি সেল হলে এবং সেটা ঠিকমতো চালু থাকলে কর্মীদের বেতন বা কমিশন ঠিক মতো চলে আসবে। এতে কর্মীরা কাজে আগ্রহী হবে। তবে ভেবে-চিন্তে আঞ্চলিক পর্যায়ে তথা ছোট অফিস চালু করতে হবে। একবার কোন অফিস চালু করলে সেটা বন্ধ করা যাবে না। যেকোন অফিস বন্ধ করলে গ্রাহকদের মাঝে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়। গ্রাহকরা আর নতুন পলিসি কিনতে চায় না।

এ কে দাস বলেন, খুব কম সংখ্যক গ্রাহক পূর্ণ মেয়াদে পলিসি চালু রাখে। এ কারণে কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের পূর্ণ মুনাফা দিতে পারছে না। নিয়মের বাইরে গিয়ে তো মুনাফা দিতে পারবে না। তবে গ্রাহকদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকে আরো আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় কোম্পানিতে প্রিমিয়াম সংগ্রহের হিসাব সঠিকভাবে সংরক্ষণ না থাকায় গ্রাহকদের হয়রানিতে পড়তে হয়।

এনআরবি গ্লোবাল লাইফের এই মূখ্য নির্বাহী বলেন, ক্ষুদ্রবীমা গ্রাহকদের ঠিকমতো মুনাফা দিতে হলে ব্যবসা পরিচালনায় প্রযুক্তির সম্মিলন ঘটাতে হবে। ম্যানুয়ালি প্রিমিয়াম জমা না নিয়ে অনলাইন বা ডিজিটালাইজ পদ্ধতিতে জমা নেয়া যেতে পারে। যাতে প্রিমিয়াম জমা ও হিসাব সংরক্ষণে কোন গরমিল না হয়। অনেক সময় দেখা যায়, গ্রাহক ঠিকমতো প্রিমিয়াম জমা দিলেও তা অফিস পর্যন্ত পৌঁছায় না, কর্মীর কাছেই রয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, ক্ষুদ্রবীমার অগ্রগতির জন্য সামাজিকভাবে কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। সময়োপযোগী বীমা পলিসি চালু করতে হবে। এ জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারিভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। সরকারিভাবে বীমা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষের মাঝে ভুল ধারণা দূর হবে এবং বীমার প্রতি সবাই আগ্রহী হবে।

কর্মীদের প্রশিক্ষণের গুরুত্ব উল্লেখ করে এ কে দাস বলেন, প্রশিক্ষণ ছাড়া কর্মীদের যেমন ধরে রাখা যাবে না, তেমনি গ্রাহকদের সংখ্যাও কমতে থাকবে। কারণ, ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেও অনেক গ্রাহক বীমা পলিসি কিনে থাকে। এজন্য প্রতিটি কর্মীকে অন্তত ৩ দিনের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ক্ষুদ্রবীমায় অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বলেন, ক্ষুদ্রবীমার প্রতি গুরুত্ব বাড়ালে সকল শ্রেণীর মানুষকে বীমার আওতায় আনা যাবে। ভালো প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠকর্মীদের ধরে রাখতে পারলে গ্রাহকদের ধরে রাখারও সুযোগ হবে। বাংলাদেশ এই ধারাটা ধরে রাখতে পারছে না। এজন্য শিক্ষিত ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য কর্মীকে ক্ষুদ্রবীমায় নিয়োগ করতে হবে। যারা মাঝ পথে হারিয়ে যাবে না।

ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এনআরবি গ্লোবাল লাইফের তথ্য আদান-প্রদান বা আইডিয়া শেয়ার হয় না বলে জানান কোম্পানিটির মূখ্য নির্বাহী। ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুদ্রবীমার ওপর একাডেমিক কোন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ আছে কিনা কিনা এমন প্রশ্নে না সূচক জবাব দেন এ কে দাস। ক্ষুদ্রবীমার আন্তর্জাতিক সম্মেলন বা সেমিনারেও অংশ নেয়া হয়নি। তবে সন্ধানী লাইফে ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে কাজের সুযোগ হয়েছে বলে জানান তিনি।

ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ভালো পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান মূখ্য নির্বাহী এ কে দাস। প্রকল্পটির সফলতা নিয়েও তিনি আশাবাদী। ক্ষুদ্রবীমা ছাড়া নতুন কোম্পানিগুলো এগিয়ে যাওয়া কঠিন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বলেন, যেসব কোম্পানি এখন এগিয়ে রয়েছে তাদের ভিত্তি দাঁড়িয়েছে এই ক্ষুদ্রবীমার ওপর। ক্ষুদ্রবীমাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

প্রকাশের তারিখ- ২০ নভেম্বর, ২০১৬