২ বছরেও বীমা দাবির টাকা পাননি প্রতিবন্ধী সামসুল
নিজস্ব প্রতিবেদক:
স্বপ্ন সবাই দেখে। এটাই স্বাভাবিক ধারা। এই স্বাভাবিক ধারায় এমন অনেক মুহুর্ত আসে যা বাস্তবতাকেও হার মানায়। স্বপ্ন হয়ে যায় দুঃস্বপ্নের মতো। অনেক স্বপ্ন দেখে সামসুল আলম প্রতিবন্ধী হয়েও তিলে তিলে সঞ্চয় করেছিলেন হাড়ভাঙ্গা কষ্টের উপার্জন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়বেন এমন প্রত্যাশায় বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষুদ্রবীমার ডিপিএস পলিসি কিনেছিলেন। বছরের পর বছর প্রিমিয়াম জমা দিয়ে পূর্ণ করেছেন বীমার সব শর্ত।
যখন সময় আসে তার ঘাম ঝরানো কষ্টে জমানো সেই সঞ্চয়কে কাজে লাগানোর। তখনই তার স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। দিনের পর দিন বীমা কোম্পানির কাছে ধর্না দিয়েও তুলতে পারছেন না দাবির টাকা। হতাশ হয়ে বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন প্রতিবন্ধী সামসুল আলম। দাবি পরিশোধে ব্যবস্থা নিতে তিন দফা আবেদন করেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে। তাতেও হতাশা কাটছে না সামসুল আলমের।
লালমনিরহাটের এক গরীব ঘরের সন্তান এই সামসুল আলম। হাতিবান্ধার নদী ভাঙ্গন কবলিত সেন্দুরনা গ্রামের তার বাস। হাফ সেঞ্চুরি পেরিয়েছে তার বয়স। বিয়ে করেছেন আরো অনেক আগেই। এরইমধ্যে পাঁচ সন্তানের জনকে পরিণত হয়েছেন সামসুল আলম। সন্তানদের সবাই মেয়ে। তাদের মধ্যে দু’জন মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন তিনি। তবে চার মাস আগে বিয়ে হওয়া মেয়ের জামাইকে যৌতুকের টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেননি। এ কারণে দুশ্চিন্তায় সামসুল আলম।
প্রায় ৩২ বছর আগে সামসুল আলমের ডান হাত অকেজো হয়ে পড়ে। ওই হাত দিয়ে তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। বাম হাতে ভর করেই সামসুল আলম তার সাত সদস্যের পরিবারের ব্যয় বহন করে আসছেন। এ অবস্থার মধ্যেই তিনি বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষুদ্রবীমার ডিপিএস পলিসি কিনেছিলেন। ১০ বছর মেয়াদি সামসুল আলমের ওই পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে আরো দু’বছর আগে। তবে এখনো দাবির টাকা পাননি। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ১০০ টাকা কম অর্থাৎ ১২ হাজার টাকার নির্বাহী রশিদ পাঠানো হয় তার কাছে।
ইন্সুরেন্স নিউজ বিডি’কে সামসুল আলম জানান, আমাকে ১০০ টাকা কম দিবে বলে রশিদ দেয়া হয়েছে। অথচ আমি একটি কিস্তিও কম দেইনি। কিন্তু আমি যখন ডিপিএস করি তখন বলা হয়েছিল ১০ বছর পর ২৪ হাজার টাকা দিবে। এখন বীমার টাকার জন্য প্রতিদিনই বায়রা লাইফের মাঠ কর্মীদের কাছে ধর্না দিয়েও টাকা পাচ্ছি না।
সামসুল আরো বলেন, আমার একটি হাত অকেজো কোনো রকমে সংসার চালাই। ২ দোন জমি আছে। সেখানেই টুকটাক আবাদ করি। আমরা নদীর পাড়ের গরিব মানুষ । লাভের আশায় পলিসি করেছি। এখন আসল টাকাই পাচ্ছি না। আমাদের মতো গরিব মানুষের টাকা নিয়ে যারা প্রতারণা করেছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা কার কাছে যাব। বীমা কোম্পানি ২ বছর থেকে ঘুরাচ্ছে । বীমা খাতের সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে এ যাবৎ ৩ বার আবেদন করেছি। সরকারও নিয়ন্ত্রক সংস্থাও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
হাতিবান্দার বায়রা লাইফের মাঠ কর্মীরা জানান, সামসুল আলম একজন প্রতিবন্ধী। আমরা কোম্পানির কাছে বারবার টাকা চেয়েছি। কিন্তু তারা কোনো টাকা দেয়নি। এছাড়া বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকার ১০০ জন গ্রাহক একাধিকবার অভিযোগ করেছেন। তার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
মাঠ কর্মীরা আরো বলেন, আমারা গ্রামের মানুষ। আমরাই বিশ্বাস করে এই এলাকার লোকদের পলিসি করেছি। তাদেরকে আর্থিকভাবে লাভবান করতে পারব- এমন আশা নিয়ে। অথচ আমরা এখন এতো অসহায় একজন প্রতিবন্ধীর পাওনা টাকা ফেরত দিতে পারছি না। আমরা আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ করেছি বলে ঢাকার হেড অফিস আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করে না। আমরা অফিসে গেলেও এমডি চেয়ারম্যানরা দেখা করতে চায় না।
প্রকাশের তারিখ- ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬