বীমা প্রতিনিধিদের আয় নিশ্চিত করতে হবে: হেমায়েত উল্লাহ
বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে থাকছে ক্ষুদ্রবীমার ওপর মূখ্য নির্বাহীদের অভিমত। ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. হেমায়েত উল্লাহ’র এই অভিমত নিয়েছেন আবদুর রহমান। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো:
ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. হেমায়েত উল্লাহ ক্ষুদ্রবীমাকে বাংলাদেশের জন্য জরুরি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশের ক্ষুদ্রবীমার অগ্রগতির জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন বীমা প্রতিনিধিদের আয় নিশ্চিত করা। অর্থাৎ টিকে থাকার জন্য তাদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা। এক্ষেত্রে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। সেটা হতে পারে পরোক্ষভাবে যেমন, ট্যাক্স কমানো।
মূলত ক্ষুদ্রবীমা প্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় আয় না হওয়ায় তারা চাকরি ছেড়ে চলে যায়। অথবা পলিসির টাকা আত্মসাৎ করে ফেলে। তাছাড়া গ্রাহকরা তাদের প্রিমিয়াম স্বেচ্ছায় জমা না দেয়ায় পলিসি তামাদি হয়ে যায়। যার কারণে বীমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে যে, তারা গ্রাহকদের মুনাফা তো দেয়-ই না বরং পলিসির টাকা আত্মসাৎ করে।
হেমায়েত উল্লাহ আরো বলেন, প্রথম দিকে ক্ষুদ্রবীমা থেকে ভালো আয় হওয়ায় কোম্পানিগুলো এ ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখায়। কিন্তু দু’তিন বছর পর যখন প্রতিনিধিদের আয় কমে যাওয়ায় তারা প্রিমিয়াম সংগ্রহে অনাগ্রহ দেখায় এবং পলিসি তামাদি হওয়া শুরু করে তখন কোম্পানিগুলোও ক্ষুদ্রবীমা বন্ধের নির্দেশ দেয়।
ফারইস্ট ইসলামি লাইফের উদাহরণ টেনে হেমায়েত উল্লাহ বলেন, অবস্থা খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় এ কোম্পানির মাইক্রো ইন্স্যুরেন্সকে ম্যাক্রো ইন্স্যুরেন্সে পরিণত করা হয়েছে। অর্থাৎ ক্ষুদ্রবীমা বাদ দেয়া হয়েছে। কারণ, ৫০ বা ১০০ টাকার কিস্তি সংগ্রহের জন্য যে পরিমাণ ব্যয় হয় বাকি টাকা দিয়ে ব্যবসা করে গ্রাহককে মুনাফা দেয়া কঠিন।
তাছাড়া, একজন প্রতিনিধির মাসিক আয় যখন দুই/ আড়াই হাজার টাকায় নেমে আসে তখন তিনি আর গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে চান না। যার ফলে পলিসি তামাদি হতে শুরু করে। আর লাভ না পাওয়ায় গ্রাহকরা কোম্পানির বিরুদ্ধে বদনাম রটাতে থাকে। এ কারণে, বাধ্য হয়েই ক্ষুদ্রবীমা বাদ দিতে হয় কোম্পানিকে।
তবে দেশের উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্রবীমা অতীব জরুরি বলে উল্লেখ করেন ফারইস্ট ইসলামি লাইফের সিইও হেমায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, এ জন্য সরকারের নীতি আরো শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। ক্ষুদ্রবীমার অগ্রগতির জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে ট্যাক্সের বোঝা হল্কা করে দিতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মতো ক্ষুদ্রবীমার জন্য সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। তবেই সম্ভব হবে ক্ষুদ্রবীমার হারিয়ে যাওয়া অতীত ফিরিয়ে আনা।
ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে হেমায়েত উল্লাহ জানান, তিনি দীর্ঘ দিন ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে কাজ করেছেন। তবে এ বিষয়ে তার বিশেষ কোন প্রশিক্ষণ আছে কিনা বা তিনি আন্তর্জাতিক কোন প্রশিক্ষণ কর্মশালা বা অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন কিনা জানতে চাইলে হেমায়েত উল্লাহ না সূচক জবাব দেন। তবে অনুষ্ঠানের নাম না জানাতে পারলেও বোম্বে কোন একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন বলেও জানান হেমায়েত।
আন্তর্জাতিক কোন ক্ষুদ্রবীমা প্রতিষ্ঠান বা এ বিষয় নিয়ে কাজ করে এমন কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফারইস্ট লাইফের কর্তাব্যক্তিদের কোন আলোচনা বা মতবিনিময় হয় কিনা জানতে চাইলে হেমায়েত উল্লাহ বলেন, ক্ষুদ্রবীমা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। তাই এ বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের প্রয়োজন হয় না। এছাড়াও ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কথা জানালে তিনি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে জানেন না বলেও উল্লেখ করেন।
প্রকাশের তারিখ- ১৩ জানুয়ারি, ২০১৬