ক্ষুদ্রবীমায় স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে: সোলায়মান হোসেন
বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে ক্ষুদ্রবীমার ওপর অভিমত দিয়েছেন সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম সোলায়মান হোসেন। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো:
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম সোলায়মান হোসেন এমবিএ বলেন, দেশে ক্ষুদ্রবীমার প্রবক্তা সাফাত আহমেদ চৌধুরী। তিনি একটি উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষুদ্রবীমা চালু করেছিলেন। ক্ষুদ্রবীমা চালুর পিছনে মুনাফা করা মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না। তার উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করা। গ্রামের হতদরিদ্র মানুষটিও যেন বীমার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা পান। এ সময়ে ক্ষুদ্রবীমা পরিচালনা করা হত একটি ব্লক অফিসের মাধ্যমে। প্রতিটি এলাকায় থাকবে একটি ব্লক অফিস। প্রধান কার্যালয় থেকে সরাসরি ব্লক অফিসটি পরিচালিত হতো। এর মাঝে কেউ ছিল না। ব্লক অফিসের কর্মকর্তারা বেতনভুক্ত ছিল। তারা কোনো কমিশন পেত না।
কিন্তু এখন ক্ষুদ্রবীমা পরিচালনা হচ্ছে একক বীমার মতোই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমিশন হারও একক বীমার সমপরিমাণ। ফলে আগে যেমন প্রধান কার্যালয় সরাসরি ব্লক অফিস নিয়ন্ত্রণ করতো এখন তা হচ্ছে না। মাঠ পর্যায়ের অফিস আর প্রধান কার্যালয়ের মাঝে অনেকগুলো স্তর থাকছে। ফলে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এরই বিরুপ প্রভাব পড়েছে ক্ষুদ্রবীমায়। মাঠের অনেক গ্রাহক সময় মতো টাকা পাচ্ছে না। তবে একটি বিষয় ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহকরা মুনাফা চান না সময়মতো টাকা ফেরত পেলেই তারা খুশি। এ অবস্থাটি আগেও ছিল এখনো আছে।
ক্ষুদ্রবীমা ১০০ টাকা প্রিমিয়াম আয়ে ৫০ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। বাকি ৫০ টাকা বিনিয়োগ করে যে মুনাফা আসে তা খুব সামান্য। অন্য আরেকটি দিক হলো ব্যাংক ছাড়া আমাদের বিনিয়োগের কোনো জায়গা নেই। ব্যাংকে যে হারে সুদ দেয় তাতে ৫০ টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষুদ্রবীমার একজন গ্রাহককে আসল টাকাও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
দেশে ক্ষুদ্র বীমার কোনো আইন নেই। সাফাত আহমেদ চৌধুরীও ক্ষুদ্রবীমা সুনির্দিষ্ট কোনো গাইড লাইন করে যাননি। ফলে আইন না থাকায় যে যেভাবে পেরেছে ক্ষুদ্রবীমার পলিসি করেছে, পলিসির শর্ত আরোপ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে একই পরিকল্পে শুধু নামের ভিন্নতা। যার ফলে ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে একটি সংকটজনক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষুদ্রবীমার এ সংকটজনক অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ক্ষুদ্রবীমার নীতিমালা করা। ক্ষুদ্রবীমা সংজ্ঞা নির্ধারণ করা। ক্ষুদ্রবীমা পরিচালনার জন্য কোম্পানিগুলোর জন্য পৃথক সার্ভিস রুলও করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি ক্ষুদ্রবীমার জন্যই পৃথক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যারা ক্ষুদ্রবীমায় কাজ করবে তারা শুধু ক্ষুদ্রবীমা নিয়েই কাজ করবে তারা একক বীমা করতে পারবে না। এসব কিছু নিয়েই নীতিমালা করা উচিত। এটা যতদ্রুত সম্ভব।
আমরা দেখেছি, ক্ষুদ্রবীমার ব্যবসা সংগ্রহে ২টির বেশি স্তর থাকা উচিত নয়। ক্ষুদ্রবীমা ১০০ টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহে কমিশন বাবদ ৩০ টাকার বেশি খরচ করা যায় না। আবার ৩০ টাকা খরচে মাঠকর্মীও পাওয়া যায় না। অন্যদিকে ৫০ টাকা খরচ করা হলে বাকি ৫০ টাকা বিনিয়োগ করে যে মুনাফা পাওয়া যায় তা মেয়াদ শেষে যে টাকা পরিশোধ করতে হয় তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমন একটি অবস্থায় সরকারি ভর্তুকি গ্রাহকের কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয় না।
তবে ক্ষুদ্রবীমায় স্বাস্থ্যসেবাকে অন্তর্ভূক্ত করা হলে তা অধিকতর গ্রাহকবান্ধব হবে। কেননা এর মাধ্যমে অল্প খরচে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে। এক্ষেত্রে সব কোম্পানির জন্য একটি অভিন্ন পরিকল্প করা যেতে পারে। প্রয়োজনে সরকারের কাছ থেকে সাবসিডি নেয়া যেতে পারে। বৈদেশিক সাহায্যও নেয়া যেতে পারে। কোম্পানিগুলোকে পৃথক পৃথকভাবে টার্গেট নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে। ক্ষুদ্রবীমার আওতায় প্রতিটি কোম্পানি কতজন লোককে স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থিক সহায়তা দিবে তাও নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে। মুনাফার চেয়ে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে আর্থিক সহায়তা প্রদানই ক্ষুদ্রবীমা লক্ষ হওয়া উচিত।
দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্রবীমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তা তখনই ভূমিকা রাখতে পারবে যখন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে। সরকার গ্রামীণ ও সামাজিক খাতে বীমা বাধ্যতামূলক করে প্রবিধান করেছে। এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বীমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রকাশের তারিখ- ৩ নভেম্বর, ২০১৬