বীমা শিক্ষায় দেশের ৪ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (পর্ব-১)

বীমা পেশাজীবী তৈরিতে একাডেমি অব লার্নিং

পাপলু রহমান: গুরুত্ব বাড়ছে বীমা শিক্ষার। সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে বীমাখাত। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির ক্ষেত্র যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বীমার প্রয়োজনীয়তা। এই প্রয়োজনীয়তার ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। আর যুগের এই প্রয়োজনে বীমা শিক্ষায় গড়ে উঠেছে চারটি প্রতিষ্ঠান। সব প্রতিষ্ঠানই বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদিত ‍ও স্বীকৃত। এজেন্টদের লাইসেন্স পাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে ৭২ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। এই চারটি প্রতিষ্ঠান ৭২ ঘণ্টার প্রশিক্ষণটি প্রদান করে থাকে।

একাডেমি অব লার্নিং লিমিটেডই সর্ব প্রথম স্ব-উদ্যোগে এজেন্ট প্রশিক্ষণের বাইরে কর্পোরেট সেক্টরে নানা ধরনের প্রশিক্ষণের কোর্স চালু করেছে। বীমা পেশাজীবীদের মান উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যক্রম ও সাফল্য নিয়েই সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন।

আজ থাকছে প্রথম পর্ব- একাডেমি অব লার্নিং। এটিই বীমা শিক্ষায় দেশের প্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

একাডেমি অব লার্নিং লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। এটি বর্তমানে রাজধানীর বাংলা মটরে পদ্মা লাইফ টাওয়ারে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মানের বীমা বিষয়ক ২২টি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বীমা শিক্ষার বাইরে আরও ৩৮টি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। একাডেমি অব লার্নিং প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বীমা বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরী (সিএসপি, সাবেক বাণিজ্য ও স্বাস্থ্য সচিব)।

প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা (সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, মাইক্রো ইন্সুরেন্স মাস্টার এবং অ্যাডভাইজার অব বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশন) বলেন, আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো যারা বীমা পেশাজীবী তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং যারা বেকার ও বীমা পেশায় আসতে চায় তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া।

তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা যে ডিগ্রি অর্জন করছে, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সেটি যথেষ্ঠ নয়। এজন্য তাদের দরকার পেশাগত প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে প্রবেশ করে নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারবে।

এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সারাদেশে ৪৫ হাজারেরও বেশি জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই সকল প্রশিক্ষণার্থীরা দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। একাডেমি অব লার্নিং দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ভেন্যুর সঙ্গে যুক্ত আছে। প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষক রয়েছে। এছাড়া তারা বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা, ফ্রি প্রশিক্ষণ, সাময়িকী ও গবেষণা কার্যক্রমের আয়োজনও করে থাকে।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কোর্স হলো ইন্স্যুরেন্স এজেন্ট ট্রেনিং প্রোগ্রাম, ক্লেইমস ম্যানেজমেন্ট ফর লাইফ অ্যান্ড নন লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গ্রুপ লাইফ ইন্সুরেন্স বিজনেস, রিইন্স্যুরেন্স ম্যানেজম্যান্ট অন নন-লাইফ, স্ট্রেটেজিক প্ল্যানিং, বাজেট প্ল্যানিং অ্যান্ড কন্ট্রোল, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। এসব কোর্স সাধারণত ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে করানো হয়। আর এজন্য কোর্স ফি গুণতে হয় সাধারণত ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা।

একাডেমি অব লার্নিং মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স বিষয়ক দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যৌথভাবে বাংলাদেশে কাজ করার নিমিত্তে ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), জেনেভা এর অধীন ইম্পেক্ট ইন্স্যুরেন্স ফেসিলিটি-এর সাথে অংশীদারিত্বমূলক সমঝোতা স্বারক স্বক্ষর করে। এই নিরীক্ষে অদ্যাবধি ৫টি বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পাদান করা হয় যেখানে বীমা এবং মাইক্রো-ফাইন্যান্স সেক্টর হতে প্রশিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।

এসব ব্যাপারে একাডেমির চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার ও হেড অব একাডেমিক্স মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, বাংলাদেশে বীমাখাত উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এখানে শুধুমাত্র বীমা বিষয়েই প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা দেই না। এর বাইরেও মানবসম্পদ সৃষ্টিতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর কোর্স পরিচালনা করছি। তবে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই বীমা খাতকেই।

একাডেমির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মোকাম্মেল হোসেন আকন্দ বলেন, আমাদের এখানে প্রশিক্ষণের উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা দেশি বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করি। এছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। এমনকী তাদের কর্মসংস্থানের দক্ষতা সৃষ্টি করা হয়। এখানে যে কেউ এসে নিজেকে সম্ভাবনাময় ও দক্ষ করতে পারে।

উল্লেখ্য, বীমাখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘একাডেমি অব লার্নিং’ সপ্তাহিক ম্যাগাজিন “অর্থকণ্ঠ” কর্তৃক “বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড” অর্জন করেছে।

 

আগামী পর্বে থাকছে: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভলপমেন্ট।