বীমা গ্রাহক ও কোম্পানির জন্য পূর্বের পলিসির তথ্য যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

নাদিরা ইসলাম, এমএএস: আমরা সকলেই জানি মৃত্যু নির্ধারিত; কিন্তু কখন, কিভাবে তা আমরা কেউ জানি না এবং এক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করণীয় নেই। আমরা যা পারি তা হচ্ছে, আমাদের জীবনের ওপর যে ঝুঁকি বা অনিশ্চিত ক্ষতি বা দুর্ঘটনার সম্ভবনা রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণ বা স্থানান্তরের মাধ্যমে একটি ঝুঁকিমুক্ত, স্বাচ্ছন্দ্য, সুস্থ, নিরাপদ এবং সুরক্ষিত সুন্দর জীবন গঠন।

কিন্তু কিভাবে সম্ভব?

একমাত্র জীবন বীমার আওতায় খুব সহজেই তা সম্ভব। যদিও মানুষের জীবনের ওপর যে অনিশ্চিত ঝুঁকি- তা অর্থের বিনিময়ে সম্পূর্ণ নিরুপন অসম্ভব।

কিন্তু আমাদের পক্ষে সম্ভাব্য এবং ন্যায়সংগত ঝুঁকির কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা সাপেক্ষে জীবনের এই ঝুঁকি নির্ধারন করে লিখিতভাবে বীমা কোম্পানির কাছে স্থানান্তর করে প্রায় শতভাগ সুরক্ষিত থাকার চেষ্টা করা যায়।

এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি এই আর্থিক সুরক্ষা দিবে প্রিমিয়াম দেয়ার সাপেক্ষে।

কিভাবে বীমা ঝুঁকি বা বীমা অংক নির্ধারণ হয়?

কেউ বীমা করতে চাইলেই-কি সে যেকোন পরিমাণ বীমা অংক নিতে পারবেন? -অবশ্যই পারবেন; যদি তা গ্রাহকের বাৎসরিক আয়ের সাথে সংগতিপূর্ণ হয়।

সাধারণত ঝুঁকির পরিমাণ (বীমা অংক) এবং বীমা গ্রহণ হবে কি হবে না- তা একজন অবলেখক গ্রাহকের বয়স, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি, বাৎসরিক আয়, পারিবারিক ইতিহাস এবং আরো অনেক তথ্য চাহিদা মোতাবেক সরবরাহের মাধ্যমে নির্ধারণ করে থাকেন।

একজন গ্রাহক তার বাৎসরিক আয়ের শতকরা কত গুণ বীমা অংক নিতে পারবেন তা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গাইডলাইন দেয়া আছে। এমনকি বীমাযোগ্য স্বার্থ ব্যতিরেকে কাউকে মনোনীতক (নমিনী) দেয়ার ব্যাপারেও নির্দেশিকা আছে।

একটি বীমা পলিসি ইস্যু বা গ্রহণের ক্ষেত্রে গ্রাহক এবং কোম্পানি উভয়ের জন্য একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ; আর তা হলো ‘পূর্বের পলিসি’।  

পূর্বের পলিসি কি?

পূর্বের পলিসি বলতে আমরা সাধারণত বুঝি- কোন বীমা গ্রাহক (পলিসি গ্রাহক) বর্তমানে কোন পলিসি করতে চাইলে তার পূর্বে যদি কোন পলিসি থেকে থাকে তা প্রস্তাবপত্রে লিখিতভাবে অবগত করা। পূর্বের পলিসিটি অন্য কোম্পানিতেও থাকতে পারে।

পূর্বের পলিসি কেনো এতো গুরুত্বপূর্ণ?

বর্তমানে গ্রাহক যদি কোন পলিসি করতে চায় এবং পূর্বে এই গ্রাহকের আরো পলিসি থাকে এবং এই তথ্যটি সচেতন বা অসচেতনভাবে গোপন রাখে তাহলে সঠিক ঝুঁকি বা বীমা অংক নির্ধারণ সম্ভব নয়।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারিকৃত সার্কুলার নং- ০৪/২০১৭ তে গ্রাহক পরিচিতি ফর্মে এনআইডি, বার্থ সার্টিফিকেট, পাসপোর্টের কপি জমা সাপেক্ষে প্রস্তাবপত্রের সাথে ফর্মটি পূরণ করা বাধ্যতামূলক হলেও অনেক বীমা কোম্পানি এই ব্যাপারে সচেতনতার সাথে বাধ্যতামূলক ডকুমেন্টস জমা না নিয়েই পলিসি ইস্যু করেন। এতে করে গ্রাহকের পুরনো পলিসির তথ্য নতুন পলিসির সাথে লিংক হয় না এবং সঠিক বীমা অংক নির্ধারন করা যায় না।

এমনকি প্রস্তাবপত্রে পূর্বের পলিসি সমন্ধে তথ্য প্রদানের জায়গা থাকলেও সেখানে তথ্য দেয়া হয় না। অনেকসময় এনআইডি, বার্থ সার্টিফিকেট, পাসপোর্টের তথ্য না থাকার কারণে বয়স অপ্রমাণিত থেকে যায়। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে দাবি উত্থাপিত হলে নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি হয়।

এক্ষেত্রে সমস্যা কী?

পূর্বের পলিসির তথ্য না পেলে সঠিক বীমা অংক নির্ধারণ করে পলিসি গ্রহণ করা যায় না। এ ছাড়াও পলিসি লিংক না আসার কারণে সমষ্টিগতভাবে বীমা অংক পুনর্বীমায় যাওয়ার পলিসি হলেও পুনর্বীমা কোম্পানিকে সঠিক বীমা অংক পাঠানো যায় না। এক্ষেত্রে মৃত্যুদাবি হলে সম্পূর্ণ দায়ভার বীমা কোম্পানিকে নিতে হয়।

সমস্যার সমাধানকরণী কী?

সচেতনতা, সচেতনতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি, বীমা গ্রাহক এবং বীমা অবলেখক দু’জনেরই।

এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি এনআইডি, বার্থ সার্টিফিকেট, পাসপোর্টের কপি যা বাধ্যতামূলক- এর যেকোন একটি তথ্য ছাড়া পলিসি গ্রহণ না করা। গ্রাহকের কাছ থেকে সঠিক তথ্য নেয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকা এবং গ্রাহককে তথ্য না দিলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে তা অবগত করা।

বীমা গ্রাহক যদি পূর্বের পলিসির তথ্য পরের পলিসির প্রস্তাবপত্রে সঠিকভাবে পূরণ করে তাহলে অবলেখক খুব সহজেই পূর্বের এবং পরের পলিসির তথ্য লিংক করে সঠিক বীমা অংক নির্ধারণ করতে পারবে এবং তাতে করে সুন্দর, সুস্থ এবং মানসম্মত গ্রহণযোগ্য পলিসি হবে।

লেখক: ডেপুটি ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব একচ্যুয়ারিয়াল ডিপার্টমেন্ট, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।