অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কিত ক্ষতি ও সার্ভেয়ারের দায়িত্ব

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: অগ্নি বীমার প্রচলন অনেক দিনের। এটি সম্পত্তি বীমার অন্তর্ভুক্ত। এই বীমা মাধ্যমে আগুনের কারণে সম্পত্তির ক্ষতি আবরিত করা হয়।

সার্ভে বা ক্ষতি নিরূপন একটি অত্যন্ত জটিল এবং বিশেষায়িত কাজ। এর জন্য প্রয়োজন পেশাগত শিক্ষা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ।

সার্ভেয়ারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে:

ক) পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ক্ষতির অনুসন্ধান বা পরীক্ষা।

খ) ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ।

ক্ষতি অনুসন্ধান বা পরীক্ষা

ক্ষতি অনুসন্ধান বা পরীক্ষা করতে গিয়ে কতিপয় বিষয় বিশেষভাবে দেখা প্রয়োজন।  যেমন-

১) অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ।

২) বীমা গ্রাহক বা তার কর্মচারীর ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগের সম্ভাবনা (যা বীমা পলিসি বহির্ভূত) ।

৩) অগ্নিকাণ্ডের সময় বীমা পলিসি বহাল ছিল কিনা।

৪) তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে কোটি টাকা উদ্ধারের সম্ভাবনা।

৫) পলিসির শর্ত, বিশেষ শর্ত পালন করা হয়েছে কিনা।

৬) পলিসিতে বর্ণিত সম্পত্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তি একই কিনা।

৭) পলিসিতে বর্ণিত ঝুঁকির ঠিকানা এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্থানের ঠিকানা একই কিনা।

৮) কন্ট্রিবিউশনের সম্ভাবনা (এক সম্পত্তিতে একাধিক বীমার বেলায় প্রযোজ্য)।

ক্ষতি নিরূপ

ক্ষতি নিরূপণের বেলায় যে সমস্ত বিষয় গুরুত্বের সাথে দেখা প্রয়োজন:

১) আন্ডার ইন্স্যুরেন্স বা ওভার ইন্স্যুরেন্সের সম্ভাবনা।

২) স্যালভেজ ডিসপোজাল

৩) বীমা পলিসিতে অলিখিত কারণসমূহ সম্পত্তির ক্ষতির জন্য দায়ী কি না।

যেমন-

ক) দমকল বাহিনী কর্তৃক আগুন নিভানোর সময় পানি দ্বারা সম্পত্তির ক্ষতি।

খ) অগ্নিকাণ্ডে সৃষ্ট ধোঁয়ার দ্বারা সম্পত্তির ক্ষতি

গ) দমকল বাহিনীর অগ্নিস্থলে পৌছানোর সময় সম্পত্তি যেমন- প্রাচীর, গেট ইত্যাদির ক্ষতি।

কাজের শুরুতে সার্ভেয়ারের কতিপয় প্রয়োজনীয় দলিল-দস্তাবেজ সংগ্রহ করতে হয়  যেমন-

১) সম্পূর্ণকৃত ক্লেইম ফর্ম এবং

২) বীমা পলিসি কপি।

সার্ভে প্রতিবেদনে যে সমস্ত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক:

১) পলিসি নাম্বার।

২) বীমা মেয়াদ।

৩) বীমাকৃত টাকার পরিমাণ।

৪) অগ্নিকাণ্ডের তারিখ ও সময়।

৫) অগ্নিকাণ্ডের কারণ।

৬) ক্ষতির ছবি ইত্যাদি।

দাবি নিষ্পত্তির বেলায় প্রয়োজনীয় দলিল-দস্তাবেজ:

১) দমকল বাহিনীর রিপোর্ট।

২) ক্রয় সংক্রান্ত সকল তথ্য-প্রমাণাদি (স্থানীয় এবং বিদেশ থেকে ক্রয়কৃত মালামাল)।

৩) বিক্রয় সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র বা প্রমাণাদি।

৪) স্টক রেকর্ড।

৫) অডিট রিপোর্ট।

৬) প্রি-ইন্সপেকশন রিপোর্ট।

৭) ফরেনসিক রিপোর্ট (যেখানে প্রযোজ্য) ইত্যাদি।

ক্ষতির অনুসন্ধান এবং এর পরিমাণ নিরূপণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দাবি নিষ্পত্তির বেলায় সার্ভেয়ারের প্রতিবেদন আইনগত দিক থেকে বৈধ দলিল হিসেবে বিবেচিত।

বীমাকারী এবং বীমা গ্রাহক কারো স্বার্থ যাতে ক্ষুন্ন না হয় সে ব্যাপারে সার্ভেয়ারকে অত্যন্ত যত্নবান এবং সতর্ক হতে হবে।

সার্ভেয়ারকে বাহিরের কোন প্রকার চাপ বা প্রভাব ছাড়া স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য নিষ্ঠার সহিত যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে সার্ভেয়ারের কোন প্রকার আপোষ বা সমঝোতার সুযোগ নেই।