বর্তমান স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজনীয়তা
এ কে এম এহসানুল হক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।
এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।
ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক। আজ থাকছে তার লেখা "বর্তমান স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজনীয়তা"।
কথায় বলে “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল”। কথাটা অমূলক নয়। স্বাস্থ্যহীন লোকের নিকট জীবন এক প্রকার অর্থহীন। স্বাস্থ্য সকলের জন্মগত অধিকার। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য উন্নয়ন ছাড়া জাতীয় স্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেক লোক দারিদ্রতায় ভুগছে। গরীব ও সাধারণ মানুষের পক্ষে বেসরকারী পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ এক প্রকার বিলাসিতার সমান। জনস্বার্থে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যবীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবীমা বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক করা না হলে সাধারণ মানুষ সত্যিকার অর্থে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। স্বাস্থ্য সেবার মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা গণমুখী করে তোলার ব্যাপারে সরকারকে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে সরকারের করণীয়:
১. জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালার পূর্ণমূল্যায়ন এবং পুর্নবিন্যাস।
২. স্বাস্থ্যবীমা বাধ্যতামূলকভাবে চালু করা।
৩. স্বাস্থ্য খাতে অধিক টাকা বরাদ্দ (যা বর্তমানে জাতীয় বাজেটের শতকরা পাঁচ শতাংশের চেয়ে কম) ।
৪. জেলা পর্যায়ে অধিক সরকারী হাসপাতাল এবং ক্লিনিক স্থাপন।
৫. গ্রাম-গঞ্জে আরও অধিক সংখ্যক কমিউনিটি ক্লিনিক বা সেন্টার স্থাপন।
৬. প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ক্লিনিক পরিচালনার ব্যাপারে কঠোর নীতিমালার প্রণয়ন এবং তার সুষ্ঠ প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন।
৭. জেলা পর্যায়ে নার্স বা প্যারামেডিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা এবং
৮. ঔষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা সমূহের কার্যবিধি নিয়ন্ত্রণ (বিশেষ করে ঔষুধের গুণগত মান এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সতর্ক থাকা) ।
বেসরকারী পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থার করণীয়:
সরকারী পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার অপর্যাপ্ততা, অনিয়ম ইত্যাদি কারণে দেশের সর্বত্র বেসরকারী পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা দিন দিন ব্যাঙের ছাতার মত গজাচ্ছে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও সাধারণ মানুষ সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।
১. অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের চিন্তা বাদ দিয়ে সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা।
২. সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সেবার মূল্য সহনীয় করে তোলা।
৩. দুঃস্থ্য এবং অতি গরীব মানুষের জন্য বিনামূল্যে বা নিম্নমূল্যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা।
৪. সেবার মান উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ।
৫. স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে বিরাজমান সকল প্রকার অনিয়ম বন্ধ করা।
৬. মুনাফার একটি অংশ মেডিকেল রিসার্চ কাজে ব্যয় করা।
৭. স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নের ব্যাপারে সরকারের সাথে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান।
আমাদের করণীয়:
আমরা যারা বিত্তশালী এ ব্যাপারে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের সাহায্যের দিকে গরীব দুঃস্থ মানুষগুলো অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে। মানবতার কথা চিন্তা করে আমরা তাদের নিরাশ করতে পারি না। এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে হবে। একথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা যারা সৌভাগ্যবান সমাজের অন্যদের চেয়ে আমাদের দায়িত্ব অধিক। কবির ভাষায় “আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবণী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে”।
১. নিজ নিজ এলাকা বা গ্রামে দাতব্য চিকিৎসালয় যেমন ডিসপেনসারী/ক্লিনিক স্থাপন।
২. প্রয়োজনে যাকাত ফান্ড সৃষ্টির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা।
৩. বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা যেমন লায়ন্স ক্লাব, রোটারী ক্লাব ইত্যাদির সাহায্য গ্রহণ।
৪. সমাজের বিত্তশালী এবং আত্মীয় স্বজনকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা।
পরিশেষে বলতে হয়, “সেবাই পরম ধর্ম” এই মানসিকতা নিয়ে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নানা রকম অনিয়ম, অরাজকতা ইত্যাদি দূর করতে হবে। কঠোর আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগের মাধ্যমে বর্তমান নৈরাজ্যজনক অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে বলিষ্ঠ এবং সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।