লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স বা দায় বীমা: পাঠ প্রতিক্রিয়া

তারিকুর রহমান: লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স বা দায় বীমা শিরোনামে প্রকাশিত এ কে এম এহসানুল হক'র লেখাটি সম্পর্কে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর তারিকুর রহমান'র পাঠ প্রতিক্রিয়া

শ্রদ্ধেয় এ কে এম এহসানুল হক সাহেবের লেখাটা আমি পড়েছি। উনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। লেখাটা পাঠকদের উপকারে আসবে বলে আশা করছি। উনার লেখার সাথে আমি কিছু যোগ করছি এবং আশা করছি এতে করে পাঠকদের আরও বুঝতে সুবিধা হবে।
‘লায়াবিলিটি’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল ‘দায়িত্ব'। আইন দ্বারা যে সকল দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতাকে কার্যকারী করা হয় তাকে ‘লিগ্যাল লায়াবিলিটি' বলে। সাধারণত ‘লিগ্যাল লায়াবিলিটি'র ক্ষতিপূরণ আদালত কর্তৃক নির্ধারিত হয়। তবে যে ‘লিগ্যাল লায়াবিলিটি' অপরাধমূলক কাজ করার জন্য সৃষ্টি হয় না তা আদালতের বাহিরে পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতেও নিস্পত্তি হতে দেখা যায়।

লিগ্যাল লায়াবিলিটিগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:

ক) ক্রিমিনাল লায়াবিলিটি: কোন অপরাধমূলক কাজ করার জন্য বা আইন ভঙ্গ করার জন্য যে লায়াবিলিটি সৃষ্টি হয় তাকে ক্রিমিনাল লায়াবিলিটি হিসেবে ধরা হয়। এই অপরাধ করার জন্য সরকার দায়ী ব্যক্তিকে কারাবাস দিতে বা জরিমানা করতে পারেন।
খ) সিভিল লায়াবিলিটি: প্রথম পক্ষের অসর্তকতা বা অসাবধানতার কারণে যদি তৃতীয় পক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে তৃতীয় পক্ষ আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। 
সিভিল লায়াবিলিটির ক্ষতিপূরণ কভার করার জন্য বীমা পলিসি পাওয়া যায়। কিন্তু অপরাধমূলক কাজের জন্য সৃষ্ট ক্রিমিনাল লায়াবিলিটির ঝুঁকি বীমা করা যায় না।

নিম্মোক্ত উৎস থেকে উদ্ভূত লায়াবিলিটিগুলো বিভিন্ন বীমা পলিসির আওতায় কাভার করা যায়:

ক) সাধারণ আইন বা টর্ট আইন দ্বারা সৃষ্ট লায়াবিলিসমূহ: এই আইনে প্রথম পক্ষের অসর্তকতা বা অসাবধানতা বা অনধিকার প্রবেশের কারণে তৃতীয় পক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হলে ক্ষতিগ্রস্থ তৃতীয় পক্ষ আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পেতে পারে।
যেমন: অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করার সময় একজন চিকিৎসকের অসাবধানতার জন্য একব্যক্তি মারা গেলেন। মৃত ব্যক্তির পরিবার আদালতে এ জন্য মামলা দায়ের করল। চিকিৎসক তার এই অসাবধানতার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে আইনগতভাবে দায়ী। চিকিৎসককে এই মামলা চালাবার জন্যও প্রচুর ব্যয় করতে হবে। এটি একটি সিভিল লায়াবিলিটি এবং চিকিৎসক চাইলে এই ধরণের লায়াবিলিটির ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রফেশনাল লায়াবিলিটি বীমা নিতে পারেন।

বাংলাদেশের পেক্ষাপটে সাধারণ আইন বা টর্ট আইন এর জন্য নিম্মলিখিত লায়াবিলিটি বীমা পাওয়া যায়:
১। পাবলিক লায়াবিলিটি বীমা,
২। থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি বীমা,
৩। প্রফেশনাল লায়াবিলিটি বীমা,
৪। প্রোডাক্ট লায়াবিলিটি বীমা,
৫। পার্সোনাল লায়াবিলিটি বীমা,
৬। এরর ও ওমিশান লায়াবিলিটি বীমা,
৭। কমপ্রিহেনসিভ লায়াবিলিটি বীমা,
৮। কমার্শিয়াল লায়াবিলিটি বীমা।

খ) বিধিবদ্ধ আইন: সংসদ কর্তৃক পাশকৃত আইনের অধীনে সিভিল লায়াবিলিটি সৃষ্টি হতে পারে।
যেমন: মোটরযান আইনে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তায় মোটরযান চালাতে হলে Motor Act Liability বীমা করতে হয়।

বাংলাদেশের পেক্ষাপটে বিধিবদ্ধ আইনের জন্য নিম্মলিখিত লায়াবিলিটি বীমা পাওয়া যায়:
১। মোটরযান লায়াবিলিটি বীমা,
২। শ্রমিক ক্ষতিপূরণ বীমা,
৩। জাহাজের লায়াবিলিটি বীমা,
৪। উড়োজাহাজের লায়াবিলিটি বীমা

গ) চুক্তি লঙ্ঘন ( ইচ্ছাকৃত নয়): আইন দ্বারা কার্যকর কোন চুক্তি লঙ্ঘনের কারণে এই লায়াবিলিটির সৃষ্টি হয়।
যেমন: একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যদি চু্ক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে কোন বিল্ডিং তার মালিককে সম্পূর্ণ করে বুঝিয়ে দিতে না পারে তবে তার লায়াবিলিটি সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশের পেক্ষাপটে অনিচ্ছাকৃত চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য নিম্মলিখিত লায়াবিলিটি বীমা পাওয়া যায়:
১। প্রফেশনাল লায়াবিলিটি বীমা,
২। এমপ্লয়ার লায়াবিলিটি বীমা,
৩। ডাইরেক্টর ও অফিসার্স লায়াবিলিটি বীমা।