মোটরগাড়ি বীমা এবং কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন
এ কে এম এহসানুল হক:
বাধ্যতামূলক মোটরগাড়ি বীমার অতীত ইতিহাস: ১৮৯৪ সালে প্রথম বৃটেনের রাস্তায় মোটরগাড়ির আর্বিভাব ঘটে। ১৮৯৮ সালে ল' এক্সিডেন্ট এবং ইন্স্যুরেন্স সোসাইটি লিমিটেড প্রথম মোটরগাড়ি বীমা চালু করে। বৃহত্তর জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে ১৯৩০ সালে রোড ট্রাফিক এ্যাক্ট জারি করা হয়। যার মাধ্যমে তৃতীয়পক্ষ (মৃত্যুজনিত দায়) বাধ্যতামূলক করা হয়।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে ভেহিকেলস অর্ডিনেন্স এ্যাক্টের মাধ্যমে তৃতীয়পক্ষের মৃত্যুর দায় সম্বলিত গাড়ি বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়। যা ১৯৩০ সালে জারিকৃত রোড ট্রাফিক এ্যাক্টের সমকক্ষ।
কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন: এ প্রসঙ্গে দু'টি ব্যাপার বিশেষভাবে আলোচনার দাবি রাখে।
প্রথমত: এ্যাক্ট পলিসি কেবলমাত্র দুর্ঘটনাজনিত কারণে তৃতীয়পক্ষের মৃত্যুর দায় বহন করে, সম্পত্তির ক্ষতির দায় বহন করে না। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, দৈনন্দিন মোটরগাড়ি দুর্ঘটনায় তৃতীয়পক্ষের সম্পত্তির ক্ষতির হার তুলনামূলকভাবে মৃত্যুহারের চেয়ে অনেক বেশি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে “তৃতীয়পক্ষ” মোটর বীমার প্রচলন রয়েছে।
এই বীমার মাধ্যমে তৃতীয়পক্ষের মৃত্যু এবং সম্পত্তির ক্ষতি উভয়ই পূরণ করা হয়। অতিরিক্ত প্রিমিয়াম আদায় সাপেক্ষে বীমা কোম্পানি এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। যা নিঃসন্দেহে বীমা গ্রহীতার জন্য উপকারী হবে এই কারণে যে, তৃতীয়পক্ষের সম্পত্তির ক্ষতির জন্য বীমা গ্রহীতাকে নিজের পকেট থেকে টাকা ভরতে হবে না।
দ্বিতীয়ত: ১৯৭৩ সালে জারিকৃত বাংলাদেশ ভেহিকেলস অর্ডিনেন্স এ্যাক্ট অনুযায়ী তৃতীয়পক্ষের মৃত্যুর দায়ের টাকার পরিমাণ ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা ধার্য্য করা হয়েছে। যা দেশের বর্তমান সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে একেবারেই অপর্যাপ্ত বা অপ্রতুল।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং জীবন যাত্রার মান ইত্যাদির দিকে দৃষ্টি রেখে তৃতীয়পক্ষের মৃত্যুর দায়ের ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ সময়ে সময়ে নিরীক্ষণ এবং প্রয়োজনে বৃদ্ধির ব্যবস্থা রয়েছে।
একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে এ ব্যাপারটি পরিস্কার করা যেতে পারে। দৃষ্টান্তসরূপ সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কথা ধরা যাক। ১৯৮০ সালে 'দিয়া' বা 'ব্লাড' মানি (তৃতীয়পক্ষের মৃত্যুর দায়ের টাকার পরিমাণ) ছিল ৫০,০০০ দেরহাম (বর্তমানে এক দেড়হাম সমান বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২৪ টাকা)।
গত চার দশকে এর মূল্য ক্রমান্বয়ে বর্ধিতকরণ করা হয়েছে। যার বর্তমান মূল্য গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১,৫০,০০০ দেড়হামে। অর্থাৎ ১৯৮০ সালের তুলনায় প্রায় ৩শ' ভাগ বৃদ্ধি। দুঃখজনকভাবে প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশে তৃতীয়পক্ষ মৃত্যুর দায়ের টাকার পরিমাণের কোনই পরিবর্তন হয়নি।
বীমা কৃর্তপক্ষের এ ব্যাপারটি বিষদ এবং গভীরভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বর্তমান টাকার পরিমাণ অবশ্যই উর্ধ্বমুখী পুনর্মূল্যায়নের যৌক্তিকতা বা দাবীর যোগ্যতা রাখে।
লেখক: এ কে এম এহসানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।
এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।
ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক।