প্রসঙ্গ বীমা শিল্পে সরকারী প্রণোদনা
মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ: একদা মুসা আলাহে ওয়াসাল্লাম আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহ তা'আলা আপনি যখন কোন কওমের উপর গজব নাযিল করেন তখন ভালো-মন্দ সকলকেই কেন ক্ষতিগ্রস্থ করেন? যারা অন্যায় করেছে তাদের শাস্তি দেন তা মেনে নেয়া যায় কিন্তু যারা অন্যায় করেনি কেন তাদের শাস্তি দিবেন।
এমন সময় মুসা আলাহে ওয়াসাল্লাম যে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই পাথর থেকে এক বিষাক্ত পিঁপড়া তার পায়ে কামড় দেয়। মুসা আলাহে ওয়াসাল্লাম দেখেন সাড়ি সাড়ি পিঁপড়া লাইন ধরে আছে তিনি সবগুলো পিঁপড়াকে পা দিয়ে পিষে ফেললেন। তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বললেন, হে মুসা আমি আর তোমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি না বুঝতে পেরেছো নিশ্চয়। মুসা আলাহে ওয়াসাল্লাম বললেন আমি কিছুই বুঝিনি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বললেন, কয়টি পিঁপড়া তোমাকে কামড় দিয়েছিল? মুসা আলাহে ওয়াসাল্লাম বললেন, একটি। আল্লাহ তা'আলা বললেন, তাহলে তুমি কেন সব পিঁপড়া মেরে ফেললে? তোমার কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে যে, যে অন্যায় করেছে তাকে অন্যায় থেকে ফিরিয়ে আনা, অন্যদের তা করা থেকে বিরত রাখা উচিত। কিন্তু কার্যত তা করা সম্ভব হয় না, বেছে বেছে মন্দ লোক নির্ণয় করা কষ্ট তাই কওমের উপর ব্যবস্থা নিতে হয়। নিজে অন্যায় করা বা অন্যকে অন্যায় করতে সাহায্য করা একই অপরাধ।
আল্লাহ তা'আলার এই শিক্ষা থেকে বুঝা যায় যে, করোনা তেমনি এক ধরনের মহামারী যা থেকে বুঝা যায় যে ভালো-মন্দ সব ধরনের মানব সন্তানই আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে নিশ্চয় ভালো মানুষের উত্তম জাজা আল্লাহ তা'আলা নিজ হাতে দিবেন।
করোনার অত্যাচারে সারা দুনিয়া কম্পমান। কোথায় এর উৎপত্তি বা কিভাবে এর উৎপত্তি আর এর শেষ কোথায় তা কিন্তু নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তবে মহামারী যেমন আছে তেমনি আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানে তার সমাধানও হবে। কোন দেশ হয়তো সমাধান জানে কিন্তু নিজের বড়ত্ব জাহিরের অপেক্ষায় আছে।
করোনা এমন এক মহামারী যা ভিসা পাসপোর্ট টিকিট পরিবহন ছাড়া পৃথিবীর সকল প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর প্রভাবে ২০ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত ব্যক্তিদের আল্লাহ উত্তম জাজা দিন ।
করোনার প্রভাবে শুধু প্রাণহানি নয় বহু দেশ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে এমনকি দুর্ভিক্ষের মুখোমুখিও হতে পারে। তাই সকল দেশের সরকারই তার জনগণকে প্রটেকশন দিতে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছেন যেন বাড়ির ভিতর থেকে করোনার মোকাবিলা করতে পারে।
আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশের জনগণের ঘরের ভিতরে আরাম আয়েশে বসে থাকার ফুসরত কোথায়? চোখ খুললেই ক্ষুধা তাড়িয়ে বেড়ায়, পেট চোঁ চোঁ করে, প্রতিদিনের ক্ষুধা কি সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে চলে? চাই কাজ কিন্তু কে কাকে কাজ দিবে। এই ছোঁয়াচে রোগ থেকে যে সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। হাত ধুতে ধুতে পকেটের পয়সা আর ওয়াসার পানিও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আমাদের বর্তমান জনগণের সরকার তার সাধ্যমতো সব সেক্টরে প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু যে সেক্টর থেকে সরকার ভ্যাট, বীমা স্ট্যাম্প ও আয়কর হিসেবে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছেন, যে সেক্টরে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ লোক কর্মরত, প্রায় ২ মাস যাবৎ যে সেক্টরের কর্মকর্তা তাদের কর্মস্থলে যেতে পারছেন না, প্রায় ৭ লক্ষ বীমা এজেন্ট বীমা গ্রহীতাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন তারা বাঁচবেন কিভাবে? তা জনগণের সরকারকে ভেবে দেখতে হবে।
বীমা করলে যে কমিশন পাওয়া যায় তা দিয়েই সাত লক্ষ বীমা এজেন্ট তাদের সংসার নির্বাহ করে থাকেন। আমরা বলে থাকি বীমা হল কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী। যেখানে কাজই নেই সেখানে খাদ্য খাবে কখন। একজন এজেন্টের সংসারে যদি চারজন সদস্য ও থেকে থাকে সে হিসেবে আটাশ লক্ষ লোক অনাহারে অর্ধহারে জীবন যাপন করছেন। জনগণের নির্বাচিত সরকারকে বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।
যারা উচ্চবিত্ত তারা হয়তো তাদের জমানো টাকা তুলে খাবেন। যারা নিম্নবিত্ত তারা বিভিন্ন লোকের দয়া-দাক্ষিণা, সরকারী অনুদান, দান-খয়রাত খেয়ে বেঁচে যাবে। কিন্তু এই মধ্যবিত্ত গোষ্ঠী না পারবে হাত পাততে, না পারবে সাহায্য খেতে। তাই সময় এসেছে এদের বিষয়ে ভাববার। সকল বীমা কোম্পানির পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওদের এগিয়ে আসতে হবে, লক্ষ লক্ষ বীমাকারীদের পাশে দাঁড়ানোর এখনই উত্তম সময়। এই কর্মীদের ঘামেই আমাদের বিরাট বিরাট প্রাসাদ গড়ে উঠেছে, এটা ভুলে গেলে চলবে না। এবার আমাদের মানবতা দেখাতে হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বীমা পরিবারের সদস্য, বীমা কর্মীদের দুঃখ-দুর্দশা আপনার না জানার কথা নয়। মাননীয় অর্থমন্ত্রী, মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী, মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সকলেই বীমা কোম্পানির মালিক তাছাড়া প্রায় ১২-১৪ জন প্রতিনিধি রয়েছেন যারা বীমার সাথে জড়িত। হাত কর জোড়ে আমরা বীমা কর্মীরা আপনাদের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা চাই। এই দুর্দিনে আমাদের পাশে থেকে আমাদের সাহায্য করুন। আপনাদের এই সাহায্যই বীমা শিল্প নতুনভাবে বিনির্মিত হবে ইনশাআল্লাহ।
লেখক: মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্সুরেন্স কোম্পানি।