স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বীমা

এস এম জিয়াউল হক, এফএলএমআই: এই বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা অতীতের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিগত খরচের মাত্রা যেন আকাশচুম্বী।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এবং ব্যয়বহুল খরচ কমাতে এবং আর্থিক সুবিধা পেতে স্বাস্থ্য বীমা একটি ঢাল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বীমা উদীয়মান অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিগত খরচের হিসাব বলছে, স্বাস্থ্য সেবায় প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যয় হয় ব্যক্তির নিজস্ব পকেট থেকে; যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি।

এভাবে পৃথিবীতে স্বাস্থ্য সেবা খরচের ধাক্কায় প্রায় ১০ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বীমা পলিসির প্রচলন না থাকলেও গ্রুপ স্বাস্থ্য এবং জীবন বীমা পলিসি আছে। যদিও এই বীমা পলিসির সুবিধা প্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা খুব কম।

বাংলাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য বীমা পলিসির মধ্যে রয়েছে- হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসি, হাসপাতাল ক্যাশ পলিসি এবং দুরারোগ্য ব্যাধির পলিসি।

ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতের কয়েকটি বীমা কোম্পানি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রামীণ ব্যাংক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ কয়েকটি কমিউনিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

বর্তমান চিকিৎসা ব্যয় পদ্ধতি এবং অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে প্রায় ক্ষেত্রেই চিকিৎসা সেবা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অপরপক্ষে সেবা গ্রহণে অনিশ্চয়তা, নেতিবাচকতা, অনাস্থা ইত্যাদি কারণে সাধারণ জনগণের সাথে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত আর্থিক সহযোগিতা প্রদানকারী সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে ।

এর প্রেক্ষিতে যদিও সরকার সর্বস্তরের মানুষ বিশেষ করে যারা প্রান্তিক পর্যায়ের; যারা চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে আছে তাদের জন্য ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচী’সহ কিছু বিশেষ স্বাস্থ্য সেবার আয়োজন করেছে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় খরচ কমাতে (হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্স স্ট্র্যাটেজি) এর ২০ বছর মেয়াদী বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান আছে।

ইতোমধ্যে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার কর্তৃক প্রিমিয়াম প্রদানের কর্মসূচি ক্রমান্বয়ে জেলা, উপজেলা ও থানাসমূহে শুরু হয়েছে।

এরই মধ্যে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো গার্মেন্টস কর্মীদের স্বাস্থ্য সেবায় আর্থিক ঝুঁকি কমাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

যেহেতু এই কর্মসূচি সমগ্র বাংলাদেশে পুরোপুরিভাবে শুরু হয়নি; তাই সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বীমা কোম্পানি দেশের সকল জনগণকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বলয়ে কাজ করতে দেশের সুশীল সমাজ আহবান জানিয়েছেন।

বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো গার্মেন্টস কর্মীদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে কিছু প্রকল্প চালু করেছে।

অর্থাৎ আর্থিক সক্ষমতায় যারা পিছিয়ে তাদের জন্য সরকার প্রিমিয়াম দেবে এবং যাদের সক্ষমতা আছে তারা বীমা পলিসির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে পারবে।

সুতরাং সবার জন্য স্বাস্থ্য বীমা যদি বাধ্যতামূলক করা হয় তাহলে দেশের জনগণের সুস্থ স্বাভাবিক জীবন এবং স্বাস্থ্য খাতের টেকসই উন্নয়ন দুটোই সম্ভব।

লেখক: মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।