ব্যবসায়িক বীমা: ঝুঁকিপূর্ণ সময়েও প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার নিশ্চয়তা
রাজ কিরণ দাস: অগ্নিকাণ্ড, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সাইবার হামলা কিংবা হঠাৎ মামলা— এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি যে কোনো ব্যবসাকে মুহূর্তেই বিপর্যস্ত করতে পারে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) জন্য এসব ঝুঁকি বড় ধরনের আর্থিক চাপ তৈরি করে। এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়িক বীমা এখন আর অতিরিক্ত খরচ নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার অপরিহার্য নিরাপত্তা ঢাল।
যেভাবে কাজ করে ব্যবসায়িক বীমা
ব্যবসায়িক বীমা মূলত বীমা প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তার মধ্যে একটি লিখিত চুক্তি। এতে কোন ঝুঁকি কাভার হবে, ক্ষতিপূরণের নিয়ম, প্রিমিয়াম হার ও শর্তাবলি উল্লেখ করা থাকে। কোনো অঘটন ঘটলে বীমাগ্রহীতা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দাবি জানায়, যা যাচাই শেষে বীমা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। ফলে আকস্মিক আর্থিক ধাক্কা সামাল দেওয়া অনেক সহজ হয়।
যে কারণে ব্যবসায়িক বীমা জরুরি
- আইনি সুরক্ষা: গ্রাহক বা অংশীদারের মামলা ছোট ব্যবসাকে ভয়াবহ সংকটে ফেলে দিতে পারে। বীমা থাকলে আইনজীবী ফি ও ক্ষতিপূরণের চাপ হ্রাস পায়।
- আর্থিক স্বার্থ রক্ষা: বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান নিজস্ব তহবিল থেকে ক্ষতি সামাল দিতে পারে, কিন্তু এসএমইগুলোর জন্য বীমা অপরিহার্য নিরাপত্তা।
- সহজলভ্য সেবা: বর্তমানে অনলাইনে সহজে কোটেশন পাওয়া ও বীমা গ্রহণ করা সম্ভব, যা উদ্যোক্তাদের জন্য সময় ও খরচ সাশ্রয়ী।
- মানসিক শান্তি: বীমা থাকলে উদ্যোক্তা নিশ্চিন্ত থাকেন যে, বড় ধরনের ক্ষতির পরও ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।
কোন কোন কাভারেজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ
- দায়বদ্ধতা বীমা (লায়াবিলিটি ইন্সুরেন্স): তৃতীয় পক্ষের ক্ষতি কিংবা মামলার খরচ বহন।
- সম্পদ বীমা (প্রপার্টি ইন্সুরেন্স) অগ্নিকাণ্ড, চুরি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সম্পদ রক্ষা।
- সাইবার বীমা: ডেটা লিক বা র্যানসমওয়্যার আক্রমণজনিত ক্ষতি কাভার।
- বিজনেস ইন্টারাপশন: দুর্ঘটনায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে আয় ও স্থায়ী খরচ কাভার।
আধুনিক ব্যবসার অনিশ্চিত পরিবেশে সঠিক বীমা পরিকল্পনা ছাড়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যবসায়িক বীমা উদ্যোক্তাকে শুধু আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসার স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিটি উদ্যোক্তার এখনই তাদের ঝুঁকি মূল্যায়ন করে উপযুক্ত বীমা পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।