স্বাস্থ্য বীমা দাবি নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে প্রয়োজন মানবিক ব্যবস্থা ও দায়বদ্ধতা
.jpg)
রাজ কিরণ দাস: স্বাস্থ্য বীমা আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রধান ভরসা হলেও দাবি নিষ্পত্তির বাস্তব প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আশঙ্কা ও বিভ্রান্তি ক্রমেই বাড়ছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর কীভাবে দাবি দাখিল হয়, কেন কিছু বিল বীমা কোম্পানি মঞ্জুর করে আবার কিছু বাতিল হয়, কিংবা কতটা ব্যয় রোগীকে নিজে বহন করতে হবে- এসব মৌলিক বিষয় অধিকাংশ মানুষের কাছেই অস্পষ্ট রয়ে গেছে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি ও অসুস্থ পরিবারগুলো এই জটিলতার মধ্যে পড়লে সমস্যার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার স্বস্তি অনেক সময় অর্থনৈতিক উদ্বেগে পরিণত হয়।
চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রোগীর পক্ষ থেকে দাবি দাখিল করার পর বীমা কোম্পানির অভ্যন্তরীণ যাত্রাপথ অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও প্রযুক্তিনির্ভর। দাবি পর্যালোচনার সময় নীতির শর্ত, কভারেজের প্রকারভেদ, সেবার যৌক্তিকতা এবং রোগীর পূর্বের ব্যয়সংক্রান্ত তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়। দৈনন্দিন মানুষের কাছে এ প্রক্রিয়া অদৃশ্য হলেও এর ফলাফল সরাসরি রোগীর পকেট ও মানসিক নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলে। দাবি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত শুধু অর্থের হিসাব নয়; এটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নির্ধারণ করে।
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর রোগীর হাতে পৌঁছায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি, যার নাম ব্যাখ্যাপত্র বা ইওবি। যদিও এটি কোনো বিল নয়, অধিকাংশ মানুষ এই নথির জটিল ভাষা, চিকিৎসা কোড, বীমা-সংক্রান্ত শব্দ এবং বাড়তি শর্তাবলি দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। ফলে চিকিৎসা ব্যয়ের প্রকৃত চিত্র, বীমা কোম্পানির দেয়া সহায়তার পরিমাণ এবং নিজের বহনযোগ্য খরচ- এই তিনটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও অনেক রোগী ভুল ধারণার শিকার হন। এই ভুল ধারণা থেকেই তৈরি হয় সন্দেহ, হতাশা এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা।
অভিজ্ঞদের মতে, সমস্যার মূলে রয়েছে স্বচ্ছ ব্যাখ্যার অভাব। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি এবং রোগীর মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতি থাকায় দাবি ব্যবস্থার প্রকৃত উদ্দেশ্য অনেক সময় অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। বীমা সংস্থাগুলো প্রায়শই পরামর্শ দেয় নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের চিকিৎসালয় থেকে সেবা নিতে, কারণ তাতে ব্যয় কম হয় এবং দাবি সহজে মঞ্জুর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এই নেটওয়ার্ক কাঠামো কীভাবে রোগীর খরচকে প্রভাবিত করে, কীভাবে চুক্তিভিত্তিক ছাড় প্রযোজ্য হয়- এসব তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে পৌঁছায় না।
অ্যালাইন সিনিয়র কেয়ার- এর মতো কিছু প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ভূমিকা রাখছে। তারা দাবি প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ রোগীর ভাষায় ব্যাখ্যা করে, সঠিক প্রশ্ন করতে উৎসাহ দেয় এবং ভুল বিলিং বা অপ্রয়োজনীয় চার্জ শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এতে রোগীরা শুধু সচেতনই হন না, বরং নিজেদের স্বাস্থ্যসেবার সিদ্ধান্তে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। একটি মানবিক ও দায়িত্বশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থা এমনই হওয়া উচিত যেখানে রোগীকে বোঝার দায়িত্ব শুধু তার ওপর নয়, বরং পুরো ব্যবস্থার ওপর সমানভাবে বর্তায়।
স্বাস্থ্য বীমা দাবি প্রক্রিয়া নিয়ে যে বিভ্রান্তি দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে, তা সমাধান করা জরুরি ও সময়োপযোগী। মানুষের জীবনের সবচেয়ে দুর্বল মুহূর্তগুলিতে চিকিৎসা সেবা পাওয়া নিশ্চয়ই তাদের অতিরিক্ত প্রশাসনিক চাপ দিতে পারে না। এই ব্যবস্থাকে সহজ, স্বচ্ছ এবং মানবিক করে তুলতে বীমা কোম্পানি, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এবং নীতিনির্ধারকদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। রোগীর প্রতি সহমর্মিতা এবং তথ্যপ্রদানের স্পষ্ট চর্চা স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিশ্বস্ততা পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।




