বীমা এজেন্ট বদল বনাম কোম্পানি বদল: কোথায় আসল সাশ্রয়

রাজ কিরণ দাস: বীমা এমন এক আর্থিক সুরক্ষা যা মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে কেনে, ইচ্ছার বশে নয়। তাই যিনি এই সুরক্ষার পরিকল্পনা সাজিয়ে দেন- অর্থাৎ বীমা এজেন্ট- তার ভূমিকা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রিমিয়াম কমানোর ক্ষেত্রে সেই গুরুত্ব কতটা কার্যকর, তা নিয়ে দেখা দেয় নানা ভুল ধারণা। অনেকেই মনে করেন, শুধুমাত্র এজেন্ট বদলালেই প্রিমিয়াম কমে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারণার ভিত্তি খুবই দুর্বল।
বীমা বাজারের মৌলিক কাঠামো অনুযায়ী প্রিমিয়াম নির্ধারণ করে শুধুমাত্র বীমা কোম্পানি। এজেন্টের কাজ পণ্য ব্যাখ্যা করা, গ্রাহকের প্রয়োজন মূল্যায়ন করা এবং উপযুক্ত কভারেজ সাজিয়ে দেয়া। একই প্রতিষ্ঠানের একই পলিসি দুই এজেন্টের কাছে গেলে দুটি ভিন্ন প্রিমিয়াম পাওয়া অসম্ভব। কারণ ঝুঁকি মূল্যায়ন পদ্ধতি- যাকে আন্ডাররাইটিং বলা হয়- ব্যক্তির বয়স, অবস্থান, স্বাস্থ্য, পরিচালনার ইতিহাস ও দাবি সম্পর্কিত অতীত রেকর্ডের মতো বিভিন্ন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করে। এই সূত্র বদলানোর ক্ষমতা কোনো এজেন্টের নেই।
তবে এখানেই শেষ নয়। এজেন্ট বদলানোর প্রকৃত গুরুত্ব লুকিয়ে রয়েছে প্রিমিয়াম কমানোর সুযোগ তৈরি হওয়ার জায়গায় নয়, বরং কভারেজ ব্যবস্থাপনায়। একজন দায়িত্বশীল এবং দক্ষ এজেন্ট বুঝতে পারেন কোন কভারেজগুলি সত্যিই প্রয়োজনীয় এবং কোনগুলি অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের কারণ। নতুন এজেন্ট পুরনো পলিসির ভেতরে অদৃশ্য থেকে যাওয়া অসামঞ্জস্য দেখতে পারেন, এমনকি একই কোম্পানির নতুন অফার বা পরিবর্তিত পলিসি কাঠামো সম্পর্কে গ্রাহককে সচেতন করতে পারেন। কাজেই সাশ্রয় আসে এজেন্ট পরিবর্তন থেকে নয়, বরং পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত সঠিক পরামর্শ ও কৌশলগত পুনর্গঠন থেকে।
সাম্প্রতিক সময়ে বীমা খরচ বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে বহুমাত্রিক কারণ। মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কা, চিকিৎসা ও গাড়ি মেরামতের ব্যয় বৃদ্ধি, জলবায়ুজনিত দুর্যোগের ক্ষতি এবং সামগ্রিক পরিসংখ্যানগত ঝুঁকি বাড়ার ফলে বীমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির সেবা, সুবিধা ও দাবি নিষ্পত্তির দক্ষতা বিবেচনায় না এনে কেবলমাত্র কম টাকার আশায় নতুন কোম্পানিতে চলে যাওয়া অনেক সময়ই লাভের বদলে ক্ষতি ডেকে আনে। নতুন প্রতিষ্ঠানে অপেক্ষাকাল, কভারেজ সীমাবদ্ধতা এবং পূর্বের সুবিধা হারানোর মতো বিষয় সামনে আসে। অন্যদিকে স্থায়ী গ্রাহক হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে অর্জিত আস্থা, বিশেষ ছাড় এবং দ্রুত দাবি নিষ্পত্তির মতো সুবিধাগুলি অনেকক্ষেত্রেই বেশি মূল্যবান হয়ে ওঠে।
এই বাস্তবতা ইঙ্গিত করে যে এজেন্ট বদলানো কখনোই প্রিমিয়াম কমানোর শর্টকাট নয়। এটি মূলত গ্রাহক-সেবার মান উন্নত করা এবং ব্যক্তিগত আর্থিক পরিকল্পনাকে আরও দক্ষভাবে সাজানোর একটি উপায়। বর্তমান এজেন্ট যদি পর্যাপ্ত মনোযোগ না দেন, তথ্য ব্যাখ্যায় ঘাটতি থাকে বা নিয়মিত যোগাযোগের অভাব দেখা দেয়, তবে এজেন্ট পরিবর্তন নিঃসন্দেহে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু আর্থিক সাশ্রয়ের যে প্রত্যাশা অনেকেই করেন, তা পূরণ হয় তখনই যখন নতুন এজেন্ট কভারেজকে পুনঃসমন্বয় করে কার্যকর মূল্যায়নে সহায়তা করেন।




