এশিয়ার স্বাস্থ্যসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনে প্রযুক্তি ও বীমার সমন্বয় জরুরি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এশিয়ার দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ এখনো জটিল ও ব্যয়বহুল। চিকিৎসার জন্য বাড়তি খরচ, তথ্যের ঘাটতি এবং সেবার সীমিত প্রবেশাধিকার বিপুলসংখ্যক মানুষকে চিকিৎসা গ্রহণে নিরুৎসাহিত করছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই চিত্র বদলাতে বীমা কোম্পানিগুলোর কার্যকর ও অগ্রণী ভূমিকা অপরিহার্য।
ইকোনমিস্ট ইমপ্যাক্ট পরিচালিত এবং প্রুডেনশিয়াল পিএলসি’র সহায়তায় প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের নাম ‘পেশেন্ট ভয়েসেস: এক্সপেরিয়েন্সেস অফ হেলথকেয়ার এক্সেস ইন এশিয়া’। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে হংকং, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ৪,২০০- এর বেশি রোগীর অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়- এ অঞ্চলের রোগীদের ৮০ শতাংশের বেশি চিকিৎসা গ্রহণে বিলম্ব করেছেন, যার প্রধান কারণ আর্থিক অনিশ্চয়তা। এক-তৃতীয়াংশ রোগী মনে করেন, চিকিৎসা ব্যয় প্রায়ই প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে, প্রায় অর্ধেক রোগীকে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে পরিবারের সহায়তা, দাতব্য সংস্থা, ঋণ কিংবা অনলাইন ক্রাউডফান্ডিংয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় এই প্রবণতা সর্বোচ্চ, যেখানে প্রায় ৯৩ শতাংশ রোগী চিকিৎসা বিলম্ব করেছেন।
চিকিৎসা গ্রহণের প্রক্রিয়ায় দিকনির্দেশনার অভাবও বড় বাধা। অধিকাংশ রোগীদের মতে, কোথায় চিকিৎসা নিলে উপযুক্ত হবে তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় তারা বিভ্রান্ত হন। প্রায় ৬০ শতাংশ রোগীর অভিযোগ, সাধারণ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে দীর্ঘ অপেক্ষার সময়, সীমিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং বিভ্রান্তিকর বিলিং ও বীমা প্রক্রিয়ার কারণে। এছাড়া, ৫৫ শতাংশ রোগী মনে করেন তারা পর্যাপ্ত নির্দেশনা পান না, যার ফলে ৪০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার পর অতিরিক্ত তথ্যের জন্য ডিজিটাল টুলস, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তা নিচ্ছেন।
প্রুডেনশিয়াল হেলথের প্রধান নির্বাহী আরজান টোরের মতে, ‘বীমা খাত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার যাত্রাপথে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে। খরচের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, প্রক্রিয়া সহজ করা এবং রোগীরা যেন চিকিৎসার প্রতিটি ধাপে সহায়তা পান- এটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, এশিয়ার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে তিনটি দিক জরুরি- আর্থিক সুরক্ষা, সহজ প্রবেশাধিকার এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য। এই তিনটির সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া জনগণকে শুধু হাসপাতালভিত্তিক সেবার ওপর নির্ভর করিয়ে রাখা যাবে না। বীমা কোম্পানিগুলো যদি খরচ কমাতে উদ্যোগ নেয়, রোগীদের জন্য কার্যকর দিকনির্দেশনা প্রদান করে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ বাড়ায়, তবে এ অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পথ তৈরি হবে। (সংবাদ সূত্র: ইন্স্যুরেন্স এশিয়া)