সচেতনতা বাড়লেও 'ভ্রমণ বীমা' কেনায় অনীহা ভারতীয় পর্যটকদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতে ভ্রমণ বীমা নিয়ে সচেতনতা দ্রুত বাড়ছে, তবে সেই সচেতনতা এখনও পুরোপুরি বীমা গ্রহণের আচরণে রূপান্তরিত হচ্ছে না। আইসিআইসিআই লম্বার্ড জেনারেল ইন্স্যুরেন্স প্রকাশিত ওয়ান্ডারসেফ রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি ১০ জন ভারতীয় পর্যটকের মধ্যে ৬ জন ভ্রমণের আগে সক্রিয়ভাবে ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স খোঁজেন। কোভিড-১৯ মহামারির আগে এই হার ছিল ৫৪ শতাংশ, যা ইঙ্গিত দেয় যে মহামারির অভিজ্ঞতা ভ্রমণের ঝুঁকি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ভ্রমণ বীমার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানেন। তবে এত উচ্চমাত্রার সচেতনতা সত্ত্বেও বীমার কভারেজ, শর্ত ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে গভীর বোঝাপড়া এখনও সীমিত। এর ফলেই বীমা কেনার আগ্রহ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছোচ্ছে না এবং সচেতনতা ও বাস্তব গ্রহণের মধ্যে একটি স্পষ্ট ফাঁক থেকে যাচ্ছে।

ভ্রমণ বীমায় অনাগ্রহী অংশের মধ্যে এই ব্যবধান আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। প্রায় অর্ধেক পর্যটক পর্যাপ্ত তথ্য ও স্পষ্ট ধারণার অভাবকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পর্যটকের কাছে বীমার খরচ একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর প্রায় ২০ শতাংশ মনে করেন তাদের নির্দিষ্ট ভ্রমণের জন্য বীমা বিশেষ কোনও অতিরিক্ত উপকার বয়ে আনে না। এই মনোভাব প্রমাণ করে যে বীমার প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবহারিক গুরুত্ব এখনও অনেকের কাছে পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি।

যারা ভ্রমণ বীমা গ্রহণ করেন, তাদের কাছে এর গুরুত্ব মূলত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয়, ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্ব, লাগেজ হারানো এবং অ্যাডভেঞ্চার কার্যকলাপের সময় সুরক্ষা- এই ক্ষেত্রগুলিতেই ভ্রমণকারীরা বীমার প্রকৃত মূল্য খুঁজে পান। বাস্তবে বীমার দাবির ক্ষেত্রেও এই প্রবণতা প্রতিফলিত হয়। চিকিৎসা খরচ, ট্রিপ বাতিল বা দেরি, লাগেজ হারানো এবং গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ নথি হারানোর কারণেই সবচেয়ে বেশি দাবি জমা পড়ে। তবে প্রতিবেদনে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে পলিসির এক্সক্লুশন, ডিডাক্টিবল বা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ না হওয়ার কারণে বহু দাবি খারিজ হয়, যা গ্রাহকদের আস্থাকে প্রভাবিত করে।

ভ্রমণ অভ্যাসের দিক থেকেও প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও প্রজন্মগত প্রবণতা তুলে ধরেছে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পর্যটকদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ শতাংশ মহিলা। জেনারেশন জেড, মিলেনিয়াল এবং জেন এক্স- সব প্রজন্মের মধ্যেই এশীয় দেশগুলির প্রতি শক্তিশালী আকর্ষণ দেখা গেছে, যার পেছনে সহজ ভিসা প্রক্রিয়া, তুলনামূলক কম খরচ এবং উন্নত বিমান সংযোগ বড় ভূমিকা নিয়েছে। তবে প্রজন্মভেদে গন্তব্য পছন্দে স্পষ্ট পার্থক্যও রয়েছে। তরুণ পর্যটকরা, বিশেষ করে জেন জেড ও মিলেনিয়ালরা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপ বা যুক্তরাজ্যের মতো দীর্ঘ দূরত্বের গন্তব্যে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন, যেখানে তুলনামূলকভাবে জেন এক্স এখনও কাছাকাছি গন্তব্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। (সংবাদ সূত্র: ইন্স্যুরেন্স এশিয়া)