অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এশিয়া-ইউরোপে বীমা খাতে নিয়ম শিথিল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার ও বাজারে বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়াতে এশিয়া ও ইউরোপের বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নীতিগত নমনীয়তা অবলম্বন করছে। আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা ফিচ রেটিংস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই পরিবর্তনগুলো মূলত বীমা খাতের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগ সহায়তা এবং আর্থিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত হচ্ছে।

ফিচ রেটিংসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়া তাদের বীমা খাতে মূলধন সংক্রান্ত বিধিমালা শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবের আওতায়, যদি কোনো বীমা প্রতিষ্ঠান সম্পদ ও দায়ের মধ্যে কার্যকর ভারসাম্য (এসেট-লায়াবিলিটি ম্যাচিং) বজায় রাখতে পারে, তবে তাদের মূলধন চার্জ কমানো হবে। এই উদ্যোগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এশিয়া-ইউরোপে বীমা খাতে নিয়ম শিথিলকে আরও আকর্ষণীয় ও সাশ্রয়ী করে তুলবে, যা অবসরকালীন সঞ্চয় ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে, চীনও একই ধারায় পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটি ইকুইটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূলধন প্রয়োজনীয়তা ১০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। ফিচ রেটিংসের মতে, এই সিদ্ধান্ত চীনের বীমা কোম্পানিগুলোকে করপোরেট খাতে বেশি মূলধন সরবরাহে উৎসাহিত করবে- যা বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়িয়ে দেশটির সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।

অন্যদিকে, ইউরোপীয় কমিশন ও দীর্ঘমেয়াদি ইকুইটি বিনিয়োগ এবং সিকিউরিটাইজড সম্পদের নির্দিষ্ট অংশে মূলধন চার্জ হ্রাসের প্রস্তাব করেছে। এর ফলে ইউরোপের বীমা কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প ও অবকাঠামো বিনিয়োগে আরও আগ্রহী হবে, যা অঞ্চলের টেকসই প্রবৃদ্ধি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা জোরদার করতে সহায়ক হবে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা ভিন্ন। ফিচ রেটিংস জানিয়েছে, দুই দেশেই জীবন বীমা খাতে তহবিল-নির্ভর পুনর্বীমা (ফান্ডেড রিইন্স্যুরেন্স) চুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার নিয়ন্ত্রকদের উদ্বিগ্ন করছে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে এসেট এডিকুয়েসি টেস্ট চালু করেছে- যাতে এসব চুক্তির অধীনে সম্পদ ও দায়ের নগদ প্রবাহ সঠিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে তা নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি, যুক্তরাজ্যও পুনর্বীমা খাতে সম্ভাব্য ঝুঁকি হ্রাসে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছে।

ফিচ রেটিংস বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছে, এশিয়া ও ইউরোপের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো যেখানে মূলত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ সহায়তার দিকটি গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ঝুঁকিনিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক স্থিতিশীলতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

এই বৈচিত্র্যময় নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি শুধু বৈশ্বিক বীমা বাজারের কাঠামোকেই নয়, বরং ভবিষ্যতের আর্থিক খাতের বিনিয়োগ কৌশল, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। (সংবাদ সূত্র: ইন্স্যুরেন্স এশিয়া)