প্রিমিয়াম জমা দেয়ার সময় বাড়ানোর কথা ভাবছে আইডিআরএ

আবদুর রহমান আবির: বিশ্বজুড়ে চলছে করোনা ভাইরাসের মহামারী। সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই প্রেক্ষিতে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান সাধারণ ছুটি বর্ধিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। নির্দেশনা অনুসারে বন্ধ রয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান।

এই প্রেক্ষিতে বীমার প্রিমিয়ামের টাকা পরিশোধের নির্ধারিত দিনের পরে দেয়া অতিরিক্ত সময় (গ্রেইস পিরিয়ড) আরো এক মাস বাড়িয়ে দু’মাস করার কথা ভাবছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এর ফলে বর্তমান আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রাহকরা প্রিমিয়ামের টাকা জমা দিতে না পারলেও বীমা পলিসি চালু থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি ৭৮টি লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে। নতুন আরেকটি লাইফ বীমা কোম্পানি সম্প্রতি অনুমোদন লাভ করেছে। এর মধ্যে ৩২টি লাইফ বীমা কোম্পানির সচল পলিসির সংখ্যা ৯০ লাখ ২০ হাজার। আর ৪৬টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির পলিসি সংখ্যা ৩০ লাখ ৮০ হাজার।

২০১৯ সালে দেশের লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো ৯ হাজার ৬০৮ কোটি ২২ লাখ টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। আর নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো ৩ হাজার ৬৮২ কোটি ৭০ লাখ টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। অর্থাৎ গেলো বছরে দেশের ৭৮টি লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহের পরিমাণ ১৩ হাজার ২৯০ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান সাধারণ ছুটি বর্ধিত করেছে সরকার। নির্দেশনা অনুসারে বন্ধ রয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান। সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ অবস্থায় মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বীমা কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারাও ঘরে অবস্থান করছেন। অনলাইন মাধ্যমে প্রিমিয়াম দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ বীমা গ্রাহকের পক্ষে এখন তা সম্ভব হবে না। এই প্রেক্ষিতে প্রিমিয়াম জমা দেয়ার গ্রেইস পিরিয়ড এক মাস বাড়ানোর কথা ভাবছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, করোনায় সারাবিশ্ব নাজেহাল। বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেমন হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। মানুষের বেঁচে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় বীমা গ্রাহকদের প্রিমিয়াম জমা দেয়াও কঠিন। এক্ষেত্রে আইনি জটিলতার বিষয়টি নিয়ে সময়মতো আইডিআরএ একটি ব্যবস্থা নেবে আশাকরি।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল এম এ নাসের বলেন, সাধারণ ছুটির মধ্যে যদি কোন বীমা গ্রাহকের প্রিমিয়াম জমা দেয়ার সময় শেষ হয় অর্থাৎ গ্রেইস পিরিয়ড অতিক্রম করে এবং প্রিমিয়াম অপরিশোধিত রয়ে যায় তাহলে নিয়ম অনুযায়ী ওই পলিসি ল্যাপস হয়ে যাবে। এ অবস্থায় কোন বীমা দাবি উত্থাপিত হলে সেটা নাকোচ করতে পারে বীমা কোম্পানি।  

তিনি বলেন, করোনা মহামারী আইনের উর্ধ্বের ঘটনা। সারাবিশ্ব এই ভাইরাসে পর্যদুস্ত। এ অবস্থায় কোন গ্রাহক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রিমিয়ামের টাকা দিতে না পারলে অফিস খোলার সাথে সাথে সেটা পরিশোধের সুযোগ দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে প্রিমিয়াম পরিশোধের গ্রেইস পিরিয়ড আরো বাড়ানো যেতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া প্রয়োজন।

জেনিথ ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে চলমান সাধারণ ছুটিতে অনেক বীমা গ্রাহক যথাসময়ে প্রিমিয়াম জমা দিতে পারবে না। নিয়ম অনুযায়ী সেগুলো ল্যাপস হয়ে যাবে। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিচেনায় নিয়ে গ্রাহকদের প্রিমিয়াম জমা দেয়ার সময় বাড়ানো উচিত। তা না হলে অনেক গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো বীমাখাতেও বিশেষ নির্দেশনা দেয়া উচিত।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গোটা ভারতে লকডাউন শুরু হওয়ায় লাইফ বীমার প্রিমিয়াম দেয়ার সময়সীমা বাড়িয়েছে দেশটির বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইআরডিএআই। লাইফ বীমা, স্বাস্থ্য বীমা এবং গাড়ি বীমার গ্রাহকরা সবাই এই সুবিধা পাবেন।

দেশজুড়ে লকডাউনের এই সময়ের মধ্যে বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে না পারলে সেই পলিসি যাতে বাতিল হয়ে না যায়, কিংবা গ্রাহকেরা যাতে সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন, তার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতের বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইআরডিএ।

লাইফ বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত ৩০ দিন সময় পাবেন গ্রাহকেরা। বর্ধিত ওই সময় পর্যন্ত পলিসি চালু থাকবে। স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রেও শেষ তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রিমিয়াম মেটানোর কথা বলা হয়েছে। মোটর থার্ড পার্টি বীমার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।