ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ

নেতিবাচক মন্তব্য করায় ফারইস্টের চেয়ারম্যানের পিএস’কে ডেকে পাঠালেন আইডিআরএ কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেন শাহাদত হোসেন। আর এই কারণে তাকে আইডিআরএ কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। শাহাদত হোসেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যানের পিএস’র দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে আইডিআরএ কার্যালয়ে ডেকে পাঠান সংস্থাটির পরিচালক (একচ্যুরিয়াল ও এজেন্ট) আহম্মদ এহসান উল হান্নান। তবে কি ধরণের নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে সে বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি।

অপরদিকে গ্রাহকের বকেয়া বীমা দাবি পরিশোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির একজন সদস্য ব্যক্তিগতভাবে সুপারিশ করেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে। এ ধরণের ব্যক্তিগত সুপারিশ এবং শুধুমাত্র নেতিবাচক মন্তব্য করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে ডেকে পাঠানো নিয়ে কোম্পানিটির কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে আইডিআরএ’র কর্মকর্তাদের এমন আচরণ ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে দেখা হবে কিনা!

সূত্র মতে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তাদের একটি অভ্যন্তরীণ সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ১০ জুলাই। অভ্যন্তরীণ ওই সভায় কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের পিএস শাহাদত হোসেন বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। পরে নেতিবাচক মন্তব্যের বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা অবহিত হন। এর প্রেক্ষিতে শাহাদত হোসেনকে সংস্থাটির কার্যালয়ে ডেকে পাঠান পরিচালক (একচ্যুরিয়াল ও এজেন্ট) আহম্মদ এহসান উল হান্নান।

এদিকে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র হাতে আসা নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ থেকে তাদের নিজস্ব প্যাডে অফিস আদেশ অনুসারে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে এমন গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধে কোম্পানিটিকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এসব দাবি পরিশোধও করেছে বীমা কোম্পানিটি।

পাওনা টাকা আদায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে দাখিল করা ফারইস্ট ইসলামী লাইফের বীমা গ্রাহকদের দাখিল করা ৩টি অভিযোগ হাতে আসে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র, যাতে আইডিআরএ’র রিসিভিং সিল দেয়ার রয়েছে। এ ছাড়াও কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহীর কাছে বীমা দাবির টাকা চেয়ে দাখিল করা ২টি আবেদন হাতে আসে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র। এই দুটি আবেদনে ‘লুক ইন টু’ লিখে স্বাক্ষর ও সিল দিয়েছেন আইডিআরএ’র সদস্য (লাইফ) আপেল মাহমুদ।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করা দু’টি আবেদনের মধ্যে বীমা গ্রাহক সবুর মিয়ার পক্ষে আবেদনটি করেন বীমা কোম্পানিটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিভিশনাল ইনচার্জ মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম। সবুর মিয়ার এই বীমা দাবির পরিমাণ ১৪ লাখ ৫৬ হাজার ২১২ টাকা।  সবুর মিয়ার পলিসি নম্বর ৩৩০০০১৬৭১৮। বীমা গ্রাহক সবুর মিয়া লন্ডন প্রবাসী।

আরেক বীমা গ্রাহক হলেন- ফারুক হোসেন, যার পলিসি নম্বর ৬৫০০০০৫২৯১ এবং বীমা দাবির পরিমাণ ৬ লাখ ৩৬ হাজার ১৪০ টাকা। এই আবেদনটি করেন গ্রাহক নিজেই। এই আবেদনপত্রেও ‘লুক ইন টু’ লিখে স্বাক্ষর ও সিল দিয়েছেন আইডিআরএ সদস্য (লাইফ) আপেল মাহমুদ।

অপরদিকে আইডিআরএ’র বরাবর আবেদন করেন কোম্পানিটির ৩ জন গ্রাহকের মোট বীমা দাবির পরিমাণ ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৪শ’ টাকা। এসব আবেদনে আইডিআরএ’র রিসিভিং সিল দেয়া রয়েছে। তবে এই ৩টি আবেদনের বিষয়ে আইডিআরএ থেকে অফিসিয়ালি দাবি পরিশোধের কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

বীমা কোম্পানিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই তিনটি বীমা দাবি পরিশোধের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে মৌখিকভাবে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে কারা এই নির্দেশনা দিয়েছেন তাদের নাম জানাতে পারেনি বীমা কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

বীমা দাবি পরিশোধের সুপারিশের বিষয়ে আইডিআরএ’র সদস্য (লাইফ) আপেল মাহমুদ ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে আবেদনগুলোকে দেখতে বলা হয়েছে। এখানে পরিশোধের বিষয়ে কোন চাপ প্রয়োগ বা অন্যকোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

তবে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের পিএস শাহাদত হোসেনকে আইডিআরএ কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশনার বিষয়ে আইডিআরএ’র পরিচালক (একচ্যুরিয়াল ও এজেন্ট) আহম্মদ এহসান উল হান্নানের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ বা সংস্থাটির কোন কর্মকর্তার বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি বলে দাবি করেছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যানের পিএস শাহাদত হোসেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইডিআরএ’র একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন- ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যানের পিএস শাহাদত হোসেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন এবং এমন কিছু বিষয় নজরে আসায় তাকে বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের দফতরে এসে  কথা বলার জন্য কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহীকে জানানো হয়। এখানে আদেশ-নির্দেশ বা ক্ষমতা অপব্যবহারের সংশ্লিষ্ট কোন বিষয় নেই।