ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী আব্দুল খালেক মিয়াকে চাকরির অবসান পত্র, না-মঞ্জুর করল আইডিআরএ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদ থেকে মো. আব্দুল খালেক মিয়ার চাকরি অবসান করে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশের দেয়া পত্র না-মঞ্জুর করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এই চাকরি অবসান প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে আইন পরিপালন না করায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। আইডিআরএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে ২০ আগস্ট (বুধবার) ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদ থেকে আব্দুল খালেক মিয়ার চাকরি অবসান করে পত্র ইস্যু করে বীমা কোম্পানিটি। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন কোম্পানিটির ভাইস চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ আগস্ট আব্দুল খালেক মিয়াকে দেয়া গাড়ি ফেরত নেয় কোম্পানিটি।

মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদ থেকে চাকরি অবসান করে পত্র দেয়ার ৫ দিন পর গতকাল (২৫ আগস্ট) মো. আব্দুল খালেক মিয়াকে আবার বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে পত্র ইস্যু করেছে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড। এই পত্রেও স্বাক্ষর করেছেন কোম্পানিটির ভাইস চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ।

চিঠি সূত্রে জানা যায়, মো. আব্দুল খালেক মিয়া কোম্পানির স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ড করেছেন এমন দাবি করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ। একইদিনে এই তদন্ত কমিটির বরাত দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে মো. আব্দুল খালেক মিয়াকে।

বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মো. আব্দুল খালেক মিয়াকে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদ থেকে চাকরি অবসান করে চিঠি দেয়া, এর ৫ দিন পর বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে চিঠি দেয়া এবং গাড়ি বুঝে নেয়া– এসবই বেআইনী এবং নিয়মবহির্ভুত।

তাদের মতে, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ অনুমোদন দেয়ার এখতিয়ার বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সুনির্দিষ্ট আইনের বিধান অনুসারে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় এবং অপসারণ করে থাকে। এই আইনের বাইরে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের যেকোন কর্মকাণ্ড-ই ক্ষমতার অপব্যবহার।

এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেয়া না হলে কোন মুখ্য নির্বাহী চাকরির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বোধ করবে না। যার মারাত্মক বিরুপ প্রভাব পড়বে বীমা খাতে।   

অভিযোগ রয়েছে, গত ১৭ আগস্ট কোম্পানিটির ভাইস-চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি ও হেড অব এইচআর এডমিন চৌধুরী এহসানুল হক আব্দুল খালেক মিয়াকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। এমনকি তাদের লোকজন আব্দুল খালেক মিয়ার বাসায় গিয়েও তাকে ইস্তফা দিতে চাপ প্রয়োগ করেন।

বিষয়টি নিয়ে গত ২১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন মো. আব্দুল খালেক মিয়া। এর আগে ২০ আগস্ট ই-মেইলে পত্র দিয়েও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বিষয়টি অবহিত করেন তিনি।

এ বিষয়ে মো. আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, আমার সঙ্গে গত কয়েকদিন ধরেই যা করা হচ্ছে তা কাম্য নয়। বেআইনীভাবে আমার চাকরি অবসান করা হয়েছে। আমার বরাদ্দকৃত গাড়িটিও ফেরত নেয়া হয়েছে। এমনকি আমার প্রাপ্য বেতন-ভাতাও আটকে রাখা হয়েছে। এর আগে আমাকে ইস্তফা দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।

অথচ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেয়ার পর আমি নিয়ম মাফিক কোম্পানিতে যোগদান করি। আমার দায়িত্ব পালনকালে কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি গত দুই বছরে ১৫% ও ২০% ডিভিডেন্ট প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র তাদের অনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য আমার চাকরি অবসান করা হয়েছে।

আব্দুল খালেক মিয়া আরো বলেন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে নিয়োগ প্রাপ্ত কোনো মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত চাকরির অবসান করার সুযোগ নেই। আমাকে চাকরিচ্যুত করার জন্য আইন লঙ্ঘন করে চাকরির অবসান পত্র দেয়া হয়েছে। আমি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মুখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বিআইএফ’র জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল এস এম নুরুজ্জমান বলেন, এটা শুধু আব্দুল খালেক মিয়ার বিষয় নয়। যেকোন মুখ্য নির্বাহীকে বেআইনীভাবে অপসারণ আমাদের কাম্য নয়। যদি কাউকে অপসারণ করতেই হয়- তার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। সেই আইন মেনেই একজন মুখ্য নির্বাহীকে অপসারণ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এমনিতেই মুখ্য নির্বাহী সংকটে রয়েছে বীমা খাত। এরমধ্যেই যদি এমন ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়। তাহলে এ খাতের সংকট আরো ঘণিভূত হবে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম মনে করে, বীমা খাতের উন্নয়নের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন পরামর্শক ও মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদ থেকে মো. আব্দুল খালেক মিয়ার চাকরি অবসান প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে আইন পরিপালন না করায় পত্রটি না-মঞ্জুর করেছে কর্তৃপক্ষ।