প্রিমিয়াম আয় বাড়লেও মুনাফা নেই নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি বছরই গ্রস প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের। কিন্তু সেই হারে বাড়েনি কোম্পানিটির আন্ডাররাইটিং প্রফিট বা মুনাফার হার। অথচ ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে অনুমোদিত সীমার মধ্যে-ই।
ফলে প্রশ্ন উঠেছে নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত আন্ডাররাইটিং প্রফিট হিসাবের সঠিকতা নিয়ে।
বীমা কোম্পানিটি বলছে, ব্যবসা বৃদ্ধির সাথে সাথে কোম্পানির ঝুঁকিও বেড়েছে। বেড়েছে বীমা দাবি পরিশোধের হার। আর এ কারণেই কোম্পানির আন্ডাররাইটিং প্রফিট বা মুনাফার হার কমে গেছে।
তবে নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের বীমা দাবি পরিশোধের তথ্য যাচাই করে এই দাবির সত্যতা মেলেনি ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দক্ষতার সাথে যথাযথভাবে নন-লাইফ বীমা পলিসি আন্ডাররাইট করতে না পারলে কোম্পানির ঝুঁকি বাড়ে। এক্ষেত্রে বীমা দাবির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং কোম্পানির আন্ডাররাইটিং প্রফিট কমে যায়।
তবে তাদের মতে, নন-লাইফ বীমা খাতে আন্ডাররাইটিং প্রফিট হিসাবের ক্ষেত্রে গোঁজামিল দেয়ার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরেই। তাই বীমা কোম্পানিগুলোর এসব তথ্য যাচাই করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি বাড়ানো উচিত।
এক্ষেত্রে প্রয়োজনে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ করা যেতে পারে বলে মনে করছেন বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা।
নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০১৫ সালে বীমা কোম্পানিটি ৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের বিপরীতে আন্ডাররাইটিং প্রফিট বা মুনাফা করে ১৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের ৩৭.২৭ শতাংশ আন্ডাররাইটিং প্রফিট করে।
ওই বছরে বীমা কোম্পানিটি নেট বীমা দাবি পরিশোধ করে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা গ্রস প্রিমিয়ামের ১০.০৫ শতাংশ।
অপরদিকে ২০২৩ সালে এসে নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্স ১০০ কোটি ৪০ লাখ টাকা গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের বিপরীতে আন্ডাররাইটিং প্রফিট করেছে ১০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের ১০.৮৩ শতাংশ আন্ডাররাইটিং প্রফিট বা মুনাফা করেছে।
একই বছরে বীমা কোম্পানিটি নেট বীমা দাবি পরিশোধ করে ঋণাত্মক ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা গ্রস প্রিমিয়ামের ঋণাত্মক (-) ২.৫৪ শতাংশ।
সেই হিসাবে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের আন্ডাররাইটিং প্রফিট বা মুনাফার হার কমেছে ৭০. ৯৪ শতাংশ। একইভাবে বীমা দাবি পরিশোধের হারও কমেছে ২৫.২৭ শতাংশ।
আবার আর্থিক প্রতিবেদনের হিসাব অনুসারে ২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল- এই ৯ বছরে কোম্পানিটির আন্ডাররাইটিং প্রোফিট হয়েছে মোট ৬৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
অথচ একই সময়ে কোম্পানিটির মোট সম্পদ বেড়েছে ১৫৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
২০১৫ সালে ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের মোট সম্পদ ছিল ১১১ কোটি ৭ লাখ টাকা। যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
অর্থাৎ আন্ডাররাইটিং প্রফিট বা মুনাফার হার কমলেও গত এক দশকে কোম্পানিটির মোট সম্পদ বেড়েছে ১৩৭.১০ শতাংশ বা প্রায় দেড় গুণ।
এ ছাড়াও ২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ট্যাক্স প্রদানের পর নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের নেট প্রফিট হয়েছে মোট ৬০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ৩২ কোটি ৯১ লাখ টাকা আন্ডাররাইট করে প্রোফিট করেছিল ৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, নেট প্রোফিট আফটার ট্যাক্সের হিসাব না থাকায় ২০১৬ সালের ক্ষেত্রে নেট প্রফিট বিফোর ট্যাক্স এই হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ব্যবসা বাড়লেও আন্ডাররাইটিং প্রফিট কমে যাওয়ার বিষয়ে নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি (ভারপ্রাপ্ত) বিদ্যুৎ কুমার সমাদ্দার বলেন, বীমা কোম্পানির ব্যবসার ভলিউম বাড়লে লায়াবিলিটি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে বীমা দাবি উত্থাপন হওয়ায় কোম্পানির আন্ডাররাইটিং প্রফিট কমে গেছে।
আন্ডাররাইটিং প্রফিটের তুলনায় সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, যেই হারে কোম্পানির লায়াবিলিটি বৃদ্ধি পায়, সেই হারে কোম্পানির রিজার্ভ রাখতে হয়। রিজার্ভের এই অর্থ কোম্পানির সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই আন্ডাররাইটিং প্রফিট কমলেও কোম্পানির সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ বিষয়ে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র পরামর্শক (মিডিয়া এবং যোগাযোগ) ও মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, আন্ডাররাইটিং প্রফিটের হিসাবে কোন অনিয়ম করা হয়েছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবে কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।