ভারতের জীবন বীমা বাজারে আবারও এলআইসি শীর্ষে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর- এই সাত মাসের জীবন বীমা সংগ্রহের পরিসংখ্যান ভারতের বীমা শিল্পে প্রতিযোগিতার বর্তমান চিত্রকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। মারওয়াডিজ ফিনসার্ভ প্রকাশিত এই সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাজারে প্রতিযোগী সংস্থার সংখ্যা বাড়লেও নেতৃত্বের মুকুট এখনও অটুটভাবে ধরে রেখেছে ভারতীয় জীবন বীমা নিগম, বা এলআইসি। শিল্পের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি আট শতাংশ হলেও শীর্ষ কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্সে যে বৈচিত্র্য দেখা গেছে, তা ভবিষ্যতের বাজার কাঠামোর দিক নির্দেশ করছে।
এলআইসি এসময়কালে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ১,৪০,২৮২ কোটি টাকা- যা দেশের মোট জীবন বীমা বাজারে ৫৯ শতাংশ শেয়ারের প্রতিনিধিত্ব করে। বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে সংযত হলেও ভারতের বিশাল গ্রাহকভিত্তি ও বিস্তৃত নেটওয়ার্কের কারণে এলআইসি এখনো এই খাতে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েই গেছে। তাদের অবস্থান শুধু সংখ্যার দিক থেকেই নয়, গ্রাহকের আস্থা ও দীর্ঘদিনের বাজার বিশ্বাসযোগ্যতার কারণেও অপরিবর্তনীয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বেসরকারি খাতে শক্তিশালী প্রতিযোগিতার মুখে এগিয়ে রয়েছে এসবিআই লাইফ। সংস্থাটি এপ্রিল-অক্টোবর সময়ে ২১,৫২৭ কোটি টাকার প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে দ্বিতীয় অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে। ১৭ শতাংশ বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি প্রমাণ করে যে বাজারে নতুন গ্রাহক আকর্ষণ এবং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে তাদের কৌশল আরও কার্যকর হয়ে উঠছে। শক্তিশালী ব্যাংকিং সংযোগ ও ডিজিটাল সেবার উন্নয়ন এ সাফল্যে বড় ভূমিকা রেখেছে।

ক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা এলআইপিইসি এবং এইচডিএফসি লাইফ সমান ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং ৮.১ শতাংশ বাজার-শেয়ার ধরে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেছে। বীমা পণ্যে নতুনত্ব, প্রযুক্তিনির্ভর গ্রাহকসেবা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নতি তাদের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়। ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার পরিবেশে এ সংস্থাগুলোর নীতি বাজারে একটি সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারা তৈরি করেছে।
একইসময়ে টাটা এআইএ ৭,৪৬৩ কোটি টাকার সংগ্রহ এবং ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে নিজেদের শক্তিশালী সম্ভাবনা তুলে ধরেছে। স্বচ্ছ ক্লেইম প্রক্রিয়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বিস্তার এবং গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পলিসি কাঠামো তাদের প্রবৃদ্ধিকে আরও উৎসাহিত করছে।
রিপোর্টে মাঝারি ও ছোট সংস্থাগুলোর পারফরম্যান্সও উল্লেখ করা হয়েছে। মেটলাইফ, ডিজিট, শ্রীরাম, প্রামারিকা, ইন্ডিয়া ফার্স্ট, এজিএসি ফেডারেলসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি ধারাবাহিক বৃদ্ধির চেষ্টা করছে, কিন্তু বাজারে তাদের শেয়ার এখনো সীমিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্র্যান্ড পরিচিতি, ডিস্ট্রিবিউশন স্ট্র্যাটেজি এবং গ্রাহকভিত্তি বাড়ানোই ভবিষ্যতে তাদের অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি হতে পারে।
তালিকায় সবশেষে রয়েছে এক্কো লাইফ, যার সংগ্রহ মাত্র ৭৮ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির হার শূন্য হওয়ায় এই ডিজিটাল-ফার্স্ট সংস্থাকে জীবন বীমা সেগমেন্টে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে নতুন কৌশল প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে।
ভারতের জীবন বীমা বাজার বর্তমানে দ্রুত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে- গ্রাহকের চাহিদা বদলাচ্ছে, প্রযুক্তি হয়ে উঠছে প্রধান চালিকাশক্তি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছে। তবুও বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে প্রতিষ্ঠিত আস্থা ও গভীর বাজারভিত্তির কারণে এলআইসি-র প্রভাব এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বেসরকারি প্রতিযোগীদের প্রবৃদ্ধি বাজারকে প্রাণবন্ত করছে, কিন্তু নেতৃত্বের আসনে এখনও দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছে ভারতের জাতীয় জীবন বীমা সংস্থাটি।




