২০২০ সালে নন-লাইফ বীমায় প্রিমিয়াম আয় কমেছে ০.৭ %
তাফহিমুল ইসলাম: ২০২০ সালের শুরুতে কি ব্যক্তি জীবন আর কি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সকল ক্ষেত্রে আতঙ্কেই কেটেছে। দেশে টানা লকডাউন থাকায় ব্যবসা বাণিজ্য চরম হুমকির মধ্যে পড়ে। করোনা পরিস্থিতে ধরে নেয়া হয়েছিল দেশের নন-লাইফ বীমা কোম্পানির প্রিমিয়াম আয়ে মারত্মক আকারে কমে যাবে। কোম্পানিগুলোর নির্বাহীদের আশঙ্কা ছিল এমন পরিস্থিতে হয়তো বেতন-ভাতাই দেয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু যে আশংঙ্কা করা হয়েছিল তা হয়নি।
২০২০ সালে বেসরকারি খাতের ৪৫টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ৩ হাজার ৩শ’ ৯৪ কোটি ৭৭ লাখ। যা ২০১৯ সালের তুলনায় মাত্র ২৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বা ০.৭ শতাংশ কম। নন-লাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম আয়ের এমন চিত্র পাওয়া গেছে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পর্যালোচনায়। ২০২০ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
নন-লাইফ বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীরা বলছেন, ২০২০ সালে করোনার বড় ধাক্কা গেলেও দেশের নন-লাইফ বীমা খাতে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। জনজীবন অনেকটা স্থবির হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে তেমন কোন বাধা ছিল না। এমনকি করোনাকালে নন-লাইফ বীমার সাথে সম্পৃক্ত দু’একটি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য আগের তুলনায় বেশি হয়েছে।
এ ছাড়াও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের জারিকৃত ৬৪ নং সার্কুলারকে করোনা পরিস্থিতে নন-লাইফ বীমা খাতের ব্যবসা ভালো হওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। সার্কুলারটিতে নন-লাইফ বীমার প্রিমিয়াম আয় তিন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যেমে গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।
তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে মোট প্রিমিয়াম আয় ছিল ৩ হাজার ৪শ’ ১৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। যা ২০১৮ সালের থেকে ১২.৩৯ শতাংশ বা ৩৭৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বেশি। ২০১৮ সালে ৪৫ নন-লাইফ কোম্পানির মোট প্রিমিয়াম আয় ছিল ৩ হাজার ৪১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
সার্বিকভাবে ২০২০ সালে নন-লাইফ খাতের প্রিমিয়াম আয় কমলেও এসময় বেশি প্রিমিয়াম আয় করে নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স। ২০১৯ সালে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম আয় ৬১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এই এক বছরে কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ৩৬ কোটি টাকা বা ৫৮ শতাংশ। কোম্পানিটি টাকার অংকে এবং শতাংশ উভয় দিক দিয়েই প্রবৃদ্ধির শীর্ষে।
২০২০ সালে নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স ৩৬ কোটি টাকা বেশি আয় করলেও এসময় গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম আয় ৪৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা প্রায় ১২ শতাংশ কম হয়েছে। শতাংশের হিসাবে সবচেয়ে বেশি কমেছে রুপালী ইন্স্যুরেন্সের। কোম্পানিটির ২০২০ সালে প্রিমিয়াম আয় কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ বা ১৯ কোটি ৯ লাখ টাকা।
২০১৯ সালে ৪৫টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির মধ্যে আয় কমেছিল ৬টির। এসব কোম্পানি মধ্যে ২০২০ সালে এসে জনতা ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স ও বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্স তাদের ব্যবসা বাড়িয়েছে। এর মধ্যে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বা প্রায় ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে।
করোনা মহামারীতেও দেশের নন-লাইফ বীমা ব্যবসা ধরে রাখতে কোন কোন বিষয় ভূমিকা রেখেছে তা জানতে চাইলে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদ জানান, করোনার প্রথম দিকে কিছুটা স্থবিরতা থাকলেও তাড়াতাড়ি তা স্বাভাবিক হয়ে আসে। অন্যদিকে কারোনাকালে ফার্মাসিউটিক্যালস ব্যবসা খুবই ভালো ছিল। অনেক প্রতিষ্ঠানেই দ্বিগুণ ব্যবসা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম দিকে গার্মেন্টস খাতে কিছুটা স্থবিরতা থাকলেও খুব শিগগিরই খাতটি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং সেই সাথে আগের ঘাটতিও কাটিয়ে ওঠে।
করোনাকালে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সরকারি খাতের ব্যবসা (পিএসবি) । ২০১৯ সালে চেয়ে ২০২০ সালে এই ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ছিলে অনেক বেশি। সাধারণ বীমা করপোরেশনের পিএসবি ব্যবসার ৫০ শতাংশ যায় বেসরকারি খাতে। এই ভাগের পরিমাণও সে বছর বেশি ছিল। ফলে নন-লাইফ খাতের ব্যবসায় তেমন কোন প্রভাব পড়েনি।
সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শফিক শামিম বলেন, বাহ্যিক কিছু কারণে আয় সেভাবে কমেনি। আর নন-লাইফের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো এই সময় বন্ধ ছিল না। প্রথম দিকে গার্মেন্টসে কিছুটা স্থবিরতা থাকলেও ফার্মাসিউটিক্যালস ব্যবসা বেড়েছিল। তবে ফায়ার ও মেরিন ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা কিছুটা কমেছিল।
শফিক শামিম আরো বলেন, আইনগত বিধি-নিষেধের ফলে এই সময় কোন প্রকার মানিলন্ডারিং হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলোর যা আয় হয়েছে, সব কাগজে কলমে এসেছে। এর ফলে করোনাকালেও নন-লাইফ বীমা খাতের আয় সেভাবে কমেনি।
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক-উর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে নন-লাইফ বীমা ব্যবসা ধরে রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ কোন কারণ ছিল না। সার্বিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ার ফলে নন-লাইফ বীমা খাতেও আয় হয়েছে। তবে ব্যবসায় নতুন কোন কৌশল ছিল না যে, এই জন্য ব্যবসা বেশি হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। সংক্রমণ রোধে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে বিভিন্ন মেয়াদে ছুটি বাড়িয়ে সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। দেশের ইতিহাসে ২ মাস ৪ দিনের এই দীর্ঘ ছুটির পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৩১ মে থেকে খোলা হয় অফিস-আদালত। চালু হয় গণপরিবহনও।