জাতীয় বীমা দিবস কাল, যা থাকছে এবারের আয়োজনে
আবদুর রহমান আবির: বীমা শিল্পের উন্নয়ন ও বীমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামীকাল বুধবার (১ মার্চ) দেশে ৪র্থ বারের মতো উৎযাপিত হতে যাচ্ছে জাতীয় বীমা দিবস। বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতি বছর দেশজুড়ে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। বরাবরের মতো এ বছরেও দিবসটি উদযাপনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।
যেভাবে এলো জাতীয় বীমা দিবস
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু সাধারণ মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির কথাই ভাবেননি; ভেবেছেন মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথাও। আর তাই ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই তিনি বীমা খাত সংস্কারে হাত দেন।
১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারের মাধ্যমে তিনি ৪৯টি বীমা কোম্পানিকে একীভূত করে গঠন করেন তিস্তা, কর্ণফুলী, রূপসা ও সুরমা এই ৪টি করপোরেশন।
এরপর ১৯৭৩ সালে পাস করেন বীমা করপোরেশন আইন। গঠন করেন জীবন বীমা করপোরেশন এবং সাধারণ বীমা করপোরেশন নামে ২টি সরকারি প্রতিষ্ঠান।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সংস্থা দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
দেশের বীমা খাতের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর এই অবদান জাতীয় পর্যায়ে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ‘জাতীয় বীমা দিবস’ পালনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সুপারিশক্রমে প্রতিবছর ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করে সরকার।
১ মার্চ কেন জাতীয় বীমা দিবস!
বীমা খাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ১ মার্চ ‘জাতীয় বীমা দিবস’ পালন করে আসছে সরকার। কারণ ১৯৬০ সালের এই দিনটিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলফা ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেন। আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালে, পাকিস্তানের করাচিতে। ঢাকায় এর শাখা স্থাপন করে ১৯৫৯ সালের অক্টোবরে।
বঙ্গবন্ধুর বীমা পেশা বেছে নেয়ার বিষয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি যাদুঘরের কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু আলফা ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেন ১৯৬০ সালে ১ মার্চ। আলফা ইন্স্যুরেন্সে যোগদানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতাদের কোম্পানিটির বিভিন্ন শাখায় ম্যানেজার পদে চাকরি দেন। তাদের মাধ্যমেই চালাতেন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড।
নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, বীমা পেশার আড়ালে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে বীমার গুরুত্ব অনেক।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু বীমা খাতের সাথে যেভাবে জড়িত, অর্থনীতির আর কোন খাতের সাথে তার এতো বেশি সম্পৃক্ততা নেই। বঙ্গবন্ধু বীমা পেশার মাধ্যমে তার সংগ্রামী কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বীমা খাতের বিশেষ অবদান রয়েছে।
প্রথম জাতীয় বীমা দিবস উদযাপন
বীমা শিল্পের উন্নয়ন ও বীমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২০ সালের ১ মার্চ প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী জাতীয় বীমা দিবস পালিত হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বীমা দিবসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতি বছর জাতীয় বীমা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনে দেশের সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করে সরকার। শুরুতে দিবসটি 'খ' শ্রেণীতে পালনের জন্য অনুমোদন দেয় হয়।
২০২১ সালের ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘জাতীয় বীমা দিবস’কে ‘ক’ শ্রেণীর দিবস হিসেবে ঘোষণা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দাবি জানান বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন।
পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীতকরণের আবেদন জানায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।
জাতীয় বীমা দিবস এখন ‘ক’শ্রেণীতে
২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সভায় জাতীয় বীমা দিবসকে ‘খ’ শ্রেণী থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।
গত ১৩ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে বিষয়টি যথাযথ পরিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা। একইসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের বীমা দিবস সংক্রান্ত পরিপত্রটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।
দিবসটি উদযাপনে এ বছর যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে
‘আমার জীবন আমার সম্পদ, বীমা করলে থাকবে নিরাপদ’ –এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে এ বছর দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজন করা হয়েছে দিবসটির মূল অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দেশব্যাপী দিবসটির কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখবেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।
জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষ্যে সেবাপক্ষ পালন: আগামী ১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ, ২০২৩ পর্যন্ত সেবাপক্ষ হিসেবে পালনের জন্য দেশের সরকারি বেসরকারি লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোকে ৪টি নির্দেশনা দিয়েছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
কোম্পানিগুলোতে পূর্বের অপরিশোধিত বীমা দাবি থাকলে তা সেবা পক্ষের মধ্যে অতিদ্রুত পরিশোধ করা; লাইফ বীমাকারীর সার্ভাইভাল বেনিফিট সেবা পক্ষ চলাকালে দ্রুততার সাথে পরিশোধের ব্যবস্থা করা; নন-লাইফ বীমাকারীর ক্ষেত্রে সেবা পক্ষ চলাকালে উত্থাপিত বীমা দাবি দ্রুততম সময়ে পরিশোধ করা এবং সেবা পক্ষে প্রদত্ত বিশেষ সেবাসমূহ একটি রেজিস্ট্রারে সংরক্ষণ ও ৩১ মার্চের মধ্যে রেজিস্ট্রারের ছায়াকপি কর্তৃপক্ষে পাঠাতে বলা হয়েছে।
বীমা অফিসগুলো সজ্জিতকরণ: জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষ্যে দেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণার জন্য বীমা কোম্পানি বা করপোরেশনের শাখা কার্যালয়গুলোকে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত ব্যানার, ফেস্টুন বা নিজস্ব উদ্ভাবনী ধারণা দিয়ে যথাযথভাবে সজ্জিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।