ফারইস্ট ইসলামী লাইফের প্রধান কার্যালয়ে হামলায় পাল্টাপাল্টি মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তোপখানা রোডের প্রধান কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। গত ৮ সেপ্টেম্বরের এ হামলার ঘটনায় পৃথকভাবে দুইটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন গত ১৮ সেপ্টেম্বর। একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এর ৭ দিন পর রাজধানীর শাহবাগ থানায় পাল্টা মামলা করেন মো. শাহাদাৎ হোসেন আকন্দ। তিনি ফারইস্ট লাইফের সাবেক কর্মকর্তা।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টার দিকে আসামিরা ২৫ থেকে ৩০ জন অজ্ঞাতনামা সহযোগী নিয়ে ফারইস্ট টাওয়ারের ১৮ তলায় অবস্থিত কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায়। তারা প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ লাখ টাকার অবৈধ সুবিধা দাবি করে, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার হুমকিও দেয়। ঘটনায় কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ নথি ও অফিস সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কয়েকজন কর্মকর্তা আহত হন।
এই মামলায় ৪৫ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন- মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মো. নুরুল্লাহ সিদ্দিকী, মো. আদম আলী, মো. আমিনুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মো. মিজানুর রহমান, মো. জাফর উল্ল্যাহ, আব্দুর রহিম, শাহাদাৎ হোসেন আকন্দ, মোহাম্মদ শাদেকুর রহমান, মো. জসিম উদ্দিন, মো. রবিউল ইসলাম, মো. মনিরুজ্জামান, মো. খালেকুজ্জামান, মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন মজুমদার, মোহাম্মদ মনজুর হোসেন, মো. হুমায়ুন কবির, মো. রাজিব মোল্লা, মো. জসিম উদ্দিন, মো. মোখতারুজ্জামান, মো. আতাউর রহমান, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. তাবাশুমুন নবী, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মো. মহসিন সরকার, এসএম মাহমুদ আলম, মো. এনামুল হক, মো. আমির হোসেন চৌধুরী, মো. হুমায়ুন কবির, মো. মাহবুর রশিদ, মো. মঈনউদ্দিন, মো. মোরশেদ আলম, মো. জলিল আহম্মেদ, মো. কামরুল হোসেন মজুমদার, ইকবাল হোসেন, মোহাম্মদ ফজলুল করিম, মো. রাসেল হোসাইন, মোহাম্মদ মাসুদ, মো. ইয়াকুব, মো. আব্দুল্লাহ আল-হারুন দেওয়ান, মো. আমির হোসেন চৌধুরী, মো. হাবিব উল্লাহ ও মো. আলাউদ্দিন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় আসামীদের বেশিরভাগ ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৪৩, ৪৪৭, ৩২৩, ৩২৪, ৩৮৪, ৩৮৫, ৩৮৬, ৫০৬, ৩০৭, ১৪৯, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব ধারা মূলত দাঙ্গা, জবরদখল, আঘাত, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হত্যাচেষ্টার মতো গুরুতর অপরাধের আওতায় পড়ে।
অপরদিকে, ৮ সেপ্টেম্বরের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাহবাগ থানায় মো. শাহাদাৎ হোসেন আকন্দের করা মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান, সিইও, পরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা তাকে এবং তার সহকর্মীকে লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে পেট এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেছেন। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল, ত্রিশ হাজার টাকা ও স্বর্ণের আংটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়া হয়। অভিযোগে আরও উল্লেখ্য করা হয়, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করা হয় এবং সেই সঙ্গে দশ লাখ টাকার মুক্তিপণও দাবি করা হয়। মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩৪২, ৩৪৭, ৩৪৮, ৩২৩, ৩২৫, ৩৭৯ ও ৫০৬ দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০ আইনের ধারায় অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়।
উল্লেখ্য এর আগে এ বছরের ১৮ জুলাই, ফারইষ্টের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ নয় জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় ১১ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা আত্মসাতের মামলা করা হয়। মামলাটি করেন কোম্পানির আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ, কামরুল হাসান খান, মো. আলমগীর কবির, মো. কামাল হোসেন হাওলাদার, মো. শাহিনুল ইসলাম, মো. আব্দুল হান্নান, মো. নুরুন্নবী ও ইঞ্জিনিয়ার আমির মোহাম্মদ ইব্রাহীম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আত্মসাতকৃত টাকা আসামিরা তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের কাছে স্থানান্তর করেছেন। এ মামলার নথি (সি.আর মামলা নং–৩২৮/২০২৫, শাহবাগ থানা) অনুযায়ী, আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঐ মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনটি প্রকল্পের নামে ভুয়া বিল ও ভাউচার তৈরি করে বিপুল অঙ্কের অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। মূল অভিযোজিত লেনদেনগুলো ছিল: উন্নয়ন সভার নামে ভুয়া বিল ১ কোটি ১৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা (০৫/১০/২০২০), ভূমি উন্নয়নের (মাটি ভরাট) নামে ভুয়া বিল ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা (১০/১২/২০২০) এবং এইচভিএসি (এসি) সরবরাহ ও রিপেয়ারের নামে ভুয়া বিল ২ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা (০২/০৩/২০২১)।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ওই প্রকল্পগুলোর নামে একাধিক ভুয়া চেক ইস্যু করে অর্থ বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। কোম্পানির ইন্টারনাল অডিট রিপোর্ট ২০২৩-এ এসব অনিয়ম ধরা পড়ে।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পক্ষ থেকে ৮ তারিখে হামলার বিষয়ে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি'কে জানান, ১৮ জুলাই দায়ের করা মামলার আসামিরা কোম্পানিতে মব সৃষ্টির জন্য এ হামলার ঘটনা ঘটায়। ফারইস্ট ইসলামী লাইফের অর্থ আত্মসাতে জড়িতরাই এ হামলার সাথে জড়িত।
মামলার বাদী শাহাদাৎ হোসেন আকন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি। মামলা করতে দেরি হওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে মামলাটি করতে দেরি হয়েছে।