বীমাকারী রেজল্যুশন অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত, বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা

আবদুর রহমান আবির: সরকারের সংস্কারের অংশ হিসেবে বীমা খাত সংস্কারেরও প্রস্তাব করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এই সংস্কারের জন্য তারা বীমা আইন-২০১০ সংশোধনসহ বীমাকারী রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫ নামে একটি অধ্যাদেশ জারির উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের মডেল অনুসরণ করে বীমাকারী রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নতুন এই অধ্যাদেশটি প্রণয়নের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে- পলিসি হোল্ডারদের স্বার্থ সুরক্ষা করা; বীমা খাতের ওপর জনগণের আস্থা তৈরি; পাওনাদারদের ক্ষতি ন্যূনতম বজায় রাখা এবং দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ সম্পদ পুনরুদ্ধার করা।
তবে প্রয়োজনীয় সম্ভাব্যতা যাচাই, ঝুঁকি বিশ্লেষণ, কাঠামোগত মূল্যায়ন, বাজার বিশ্লেষণ যথাযথভাবে করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে তেমনি অংশীজনদের নামমাত্র মতামতের ওপর ভিত্তি করে খসড়া চূড়ান্ত করায় অধ্যাদেশটি বীমা খাত সংস্কারে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অধ্যাদেশটিতে মোট ধারা সংযোজন করা হয়েছে- ৯৭টি। এর মধ্যে- বীমা কোম্পানির পুনর্গঠনে রেজল্যুশন তহবিল গঠন; ব্রীজ বীমাকারি গঠন; প্রশাসক নিয়োগ; বীমা কোম্পানির একীভূতকরণ; সাময়িক সরকারি মালিকানা; বীমাকারি পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল হতে আর্থিক সহায়তা এবং বীমা কোম্পানিকে তৃতীয় পক্ষের নিকট হস্তান্তর সংক্রান্ত ধারাগুলো অন্যতম।
৮৪টি বীমা কোম্পানির মধ্যে মতামত দিয়েছে ১৫টি
বীমাকারী রেজল্যুশন অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করতে অংশীজনদের কাছে মতামত চাওয়া হয় চলতি বছরের ২৬ জুন। এই মতামত প্রদানের জন্য সময় দেয়া হয় ১৫ দিন। এরপর ৭ অক্টোবর অধ্যাদেশের পরিমার্জিত খসড়া তুলে ধরে আবারো অংশীজনদের মতামত আহবান করে আইডিআরএ।
এছাড়া বীমা খাতের অন্যতম স্টেকহোল্ডার বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ) ও বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ)’র নিকট মতামত চাওয়া হয়।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন আবার বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে মতামত চেয়ে পত্র দেয়। এ প্রেক্ষিতে দেশের সরকারি বেসরকারি ৮২টি কোম্পানির মধ্যে মতামত দেয় মাত্র ১৫টি কোম্পানি। যার মধ্যে ১০টি কোম্পানি খসড়া অধ্যাদেশের সাথে একমত পোষণ করে। বাকি ৫টি মধ্যে ৩টি কোম্পানি বিআইএ’র মতামতকে তাদের মতামত বলে উল্লেখ করেন।
যা ছিল বীমা কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবে
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন বীমাকারী রেজল্যুশন অধ্যাদেশটির ওপর মতামত প্রদানের জন্য সংগঠনটির টেকনিক্যাল সাব কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৯ সেপ্টেম্বর। ওই সভায় বীমা খাত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিলে বিআইএ থেকে একজন প্রতিনিধি ও বিআইএফ থেকে একজন প্রতিনিধি মনোনীত করার প্রস্তাব করা হয়।
বীমাকারীর পুনর্গঠনের পথগুলো স্পষ্ট নয়, তাই পুনর্গঠনের পথগুলো স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করা হয়। এছাড়া অধ্যাদেশটির অন্য কোন ধারা কিংবা উপধারা সম্পর্কে কোন দ্বিমত পোষণ করা হয়নি বিআইএ’র টেকনিক্যাল সাব কমিটির ওই সভায়।
আইডিআরএ’র বৈঠকে যেসব মতামত দেন অংশীজনরা
গত ১৪ অক্টোবর বীমাকারী রেজল্যুশন অধ্যাদেশ- ২০২৫ এর খসড়া অনুমোদনের জন্য বিআইএ, বিআইএফ, ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, তাকাফুল সোসাইটি, সেন্ট্রাল শরীয়া কাউন্সিল, ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরাম, সার্ভেয়ার এসোসিয়েশন, বিআইপিডি, এসবিসি, জেবিসি’র প্রতিনিধিদের নিয়ে পরামর্শ সভা করে আইডিআরএ।
ওই সভায় অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা বীমাকারী রেজল্যুশন অধ্যাদেশের খসড়াটি বোধগম্য ও সুপ্রণয়নকৃত বলে মতামত প্রদান করে।
সেই সঙ্গে মার্জারের জন্য একটি আলাদা ধারা, বীমা খাত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো বা কমানোসহ ধারা ৬-এর বিষয়ে গাইডলাইন তৈরি, ধারা ১০-বিষয়ে নির্দিষ্টকরণ, ধারা ১০-এ রেজল্যুশন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ধারা ৬১ (চ) এর বিষয়ে সুস্পষ্টকরণের মতামত দেয়া হয়। এছাড়া বীমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হওয়ায় ৩০ (৭) এবং ৬৬ ধারা বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়।
যে কারণে অধ্যাদেশটি প্রণয়নের উদ্যোগ
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. এম আসলাম আলম। দায়িত্ব গ্রহণের পরই গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দেশের ১৫টি লাইফ বীমা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা উচ্চ ঝুঁকিতে এবং ১৭টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী ১০টি লাইফ বীমা কোম্পানিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছিলেন। কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা হারানোর পেছনে কারণ হিসেবে তিনি যেসব কারণ উল্লেখ করেন তা হলো- অবৈধ বিনিয়োগ, অতিরিক্ত ব্যয়, অর্থ আত্মসাৎ এবং অব্যবস্থাপনা।
এ ছাড়াও গেল কয়েক বছর ধরেই আর্থিক সংকটের কারণে বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না বেশ কিছু লাইফ বীমা কোম্পানি।
আইডিআরএ’র সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, এ খাতে ৩ হাজার ৬২৮ কোটি টাকার বীমা দাবি বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বীমা দাবি বকেয়া ফারইস্ট ইসলামী লাইফের, ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। পদ্মা ইসলামী লাইফের বকেয়া বীমা দাবির পরিমাণ ২৪৭ কোটি টাকা এবং প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ১৫৫ কোটি টাকার বীমা দাবি বকেয়া রয়েছে।
এরমধ্যে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তহবিল থেকে সাবেক পরিচালকরা আত্মসাৎ করেছেন ২ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। পদ্মা ইসলামী লাইফ ও সানলাইফের মালিকানা পরিবর্তন হলেও আর্থিকভাবে সক্ষম হয়ে উঠতে পারেনি। কোম্পানি দু’টির বকেয়া বীমা দাবির পরিমাণ ২৮৫ কোটি টাকা। গোল্ডেন লাইফের বকেয়া দাবির পরিমাণ ৩৯ কোটি টাকা।
লাইফ বীমা খাতের এসব কোম্পানি দাবি পরিশোধে সক্ষমতা হারিয়েছে মূলত অতিরিক্ত ব্যয়, মন্দ বিনিয়োগ, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে। এ থেকে উত্তরণের অংশ হিসেবে বীমা খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার।
রেজল্যুশন তহবিল কতটা বাস্তবসম্মত
বীমা দাবি পরিশোধে কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে চূড়ান্ত খসড়া অধ্যাদেশটির ১৭ ধারায় বীমাকারীর পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এই তহবিলে ৫টি উৎস থেকে অর্থায়ন করার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো- সরকারি ঋণ ও অনুদান; আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ/অনুদান (আইএমএফ, আইডিএ, আইবিআরডি, এডিবি, আইডিবি ইত্যাদি); তহবিলের বিনিয়োগ থেকে আয়; বীমাকারীদের নির্ধারিত চাঁদা এবং অন্যান্য উৎস।
তবে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ প্রদান, আর্থিক সহায়তা নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে কোন কোম্পানি আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে সেই বীমা কোম্পানির গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধে আর্থিক সহায়তা কিংবা ঋণ প্রদান করে না উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান।
তবে বীমা খাতের অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সরকারের মাধ্যমে ঋণ প্রদান কিংবা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। এমনই একটি প্রকল্প বিআইএসডিপি।
বাংলাদেশ বীমা খাতের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৮ সালে ৬৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চালু করে সরকার। এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হয় ৫১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার ১১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থায়ন করে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, সাধারণ বীমা করপোরেশন এবং জীবন বীমা করপোরেশনের পেশাদারিত্ব ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
এই অর্থায়নের মাধ্যমে মূল কার্যক্রম- বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অটোমেশন, তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং বীমা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি। অর্থাৎ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অর্থ আত্মসাতের দায়ে কোন কোম্পানি আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে সেই কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কোন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অর্থায়ন করে- এমন কোন উদাহরণ নেই।
ফলে দুর্বল বীমা কোম্পানিগুলোর পুনর্গঠনে রেজল্যুশন তহবিল গঠনে যেসব উৎস থেকে অর্থায়ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে তা কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়াও বীমাকারীর তহবিল আত্মসাতকারীদের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে সরকারি উৎস থেকে অর্থায়ন করা হলে তা আত্মসাতকারীদের উৎসাহিত করা হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
আবার বীমাকারী রেজল্যুশন অধ্যাদেশটিতে যে প্রস্তাবনা আনা হয়েছে সেটি হলো- বীমা কোম্পানিগুলোকে একীভূতকরণ।
যেসব প্রশ্ন উঠেছে একীভূতকরণ ও পুনর্গঠন নিয়ে
রেজলুশন অধ্যাদেশের মার্জারের বিষয়ে পৃথক নীতিমালা করার প্রস্তাব করে মতামত দিয়েছে বিআইএ। এক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠেছে, একটি কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের কারণে আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ার দায় মার্জারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া আরেকটি কোম্পানির গ্রহণ করা কতটা বাস্তবসম্মত!
বাংলাদেশের ইতিহাসে- ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারের মাধ্যমে ৪৯টি বীমা কোম্পানিকে একীভূত করে গঠন করা হয় তিস্তা, কর্ণফুলী, রূপসা ও সুরমা এই ৪টি করপোরেশন। এরপর ১৯৭৩ সালে বীমা করপোরেশন আইন পাস করে গঠন কর হয় জীবন বীমা করপোরেশন এবং সাধারণ বীমা করপোরেশন।
তবে ১৯৭২ সালের এই একীভূতকরণ কোম্পানিগুলোর আর্থিক ভীত দুর্বল হওয়ার কারণে করা হয়নি।
সংজ্ঞা নেই গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুণ্নের
বীমাকারী রেজল্যুশন অধ্যাদেশ- ২০২৫ প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্যে হলো গ্রাহকস্বার্থ রক্ষা। অধ্যাদেশটিতে ৪২টি সংজ্ঞা দেয়া হলেও গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করার কোন সংজ্ঞা দেয়া হয়নি। এর আগে ২০১০ সালে প্রণীত বীমা আইনেও স্থান পায়নি গ্রাহক স্বার্থের সংজ্ঞা।
ফলে কার বিরুদ্ধে গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুণ্নের অভিযোগ আনা হবে তা নির্ভর করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিদের মর্জির ওপর।
যেসব সমাধান ছিল বীমা আইনে
ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষা, আত্মসাতকৃত অর্থ উদ্ধার, দাবি পরিশোধে আর্থিক সক্ষমতা হারানো কোম্পানির বিষয়ে করণীয়, প্রশাসক নিয়োগ এবং গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুণ্নকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার নেয়ার বিধান রয়েছে বীমা আইন-২০১০ এ।
বীমা আইন ২০১০ এর ১৩৬(গ) ধারায় বলা হয়েছে- এই আইনের বিধান লংঘন জনিত কোন কারণে লাইফ ইন্স্যুরেন্স তহবিলের অর্থ হ্রাস পায়; তা হলে আদালত অনুরূপ কোন বীমাকারী, পরিচালক, ব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধি, সচিব বা অবসায়ক বা এরূপ অন্য কর্মকর্তা, কর্মচারী, বীমা এজেন্ট বা প্রযোজ্য অন্য কোন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করতে পারবেন এবং আদালত যেরূপ সঠিক বিবেচনা করবেন অপব্যবহৃত, অধিকারভুক্ত বা অন্যায় কর্ম সম্পাদন বা বিশ্বাসভংগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বীমাকারীর অনুকুলে তার সম্পদে সেই পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে তাকে বাধ্য করতে পারবেন।
অর্থাৎ বীমা কোম্পানির তহবিল কোনভাবে অবৈধভাবে দখল বা আত্মসাৎ হলে তা বীমা আইনের এই ধারাতে উদ্ধার করা সম্ভব।
অপরদিকে বীমা কোম্পানির পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কোন ব্যক্তি গ্রাহকস্বার্থ ক্ষুণ্ন করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে বীমা আইনের ৫০(১) ধারায়। এই ধারায় বলা হয়েছে-
“কর্তৃপক্ষ যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, কোন বীমাকারীর কার্যকলাপ, জনস্বার্থে, বীমা পলিসি গ্রাহকের স্বার্থে বা বীমাকারীর স্বার্থে ক্ষতিকর তবে কর্তৃপক্ষ বীমাকারীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ, বিশেষ করিয়া, নিম্নবর্ণিত কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে,” যথাঃ-
(ক) বীমাকারীর বীমা ব্যবসা এই আইনের বিধান অনুযায়ী পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ বা ব্যবস্থাপনায় ঐরূপ যোগ্য লোকবল নিয়োগ করা;
(খ) কর্তৃপক্ষের নিকট যদি এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, চেয়ারম্যান, কোন পরিচালক, উপদেষ্টা, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, তাহার পদে অধিষ্ঠিত থাকায় কোন আইনের বিধান লংঘিত হইয়াছে এবং অনুরূপ লংঘন এমন প্রকৃতির যে, বীমাকারীর সহিত তাহাদের জড়িত থাকা বীমাকারীর বা বীমা পলিসি গ্রাহকের স্বার্থে ক্ষতিকর বা স্বার্থের পরিপন্থী বা ক্ষতিকর হইতে পারে অথবা অন্য কোনভাবে অবাঞ্ছিত হয়, তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান করিয়া তাহাদিগকে নিজ নিজ পদ হইতে অপসারণ করাঃ...”
বীমা কোম্পানির নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিলকরণের বিধান রাখা হয়েছে বীমা আইনের ১০(১) ধারায়। এখানে বলা হয়েছে- “কর্তৃপক্ষ নিম্নবর্ণিত এক বা একাধিক কারণে বীমাকারীর নিবন্ধন সম্পূর্ণরূপে বা বিশেষ কোন শ্রেণীর বা উপ-শ্রেণীর বীমা ব্যবসা স্থগিত বা বাতিল করিতে পারিবে, যথাঃ-
(ক) ধারা ২৩ বা ধারা ১১৯ এর জামানত সম্পর্কিত বিধান পালনে ব্যর্থ হন; (খ) নিবন্ধনের ১ (এক) বৎসরের মধ্যে ব্যবসা শুরু না করেন; (গ) উহার পাওনাদারদের সংগে কোন সমঝোতা বা বন্দোবস্ত করার প্রস্তাব করিয়া বা উক্ত সমঝোতা বা বন্দোবস্ত করিয়া থাকে, বা একীভূত হইয়া থাকে বা বীমা ব্যবসা অবসায়িত বা অবলুপ্ত হইয়া থাকে বা অন্য কোনভাবে ব্যবসাটি বন্ধ হইয়া যায় বা বীমাকারী দেউলিয়া ঘোষিত হন;
(ঘ) বীমা পলিসি গ্রাহকদের স্বার্থের বা ব্যবসার উন্নয়নের পরিপন্থী বা জাতীয় স্বার্থে ক্ষতিকর কোন বীমা ব্যবসা পরিচালনা করেন; (ঙ) তাহার দায় দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন; (চ) প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত সলভেন্সি মার্জিন সংরক্ষণে ব্যর্থ হন; (ছ) এই আইন বা তদধীন প্রণীত কোন বিধি বা প্রবিধানের কোন বিধান লংঘন করেন বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত কোন শর্ত বা প্রদত্ত কোন নির্দেশনা প্রতিপালনে ব্যর্থ হন;
(জ) তাহার ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় কোন অনৈতিক কর্মকান্ডে বা অপকর্মে বা অনিয়মের সহিত জড়িত থাকেন; (ঝ) সন্তোষজনকভাবে পুনঃবীমা ব্যবস্থাকার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; বা (ঞ) তাহার উপর কোন বীমা পলিসির, বাংলাদেশে উদ্ভূত, কোন দাবী কোন আদালতের চূড়ান্ত রায়ের বা এই আইনের অধীন কর্তৃপক্ষের আদেশের পর ৩ (তিন) মাস পর্যন্ত অপরিশোধিত থাকে৷”
এ ছাড়াও আর্থিক সক্ষমতা যাচাইয়ে বীমা কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে বীমা আইনের ৯৫(১) ধারায়।
এতে বলা হয়েছে- “যদি কোন সময়ে কর্তৃপক্ষের এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, কোন বীমাকারী তাহার বীমা ব্যবসা এইরূপে পরিচালনা করিতেছে যাহাতে বীমাপলিসি গ্রাহকদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হইতে পারে বা প্রয়োজনীয় সলভেন্সি মার্জিন রাখিতে সমর্থ হইতেছে না এইক্ষেত্রে বীমাকারীকে তাহার বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ প্রদান করিয়া কর্তৃপক্ষ উহার পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করিতে পারিবে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণাধীন বীমাকারীর কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য একজন প্রশাসক নিযুক্ত করিবে৷”
ফলে বীমাকারী রেজল্যুশন অধ্যাদেশ তড়িঘড়ি করে অনুমোদন করা হলে তার প্রয়োগ বাস্তবসম্মত হবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দেশের বীমা খাতে।
একইসঙ্গে ব্রীজ বীমাকারী গঠন, প্রশাসক নিয়োগ, বীমা কোম্পানির একীভূতকরণ, সাময়িক সরকারি মালিকানা ও বীমা কোম্পানিকে তৃতীয় পক্ষের নিকট হস্তান্তর সংক্রান্ত ধারাগুলোর অপব্যবহার হতে পারে বলেও মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।




