জীবন বীমা যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন ঋণ সুরক্ষা পরিকল্পনা
রাজ কিরণ দাস: ঋণ এখন আর শুধু একটি আর্থিক দায় নয়, বরং আধুনিক জীবনের প্রয়োজনীয়তা। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা কিংবা বাড়িঘর নির্মাণ- প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঋণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশে ঋণ নেওয়ার সংস্কৃতি থাকলেও ঋণ সুরক্ষার সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি। ফলে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা বা আয় হারানোর মতো পরিস্থিতিতে পরিবারগুলো হঠাৎ করেই বিপদে পড়ে যায়।
এখানেই গুরুত্ব পায় ঋণ সুরক্ষা বীমা। এটি শুধু ঋণগ্রহীতার দায় কমায় না, বরং পরিবারকে দেয় তাৎক্ষণিক আর্থিক সুরক্ষা। মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের কাঁধে যেন আর্থিক দায়ভার না এসে পড়ে, সেটি নিশ্চিত করাই এই বীমার মূল লক্ষ্য। অসুস্থতা বা অক্ষমতার মতো সংকটেও কিস্তি পরিশোধের ঝুঁকি বীমা কোম্পানি বহন করে, যা অনিশ্চয়তায় ভরা সময়ে একটি স্বস্তির নিশ্বাস এনে দেয়।
তবে প্রশ্ন উঠতে পারে- এটি কি সবার নাগালের মধ্যে? অনেকে মনে করেন, প্রিমিয়াম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষকে এই সুরক্ষা থেকে দূরে রাখে। পাশাপাশি সব শর্ত যথেষ্ট স্বচ্ছ নয়, ফলে গ্রাহকরা সচেতন না হয়ে প্রায়ই বিভ্রান্ত হন। এই সমালোচনা অমূলক নয়।
আর এখানেই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তারা চাইলে সহজবোধ্য ভাষায় ঋণ সুরক্ষা বীমার শর্ত তুলে ধরতে পারে, প্রিমিয়ামকে সাশ্রয়ী করতে পারে এবং গ্রাহকদের কাছে বিষয়টি আরও গ্রহণযোগ্য করতে পারে। একইসঙ্গে সরকারেরও উচিত আর্থিক শিক্ষার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা।
আজকের বাংলাদেশে যেখানে চাকরির নিশ্চয়তা কমছে, আয় অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে এবং চিকিৎসা ব্যয় আকাশচুম্বী হচ্ছে, সেখানে ঋণ সুরক্ষা বীমা হতে পারে এক বাস্তবসম্মত সমাধান। এটি কেবল ঋণগ্রহীতাকে নয়, বরং পুরো পরিবারকে নিরাপত্তা দেয়। তাই এখন সময় এসেছে এটিকে বিলাসিতা নয়, বরং আর্থিক পরিকল্পনার অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করার।